Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে প্রত্যেক জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের BLO Duty দেওয়ার নির্দেশ এসেছে। এই নির্দেশ না মানলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ও অভিযোগ এসেছে শিক্ষকদের মধ্য থেকে। নির্বাচন কমিশনের কাজ অর্থাৎ ন্যাশনাল ডিউটি। কিন্তু এইভাবে শিক্ষকদের বাধ্যতামূলক ভাবে কি ভোটের ডিউটির মতো BLO Duty ও দেওয়া যায়? প্রশ্ন উঠছে খোদ শিক্ষক মহল থেকে। প্রচুর স্কুলে একজন শিক্ষক বা ২ জন করে শিক্ষক রয়েছেন। এই ভাবে শিক্ষকদের BLO এর কাজে দিনের পর দিন নিযুক্ত রাখলে পড়াশোনার কি হবে? প্রশ্ন উঠছে।
BLO Duty কি? এনাদের কাজ কি?
BLO এর ফুল ফর্ম Booth Level Officer. নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে যারা বুথ স্তরে ভোটার তালিকা সংশোধন ও ভোটার তালিকা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ করে থাকেন তাদের বুথ লেভেল অফিসার বলা হয়। প্রত্যেক বুথে আগে থেকেই BLO Officer নিয়োগ করা থাকে। সাধারণত কোনও বুথের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, পার্শ্ব শিক্ষক, SSK MSK ও চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকেরা বিএলও ডিউটি করে থাকেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে এই মুহূর্তে সারা রাজ্যের ভোটার তালিকা সংশোধন ও প্রচুর ভুয়ো নাম বাদ পড়ার কথা শোনা যাচ্ছে, তাই এবার এক সাথে প্রচুর কর্মীর প্রয়োজন পড়ছে। তাই স্কুল শিক্ষকদের এই কাজে নিযুক্ত করা হচ্ছে।
বাধ্যতামূলক ভাবে বিএলও ডিউটির নির্দেশ
সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের DM ও জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে একটি নির্দেশিকায় সমস্ত সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বিএলও হিসাবে নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। কিছু শিক্ষক এই দায়িত্ব গ্রহণে বা পালনে অনীহা দেখাচ্ছেন বলে নির্দেশিকায় উল্লেখ রয়েছে। প্রশাসন এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এই আচরণকে বিধিবদ্ধ দায়িত্বের লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করছে। নির্দেশিকায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, BLO Duty এর দায়িত্ব পালন বাধ্যতামূলক এবং এতে কোনও অবহেলা সহ্য করা হবে না।
আইনি ব্যবস্থা
যদি কোনও শিক্ষক বিএলও-র দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানান বা অবহেলা করেন, তবে তা সরকারি দায়িত্ব লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। এই ক্ষেত্রে, The Representation of the People Act, 1950-এর ধারা ৩২ অনুযায়ী শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দোষী সাব্যস্ত হলে এক বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ডই হতে পারে।
রাজ্যব্যাপী পরিস্থিতি
এই নির্দেশিকা মুর্শিদাবাদ জেলার জন্য জারি হলেও, এই সমস্যা শুধুমাত্র এই জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় শিক্ষকরা বিএলও-র দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করছেন, এবং প্রশাসন এই বিষয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করছে।
আইন অনুযায়ী বিএলও ডিউটি কি সত্যিই বাধ্যতামূলক?
জেলা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুসারে, সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও ডিউটি) হিসেবে নিয়োগ করা বাধ্যতামূলক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫০-এর ধারা ১৩বি(২) অনুযায়ী এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের ১৯৫০-এর ধারা ১৩বি(২) অনুযায়ী:
রাজ্য বা স্থানীয় সরকারের গ্রুপ সি বা তার উপরের পদে কর্মরত নিয়মিত কর্মচারীদের বিএলও হিসেবে নিয়োগে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
এই ধরনের কর্মচারী না পাওয়া গেলে, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক বা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ করা যেতে পারে।
তবে, বাস্তবে এই নিয়মের লঙ্ঘন দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের তাদের জেলার বাইরে বা যে বুথের বাসিন্দা তারা নন, সেখানে নিয়োগ করা হচ্ছে, যা আইনের পরিপন্থী।
ডিউটি অস্বীকারের পরিণতি
শিক্ষকদের মধ্যে ধারণা রয়েছে যে বিএলও দায়িত্ব অস্বীকার করলে কঠোর শাস্তি হতে পারে। তবে, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫০ এর ধারা ৩২ ভোটার তালিকা প্রস্তুতিতে যদি ভুল হয়, সেখানে শাস্তির নিদান রয়েছে। তবে ডিউটি না করলে বা দায়িত্ব প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রে কি হবে, সেই বিষয়ে কিছু স্পষ্ট করে বলা নেই। ফলে, বিএলও দায়িত্ব অস্বীকার করলে সরাসরি জেল বা জরিমানার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা, তা কেবলমাত্র আইনি বিকল্পই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা
নির্বাচন কমিশন শিক্ষকদের সরাসরি নিয়োগকর্তা নয়। তাদের নিয়োগকর্তা হল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পরিষদ (DPSC) বা জেলা পরিদর্শক (ডিআই)। তাই, নির্বাচন কমিশন শিক্ষকদের সরাসরি শাস্তি দিতে পারে না। তারা কেবল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করতে পারে। শিক্ষকদের চাকরি বরখাস্ত বা সাসপেনশনের ক্ষমতা কার্যত নির্বাচন-কমিশনের নেই।
শিক্ষকদের অধিকার ও RTE শিক্ষার উপর প্রভাব
শিক্ষার অধিকার আইন, ২০০৯ (RTE)-এর ধারা ২৭ অনুযায়ী, শিক্ষকদের অ-শিক্ষামূলক কাজে নিয়োজিত করা যাবে না, তবে জনগণনা, বিপর্যয় মোকাবিলা এবং নির্বাচনের কাজ এর ব্যতিক্রম। বিএলও দায়িত্ব শিক্ষকদের শিক্ষাদানের কাজে বাধা সৃষ্টি করে।
কাজের চাপ: বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা, ভোটার তালিকা প্রস্তুতি, আবেদন যাচাই এবং মিটিং-এ অংশগ্রহণের মতো কাজ শিক্ষকদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
ক্ষতিপূরণের অভাব: বিএলও দায়িত্বের জন্য শিক্ষকদের প্রায়ই ছুটির দিনে কাজ করতে হয়। শ্রম আইন অনুযায়ী, এর জন্য ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি বা ওভারটাইম বেতন প্রাপ্য, কিন্তু নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেয় না।
আইনি উদ্যোগ
শিক্ষকদের একাংশ এই নিয়োগ নীতির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন। কলকাতা হাইকোর্টে এই বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে, এবং অনেক শিক্ষক এতে আবেদনকারী হিসেবে যোগ দিচ্ছেন। এই মামলার গতিপ্রকৃতি ভবিষ্যতে এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
উপসংহার
সারা রাজ্যের ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ একসাথে এসে পড়ায় সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের উপর চাপ অনেকটাই বেড়ে গেছে। তাই এক সাথে প্রচুর সংখ্যক BLO নিয়োগের প্রয়োজন হয়েছে। এই কারণে প্রচুর শিক্ষক এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা পেয়েছেন। তবে প্রচুর শিক্ষক এই কাজ সাদরে গ্রহণ করলেও, শিক্ষকদের একাংশ BLO Duty করতে রাজি নন। এই ব্যাপারে ইতিমধ্যেই আদালতে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এবার এটাই দেখার শেষমেশ কি সিদ্ধান্ত হয়।
আরও পড়ুন:- ভয়ঙ্কর! নিজের ৫ বছরের শিশুকে খুন করে বয়ফ্রেন্ডের সাথে চলল উদ্দাম মদ-যৌনতা
আরও পড়ুন:- কৃষকদের জন্য নতুন প্রকল্প চালু করল কেন্দ্র, প্রায় ২ কোটি কৃষক উপকৃত হবেন