Bangla News Dunia , পল্লব চক্রবর্তী : সামনেই কালীপুজো। অশুভ শক্তির ওপর শুভ শক্তির জয় উদযাপনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে বাঙালিরা। শাস্ত্র মানতে, শক্তির প্রতীক মায়ের এই রূপ। তন্ত্র মতে দেবী কালী দশমহাবিদ্যা নামে পরিচিত । দশমহাবিদ্যার প্রথম রূপেই পুজিত হয় কালী নামে।
কালী’ শব্দটি ‘কাল’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ। কালী বা কালিকা হলেন একজন দেবী। তিনি দেবী দূর্গার একটি রূপ। তার অন্য নাম শ্যামা বা আদ্যাশক্তি। প্রধানত শাক্ত সম্প্রদায় আবশ্যিক কালীপূজা করে থাকে। শাক্তমতে কালী বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদি কারণ। বাঙালি হিন্দু সমাজে কালীর মাতৃরূপে পূজিত হন।
দক্ষিণাকালী- কালীর সবথেকে প্রসিদ্ধ ও জাগ্রত রূপ মনে করা হয় দক্ষিণাকালীর এই রূপকে। এই কালীর গলায় ঝোলে মুন্ডমালার হার, তিনিই মুন্ডুমালা বিভূষিতা। ত্রিনয়নী দক্ষিণাকালীর বাম দিকের দুই হাতে তিনি ধরে থাকেন সদ্যকাটা নরমস্তক। দুই ডানহাতের একটিতে তিনি ভক্তদের বর দেন এবং অপরটিতে অভয়।
রক্ষাকালী- গুণ ও কর্ম অনুসারে দেবী কালীর আরেক রূপ। শিবের ন্যায় ইনিও ত্রিশূলধানিনী ও সর্পযুক্তা। একদিকে অশুভ শকত্রি বিনাশকারিনী তেমনি ভক্তদের বিপদতারিণীও। প্রাচীন কালে লোকালয়ের রক্ষার জন্য এই দেবীর পুজা করা হত। দেবীর পুজামন্ত্র ভিন্ন এবং বাহন স্থানভেদে সিংহ।
সিদ্ধকালী- সিদ্ধকালী কালীর একটি অখ্যাত রূপ। গৃহস্থের বাড়িতে সিদ্ধকালীর পূজা হয় না; তিনি মূলত সিদ্ধ সাধকদের ধ্যান আরাধ্যা। অন্যত্র তিনি ব্রহ্মরূপা ভুবনেশ্বরী।
ভদ্রকালী- ভদ্রকালী নামের ভদ্র শব্দের অর্থ কল্যাণ এবং কাল শব্দের অর্থ শেষ সময়। যিনি মরণকালে জীবের মঙ্গলবিধান করেন, তিনিই ভদ্রকালী। দুর্গা ও সরস্বতীর ওপর নাম হিসেবেই এই নামটি ব্যবহৃত হয়। কালিকাপুরাণ মতে, ভদ্রকালীর গাত্রবর্ণ অতসীপুষ্পের ন্যায়, মাথায় জটাজুট, ললাটে অর্ধচন্দ্র ও গলদেশে কণ্ঠহার। তার হাতে জ্বলন্ত অগ্নিশিখা ও পাশযুগ্ম। গ্রামবাংলায় অনেক স্থলে ভদ্রকালীর বিগ্রহ নিষ্ঠাসহকারে পূজিত হয়।
চামুণ্ডাকালী- চামুণ্ডাকালী ও সাধকদের কাছে কালীর একটি প্রসিদ্ধ রূপ। তার গাত্রবর্ণ নীল পদ্মের ন্যায়, হস্তে অস্ত্র, দণ্ড ও চন্দ্রহাস; পরিধানে ব্যাঘ্রচর্ম; অস্তিচর্মসার শরীর ও বিকট দাঁত। দুর্গাপূজায় মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে আয়োজিত সন্ধিপূজার সময় দেবী চামুণ্ডার পূজা হয়। অশুভ শত্রুবিনাশের জন্য শক্তি প্রার্থনা করে তার পূজা করেন।
শ্মশানকালী- গৃহস্থ বাড়িতে এই দেবীর পুজো হয় না। প্রাচীনকালে ডাকাতরা এই দেবীর আরাধনা করতো। কবি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “দেবী চৌধুরানী” উপন্যাসে এই দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। সেকালের ডাকাতেরা ডাকাতি করতে যাবার আগে শ্মশানঘাটে নরবলি দিয়ে ডাকাতকালী ও শ্মশানকালীর পূজা করতেন। বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতকালীর পূজা হয়। পশ্চিমবঙ্গের অনেক প্রাচীন শ্মশানঘাটে এখন শ্মশানকালীর পূজা হয়। রামকৃষ্ণ পরমহংস বলেছিলেন, শ্মশানকালীর ছবিও গৃহস্থের বাড়িতে রাখা উচিত নয়।
আদ্যাকালী- মহানির্বাণ তন্ত্রে এই দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। আদ্যাকালীর রং মেঘের মতো ঘন নীল, কপালে চন্দ্ররেখা,ত্রিনেত্রা,রক্তবস্ত্র পরিধানে থাকে। প্রস্ফুটিত রক্তপদ্মে দেবী আসীনা হয়ে, মাধ্বীক পুষ্পের মিষ্টি সুধা পান করে সম্মুখে নৃত্যরত মহাকালের নৃত্য দর্শন করে আনন্দিতা তিনি।