অর্ণব চক্রবর্তী, ফরাক্কাঃ লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠতেই উধাও ফরাক্কার এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অস্থায়ী কর্মী প্রবীণ দত্ত। ব্যাংকের তরফ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে। মোট কত টাকা তছরুপ হয়েছে, তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছে পুলিশ। যদিও ব্যাংক ম্যানেজার অরিন্দম মিত্র জানান, কত টাকা তছরুপ হয়েছে, তা এখনই বলা মুশকিল। বিষয়টি ব্যাংকের অডিট অ্যান্ড ভিজিলেন্স টিমের ইন্টারনাল অডিটররা এসে দেখবেন। রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্তাদের কাছে।’
ব্যাংক ম্যানেজার বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বর মাসে আমার কাছে প্রথম অভিযোগ করেন বিশ্বজিৎ হাওলাদার নামে এক গ্রাহক। তাঁর টাকা জমা পড়েনি । গত মঙ্গলবার আরও কয়েকজন গ্রাহক অভিযোগ জানান যে, তাঁদের সঙ্গেও প্রতারণা করেছেন প্রবীণ।’ স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা কম থাকায় ব্যাংক তাঁকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়ে নিত। প্রবীণ সেই সুযোগটিই নিয়েছেন।
কীভাবে প্রতারণা করতেন তিনি? রোজকার লেনদেনে তাঁর সাহায্য নিতেন ব্যাংকের অন্য কর্মীরা। ডিপোজিট স্লিপ, উইথড্রয়াল স্লিপ লেখা, অন্য কারও আইডি থেকে লগ-ইন করে ব্যাংকের পাসবই প্রিন্ট করে আপডেট করার কাজ করানো হত তাঁকে দিয়ে। প্রায় ১৩ বছর একই ব্রাঞ্চে কাজ করার সুবাদে প্রায় সব গ্রাহকের নাড়িনক্ষত্র জানা ছিল প্রবীণের।
বিশ্বাস অর্জন করে বহু গ্রাহকের সুনজরে পড়তে তাঁর সময় লাগেনি। স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকেই তাঁকে নির্ভর করে টাকাপয়সা তাঁর কাছে রেখে যেতেন পরে সুযোগ মতো জমা করে দেওয়ার জন্য। প্রবীণ পরে গ্রাহকদের টাকা জমা দেওয়ার নথি দেখালেও আদতে তা ছিল ভুয়ো কাউন্টারপার্ট। সেই টাকা ব্যাংকে আদৌ জমা পড়েনি বলে অভিযোগ।
কিছুটা অনুমান করে প্রথম গত কয়েকদিন ধরে গ্রাহকরা ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের কাছে অভিযোগ জানান। অভিযোগ, কারও পাঁচ, কারও দুই, কারও নয় লাখ টাকা জমা করে দেবেন বলে নিয়েছিলেন ওই কর্মী। গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে সেই টাকা জমা পড়েনি। ব্যাংকের ফরাক্কা শাখার ম্যানেজার অরিন্দম মিত্র স্বীকার করেন, ‘যেহেতু ব্যাংকে কর্মীর খুব অভাব, তাই বাধ্য হয়ে তাঁকে কম্পিউটারে বসিয়ে পাসবুক প্রিন্ট সহ ছোটখাটো কাজ করানো হত অনেকদিন থেকে।’
প্রবীণ চতুর্থ শ্রেণির অস্থায়ী কর্মী এবং তাঁর স্ত্রী একই ব্যাংকের অন্য শাখার কর্মী। তিনি ২০১২ থেকে কর্মরত। ব্যাংকের এক গ্রাহক বিশ্বজিৎ হাওলাদার বলেন, ‘আমি অসুস্থ হওয়ায় বিশ্বাস করে কয়েক দফায় ১০ লক্ষ টাকা জমা দেওয়ার জন্য ওঁর হাতে দিই। পরে দেখি কোনও টাকাই ব্যাংকে জমা পড়েনি। প্রশ্ন করায় তিন মাসের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেন। খুব পরিচিত হওয়ার সুবাদে এতদিন কোথাও অভিযোগ করিনি।’
ফরাক্কার পলাশী গ্রামে বাড়ি থাকলেও প্রবীণ ফরাক্কা ব্যারেজের আবাসনে থাকতেন পরিবার নিয়ে। তাঁর খোঁজে পুলিশ এখন তল্লাশি চালাচ্ছে।