BLOs show-cause: শিক্ষকদের শোকজ কমিশনের! ভোটের কাজ না করলে কড়া পদক্ষেপ, তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা

By Bangla News Dunia Desk - Pallab

Published on:

BLOs show-cause: নির্বাচনী প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার আগেই কড়া পদক্ষেপ নিল নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের প্রায় ৬০০ জন বুথ লেভেল অফিসার বা BLO-কে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে, কারণ তাঁরা ভোটের দায়িত্ব পালনে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই অনিচ্ছুক BLO-দের অধিকাংশই শিক্ষক। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে তীব্র চাপানউতোর।

সূত্রের খবর, স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই এই বিপুল সংখ্যক BLO তাঁদের অনীহার কথা মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (CEO) দপ্তর এবং নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিলেন। তাঁদের মূল যুক্তি, বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার দায়িত্ব সামলে BLO-এর কাজ করা অত্যন্ত কঠিন, বিশেষ করে এমন অনেক স্কুল রয়েছে যেখানে শিক্ষকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম। এর আগেও রাজারহাট এবং কোলাঘাটে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ দল পরিদর্শনে এলে শিক্ষকরা এই সমস্যার কথা তুলে ধরেছিলেন।

কেন এই শোকজ এবং শিক্ষকদের আপত্তি কোথায়?

ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ERO) অথবা জেলাশাসকের (DM) দপ্তর থেকে পাঠানো এই শোকজ নোটিশে স্পষ্ট জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন তাঁরা এই দায়িত্ব পালন করতে চাইছেন না। নোটিশে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, যদি সন্তোষজনক কারণ দর্শানো না হয়, তবে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা সহ বিভাগীয় শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।

অন্যদিকে, অনিচ্ছুক শিক্ষকরা তাঁদের আপত্তির সপক্ষে নির্বাচন কমিশনেরই নির্দেশিকার কথা বলছেন। তাঁদের দাবি, কমিশনের নির্দেশিকাতেই বলা আছে যে শিক্ষকদের BLO-এর মতো কাজে নিযুক্ত করা উচিত নয়। এছাড়াও, নিজেদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন এবং ডেটা ব্যবহার করে নির্বাচনী কাজ করার নির্দেশ এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও কমিশন এই সমস্ত যুক্তি খারিজ করে দিয়েছে এবং স্পষ্ট জানিয়েছে যে তাঁদের কাজে যোগ দিতেই হবে, নতুবা পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

ভোটার তালিকা ম্যাপিং-এও বড়সড় গরমিল

এই বিতর্কের পাশাপাশি, ২০০২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ভোটার তালিকার ম্যাপিং নিয়েও নির্বাচন কমিশনের উদ্বেগ বেড়েছে। বেশিরভাগ জেলায় এই কাজ শেষ হলেও, সাম্প্রতিক বন্যার কারণে জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিংয়ে কাজ এখনও বাকি। তবে যা তথ্য সামনে এসেছে, তা বেশ উদ্বেগজনক।

বিভিন্ন জেলায় ২০০২ এবং ২০২৫ সালের তালিকার মধ্যে মিলের হারে বড়সড় গরমিল চোখে পড়েছে। যেমন:

  • উত্তর ২৪ পরগনা: ৪১%
  • দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ৫০%
  • পশ্চিম বর্ধমান: ৫০%
  • কোচবিহার: ৪৬%

সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে এই অমিল কমিশনকে বিশেষভাবে চিন্তায় ফেলেছে। যদিও CEO-র দপ্তর এটিকে একটি অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া বলে জানিয়েছে। তাঁদের মতে, গত ২৩ বছরে ভোটারদের স্থানান্তর, মৃত্যু এবং অন্যান্য কারণে ১০০ শতাংশ মিল হওয়া সম্ভব নয়। তবে কমিশন বারংবার আশ্বাস দিয়েছে যে কোনও বৈধ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে না।

তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা

নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

বিজেপি-র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনকে BLO-দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের অভিযোগ, শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস “ভয়ের পরিবেশ” তৈরি করে আধিকারিকদের হুমকি দিচ্ছে। ব্যক্তিগত ডিভাইস ব্যবহার এবং শাসক দলের চাপ নিয়ে BLO-দের উদ্বেগ যুক্তিযুক্ত বলে তারা মনে করছে।

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র অরুণ চক্রবর্তী কমিশনের এই পদক্ষেপকে “অসাংবিধানিক” বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, আদর্শ আচরণবিধি (Model Code of Conduct) চালু হওয়ার আগে কমিশন এইভাবে শোকজ করতে পারে না। তিনি শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, স্কুল থেকে শিক্ষকদের তুলে নিলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে। তাঁর অভিযোগ, কমিশন পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে “রাজনৈতিক প্রভুদের এজেন্ডা” বাস্তবায়ন করতে চাইছে এবং “বিজেপির এজেন্ট” হিসেবে কাজ করছে।

Bangla News Dunia Desk - Pallab

মন্তব্য করুন