bBangla News Dunia , পল্লব চক্রবর্তী :- ভারত তথা বাংলার চলচ্চিত্রের প্রবাদপ্ৰতিম পুরুষ সত্যজিৎ রায়। শুধু সিনেমা নয় বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তিনি। তিনি হলেন প্রত্যেক ভারতীয় ও বাঙালীর গর্ব। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ২রা মে ১৯২১ সালে , একটি কৃতি পরিবারে।
তার বাবা তাঁর বাবা ছিলেন বিখ্যাত কথাশিল্পী সুকুমার রায় ও তার ঠাকুরদা ছিলেন বাংলার একজন বিখ্যাত লেখক ও চিত্রকর। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, যাঁকে ভারতীয় মুদ্রণশিল্পের পথিকৃতও বলা হয়ে থাকে।
তাঁর বয়স মাত্র যখন তিন বছর, তখন তাঁর বাবা সুকুমার রায় মারা যান। তার মা সুপ্রভা দেবী তখন অনেক কষ্ট করে তাঁকে বড় করেন।
আরো পড়ুন :- বিশ্বসেরা সিনেমাগুলি বিনামূল্যে ইউটিউবে
তাঁর শিক্ষা জীবন কিন্তু শুরু হয় ১৯২৯ সাল থেকে, যখন তাঁর বয়স ছিলো প্রায় ৮ বছর। তিনি প্রথমে ভর্তি হন বালিগঞ্জ গভর্মেন্ট হাইস্কুলে এবং তারপর স্কুলের পড়া শেষ করে পরে ভর্তি হন কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। যেখানে তিনি অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করতে থাকেন।
তারপর তার মায়ের ইচ্ছাতে ১৯৪০ সালে মায়ের ইচ্ছার জন্যই তিনি সেখানে ভর্তি হন ন্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আরো পড়ুন :- কলকাতা -হাওড়া -উত্তর ২৪ পরগনা তে রুগী ৮৮%
বিশ্বভারতী সম্পর্কে প্রথম তার বিরূপ ধারণা থাকলেও পরে তিনি স্বীকার করেন যে, সেখানকার বিখ্যাত চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসু এবং বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে তিনি অনেক কিছু শিখেছিলেন যারফলে তাঁর মনে প্রাচ্যের শিল্পের প্রতি এক গভীর মর্যাদা জন্ম নেয়।
আরো পড়ুন :- Contact Tracing অ্যাপ্লিকেশনে অ্যাপল-গুগলের যুগলবন্দী
১৯৪৩ সালে তিনি শান্তিনিকেতন ছেড়ে আবার কলকাতায় চলে আসেন এবং সেখানে ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন সংস্থা ডি জে কিমারে মাত্র ৮০ টাকা বেতনের বিনিময়ে জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন।
১৯৪৭ সাল আসতে আস্তে বিজ্ঞাপন জগতের বড় নাম হয়ে ওঠেন সত্যজিৎ রায় এবং সেই বছরই প্রতিষ্ঠা করে ফেলেন “ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি”।
আরো পড়ুন :- করোনা প্রতিরোধে হ্যান্ড স্যানিটাইজার
এরপর ১৯৪৯ সালে ফরাসি চলচ্চিত্রকার জঁ রেনোর তাঁর দ্য রিভার ছবি নির্মাণের জন্য কলকাতায় আসেন। তখন সত্যজিৎকেই তিনি তাঁর সিনেমার সহকারী হিসাবে খুঁজে নিয়েছিলেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে সত্যজিতের জীবনে জঁ রেনোর ভুমিকাই ছিলো অন্যতম। তাঁর কাছ থেকেই তিনি শিখেছিলেন সিনেমা নির্মাণের সঠিক কৌশল সম্পর্কে।
আরো পড়ুন :- মাল্টি ডিভাইসে ব্যবহার করা যাবে হোয়াটস্যাপ
সেই বছরই অর্থাৎ ১৯৪৯ সালে সত্যজিৎ রায় তাঁর বহু দিনের বান্ধবী বিজয়া দাসকে বিয়ে করেন। এরপর সত্যজিৎ রায় অবশেষে একদিন সিনেমা তৈরী করার সিদ্ধান্ত নেন |
এরপর তিনি একটি ইতালি ছবি লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে অর্থাৎ ইংরেজিতে Bicycle Thieves নামক একটি সিনেমা, তাঁকে “পথের পাঁচালী” তৈরী করতে ভীষন ভাবে অনুপ্রাণিত করে।
অবশেষে ১৯৫৫ সালের ২৬শে অগাস্ট কোলকাতার সমস্ত সিনেমা থিয়েটারে মুক্তি পায় এই ছবিটি। দেখতে দেখতে মুক্তি পাওয়ার পর পরই ছবিটি দর্শক-সমালোচক সবার প্রশংসা লাভ করে। ছবিটি বহু দিন ধরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং ভারতের বাইরে প্রদর্শিত হয়।
আরো পড়ুন :- মেসেজের মাধ্যমে টুইট পরিষেবা বন্ধ
সত্যজিতের পরবর্তী ছবি “অপরাজিত” ছবির সাফল্য তাঁকে আন্তর্জাতিক মহলে আরও পরিচিত করে তোলে। এই সিনেমাটি পরে ভেনিস শহরে আয়োজিত চলচ্চিত্র উৎসবে “গোল্ডেন লায়ন” পুরস্কারে সম্মানিত হয় যেটি ছিলো সেখানকার সিনেমার একটি সর্বোচ্চ পুরস্কার।
তাঁর অন্যান্য জনপ্রিয় সিনেমাগুলি হলো:
১৯৫৮: পরশপাথর , জলসাঘর । ১৯৫৯: অপুর সংসার । ১৯৬৪: চারুলতা । ১৯৬৯: গুপি গাইন বাঘা বাইন ।১৯৭৪: সোনার কেল্লা । ১৯৭৯: জয় বাবা ফেলুনাথ । ১৯৮০: হীরক রাজার দেশে । ১৯৯০: শাখা প্রশাখা
তিনি কিন্তু একজন ভালো সাহিত্যিকও ছিলেন। তাঁর সৃষ্ট সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্রগুলি হল- গোয়েন্দা ফেলুদা, জটায়ু ,তোপসে ,মহান বিজ্ঞানী শঙ্কু ও তারিণী খুঁড়ো। তিনি ছোটদের জন্য প্রচুর ছোটগল্প লিখেছিলেন। ছোটদের জন্য সন্দেশ পত্রিকাতে নিয়মিত লিখতেন । এছাড়াও ছিলেন গ্রাফিক শিল্পী , ইলাস্ট্রেটর ,সংগীত সুরকার। তার আঁকা বিভিন্ন চরিত্রের ছবি সকলের চোখে ভাসে।
গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার সমূহ :
পদ্মশ্রী পুরস্কার (১৯৫৮) , সংগীত নাটক একাডেমী পুরস্কার(১৯৫৯) , পদ্ম ভূষণ পুরস্কার(১৯৬৫) , দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার(১৯৮৪) , দ্য লিজিয়ন অফ অনার পুরস্কার(১৯৮৭) , অস্কার পুরস্কার(১৯৯১) , ভারতরত্ন পুরস্কার(১৯৯২)
আরো পড়ুন :- টিকাকরণ বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে শিশুরা
অবশেষে ২৩ এপ্রিল ১৯৯২ সালে, প্রায় ৭০ বছর বয়সে বাংলা তথা ভারতের এই মহান চলচ্চিত্রকরের অবশেষে মৃত্যু হয়। তিনি হলেন ভারতবর্ষের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক , তাঁর এই অবদান আমাদের কোনদিনই ভোলার নয়।
# সেরা সত্যজিৎ # শতবর্ষে সত্যজিৎ