Birth Certificate SIR: সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ইলেকশন কমিশনের তরফে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের জন্য যে ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ (SIR) প্রক্রিয়া চলছে, তাতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে জন্ম সার্টিফিকেট (Birth Certificate)। এটি আপনার পরিচয়ের একটি মৌলিক এবং একক প্রমাণ (single proof of identity) হিসেবে কাজ করে। এই আবহে, অনেকের কাছেই থাকা পুরনো হাতে লেখা জন্ম সার্টিফিকেট নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আধিকারিকদের মতে, পুরনো হাতে লেখা সার্টিফিকেট এখনও সম্পূর্ণ বৈধ (still valid) এবং এটি বাতিল করা হয়নি। তাই এই রূপান্তর বাধ্যতামূলক নয়।
তবে, প্রশাসনিক কাজ, পাসপোর্ট, বা অন্যান্য সরকারি যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ডিজিটাল বার্থ সার্টিফিকেট অনেক বেশি সুবিধাজনক। এই প্রতিবেদনে আমরা এই ডিজিটাল সার্টিফিকেটের গুরুত্ব এবং কিভাবে আপনি আপনার পুরনো সার্টিফিকেটকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করবেন, তার প্রতিটি ধাপ নিয়ে আলোচনা করব।
কেন ডিজিটাল বার্থ সার্টিফিকেট বেশি সুবিধাজনক?
পুরনো হাতে লেখা সার্টিফিকেটগুলি যাচাই (verify) করা সময়সাপেক্ষ এবং জটিল। অনেক সময় তথ্যের অস্পষ্টতার কারণে বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি দপ্তরে তা গ্রহণ করতে সমস্যা দেখা দেয়।
এর বিপরীতে, নতুন ডিজিটাল বার্থ সার্টিফিকেটে একটি QR কোড থাকে। যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা সেই QR কোড স্ক্যান করে সঙ্গে সঙ্গে আপনার তথ্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘জন্ম মৃত্যু তথ্য’ (Janmo Mrityu Tathya) পোর্টাল থেকে সরাসরি যাচাই করে নিতে পারে। এই সহজলভ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতার কারণেই ডিজিটাল সার্টিফিকেট বর্তমানে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। তাই, বাধ্যতামূলক না হলেও, ভবিষ্যতের সুবিধার্থে এটি করে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।
SIR প্রক্রিয়ায় জন্ম সার্টিফিকেটের গুরুত্ব
‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ (SIR) হল ভোটার তালিকার এক বিশেষ এবং নিবিড় যাচাই প্রক্রিয়া, যা নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করছে। এই প্রক্রিয়ায়, ভোটারদের বয়স এবং ঠিকানার প্রমাণপত্র যাচাই করা হচ্ছে। জন্ম সার্টিফিকেট হল বয়স প্রমাণের জন্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গৃহীত একটি অন্যতম প্রধান এবং নির্ভরযোগ্য নথি। তাই এই SIR প্রক্রিয়ায় আপনার নাম নথিভুক্ত করতে বা তথ্য যাচাই করাতে ডিজিটাল, সহজে ভেরিফাই করা যায় এমন বার্থ সার্টিফিকেট থাকা খুবই সহায়ক।
কিভাবে হাতে লেখা সার্টিফিকেটকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করবেন?
একটি বিষয় প্রথমেই স্পষ্ট করা প্রয়োজন, আপনি নিজে থেকে অনলাইনে এই কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারবেন না। এর জন্য আপনাকে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে যেতে হবে।
কারা এই সুবিধা পাবেন?
যে সমস্ত জন্ম সার্টিফিকেটগুলি ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসের পর পঞ্চায়েত বা পৌরসভা থেকে ইস্যু করা হয়েছে, মূলত সেগুলিকেই ডিজিটাইজ করা সম্ভব। তবে, ১৯৮৭ সালের আগে হাসপাতাল থেকে সরাসরি দেওয়া সার্টিফিকেটগুলি এই প্রক্রিয়ায় ডিজিটাইজ করা নাও যেতে পারে।
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও নথি
আপনাকে আপনার পুরনো হাতে লেখা সার্টিফিকেটটিকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে হবে:
- অফিস পরিদর্শন: আপনাকে আপনার আসল (Original) সার্টিফিকেটটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট রেজিস্টারের অফিসে অর্থাৎ আপনার এলাকার পৌরসভা (Municipality) বা পঞ্চায়েত (Panchayat) অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
- ফর্ম পূরণ: সেখানকার আধিকারিকরা আপনার তথ্য যাচাই করে একটি নির্দিষ্ট “ফর্ম A” পূরণ করবেন।
- প্রয়োজনীয় নথি: আবেদনের জন্য আপনার নিম্নলিখিত নথিগুলির প্রয়োজন হবে:
- আসল পুরোনো (হাতে লেখা) জন্ম শংসাপত্র।
- শিশুর পিতামাতার ভোটার কার্ড এবং আধার কার্ড।
সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে কী করণীয়?
যদি আপনার আসল শংসাপত্রটি কোনো কারণে হারিয়ে গিয়ে থাকে, তাহলেও চিন্তার কারণ নেই। আপনার কাছে যদি সেটির একটি ফটোকপি (Photocopy) থাকে, যেখানে রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, অথবা পোলিও কার্ড (Polio Card) থাকে (যেখানে রেজিস্ট্রেশন নম্বর লেখা আছে), তাহলেও আপনি ডিজিটাল শংসাপত্র পেতে পারেন। তবে, এই ক্ষেত্রে আপনাকে সার্টিফিকেট হারানোর জন্য স্থানীয় থানা থেকে করা একটি জেনারেল ডায়েরি (GD)-র কপিও জমা দিতে হতে পারে।
ডিজিটাল সার্টিফিকেটের অতিরিক্ত সুবিধা
এই ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়ার আরও কয়েকটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে:
- মোবাইল নম্বর লিঙ্ক: ডিজিটাইজ করার সময় আপনি আপনার মোবাইল নম্বরটি সার্টিফিকেটের সাথে লিঙ্ক করাতে পারবেন।
- সহজ ডাউনলোড: একবার ডিজিটাইজ হয়ে গেলে, আপনি আপনার রেজিস্টার করা মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে ‘জন্ম মৃত্যু তথ্য’ পোর্টাল থেকে যতবার খুশি আপনার ডিজিটাল বার্থ সার্টিফিকেটটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
- তথ্য সংশোধন: যদি আপনার পুরনো সার্টিফিকেটে নামের বানান বা অন্য কোনো তথ্যে ভুল থাকে, তবে এই ডিজিটাইজ করার সময়েই আপনি প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র (যেমন- স্কুল সার্টিফিকেট, আধার কার্ড) জমা দিয়ে সেই ভুল সংশোধন করার জন্যও আবেদন করতে পারেন।














