Bangla News Dunia , পল্লব : রাত গভীর , চুপিসারে একটা গাড়ি বেরিয়ে গেল এলগিন রোডের বাড়ি থেকে। মূল সড়কে পড়ে ছুটে চলল ঝড়ের বেগে। রাতের কলকাতা তখন ঘুমোচ্ছে বটে, পিছনে তো শত্রুর সজাগ চোখ।গাড়ি এসে পড়ে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডে। স্টিয়ারিং-এ বসে শিশির বোস। ২১ বছরের শিশির মেডিক্যালের ছাত্র। সুদীর্ঘ ৪৪ বছরের জীবন পড়ে রইল পিছনে। এখন সামনে নতুন পথ, নতুন যাত্রা।
অ্যাক্সিলারেটরের ওপর পা চেপে বসে শিশিরের। সক্কাল সক্কাল পৌঁছোতে হবে গন্তব্যে। পাশে বসা মানুষটি নির্বিকার। ভবিষ্যতের সংগ্রামের ছক কষছেন ! গোবিন্দপুরকে পাশে রেখে গাড়ি চলে ধানবাদের পথে। বাঁয়ে পড়ে বারারি। এখানেই তো অশোকের বাংলো। শরৎ বোসের বড়ো ছেলে ড. অশোক বোস, ধানবাদের বড়ো অফিসার। মৌলবীসাহেব নেমে পড়েন গাড়ি থেকে, হাতে শুধু অ্যাটাচি। বিছানা আর স্যুটকেস গাড়িতেই থাকে। মৌলবীসাহেব হেঁটেই এগিয়ে চলেন। সব পরিকল্পনা অশোককে আগে থেকেই বলা ছিল।
আরো পড়ুন :- বাংলায় ৭৩৪ কোটির বিনিয়োগ মোদী সরকারের
১৮ জানুয়ারি, ১৯৪১। বেশ ঠান্ডা। অশোকের দরজায় এসে পৌঁছোল শিশিরের গাড়ি। মিনিট পনেরো পরে এসে পৌঁছোন মৌলবীসাহেব, ইনস্যুরেন্সের এজেন্ট। করমর্দন করে অশোক মৌলবীসাহেবকে ডেকে নিয়ে যান ঘরে। বাড়ির কর্ত্রী, পরিচারকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। থাকার ব্যবস্থা হয় বাইরের ঘরে।
অশোকের সঙ্গে ইংরেজিতেই কথা হয় মৌলবীসাহেবের। দু’-চারটি কথা বলে গৃহস্বামী চলে যান কর্মস্থলে। টিফিনের ছুটিতে ঘরে আসেন অশোক। ফের দু’ জনায় অল্পবিস্তর কথা হয়। অজানা অতিথি, তায় ভিন্ন ধর্মীয়, এক সঙ্গে খাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আরও কিছু বোঝাতে চান বোসসাহেবকে। বোসসাহেব ব্যস্ত মানুষ। বলেন, সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে আবার কথা হবে।
“সন্ধ্যার ট্রেন ধরতেই হবে”, বলেন মৌলবীসাহেব। “ঠিক আছে”, বলে বেরিয়ে যান অশোক। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। অফিস থেকে ফিরে এসেছেন বোসসাহেব। খাবার দেওয়া হয় মৌলবীসাহেবকে। খুব সামান্য খেয়ে উঠে পড়েন মৌলবীসাহেব। বোসসাহেবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে পড়েন মৌলবীসাহেব। গৃহস্বামী পরিচারককে ট্যাক্সি ডেকে দিতে বলেন।
আরো পড়ুন :- দেশে খুচরো মুদ্রাস্ফীতি সর্বনিম্ন ! দ্রুত কমবে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ?
একটু পরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন শিশির, সঙ্গে অশোক আর তাঁর স্ত্রী। পরিচারকদের বলে গেলেন, তাঁরা সান্ধ্যভ্রমণে বেরোচ্ছেন। এগিয়ে যায় গাড়ি। গাড়ি থামে। দ্রুত উঠে পড়েন মৌলবীসাহেব। বিস্ময়ে বোবা হয়ে যান অশোকের স্ত্রী।
গাড়ি ছুটে চলে গোমো স্টেশনের দিকে। দিল্লি-কালকা মেল ধরতে হবে মৌলবীসাহেবকে। স্টেশনের একটু আগে গাড়ি থামে। নেমে পড়েন মৌলবীসাহেব। বলেন, “আমি চলি, তোমরা ফিরে যাও।”শিশিরের হাতে একটা গান্ধী-টুপি দিয়ে বলেন, “ফেরবার পথে টুপিটা পরে নিও।”
হন্তদন্ত হয়ে টিকিট কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেলেন মৌলবীসাহেব তথা রাঙা কাকাবাবু তথা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তারা নিঃস্পন্দ, নিশ্চল হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকেন। চোখ থেকে অবিরত ধারায় জল গড়িয়ে পড়ে। ট্রেন আসে। ট্রেন ছেড়ে দেয়। তিনি আর ফেরেননি। এটাই অন্তর্ধান।
আরও খবর পেতে ফলো করুন আমাদের চ্যানেল
আরো পড়ুন :- পাকিস্তানে হামলা চালাল আফগান তালিবান, নিহত ৬, আহত ১৭
আরো পড়ুন :- ডিসেম্বর ছেড়ে এ বার জানুয়ারির-হুমকি শুভেন্দুর !