Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- আন্না ইউনিভার্সিটির এক ১৯ বছরের ছাত্রী সোমবার যৌন হেনস্থার অভিযোগ জানানোর পর থেকে রাজনৈতিক তরজায় জড়িয়েছে শাসক দল ডিএমকে এবং বিরোধী দল বিজেপি। আগুনে ঘি পড়েছে তামিলনাড়ু পুলিশের ওয়েবসাইটে এই মামলার এফআইআর ‘লিক’ হয়ে যাওয়ার জন্য। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে মাদ্রাজ হাইকোর্ট শুক্রবার সুয়ো–মোটো মামলা দায়ের করে। তবে, সে দিন কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
পর দিন অর্থাৎ শনিবার হাইকোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে যে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে তদন্ত করতে হবে ও ওই ছাত্রীকে ২৫ লক্ষ টাকা অন্তর্বর্তী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বিচারপতি এস এম সুব্রহ্মণ্যম এবং বিচারপতি ভি লক্ষ্মীনারায়ণ তাঁদের নির্দেশে জানান, তিন জন মহিলা আইপিএস অফিসারকে নিয়ে সিট গঠন করতে হবে। তদন্ত চলাকালীন নির্যাতিতাকে ২৫ লক্ষ টাকা অন্তর্বর্তী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাঁরা জানান, যে ভাবে মেয়েটির নাম পুলিশের মাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছে, তা তাঁর সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করেছে। যে ভাষায় এফআইআর লেখা হয়েছিল, তাও অত্যন্ত আপত্তিকর বলে জানানো হয় আদালতের তরফে।
আরো পড়ুন:– ভয়াবহ ১০ বিপর্যয় যা বিপুল ক্ষতি করেছে এ বছরে, জানুন বিস্তারিত
বিচারপতিরা বলেন, ‘এফআইআরের ভাষার জন্যই আরও বেশি করে নির্যাতিতার দিকে আঙুল উঠছে। একে তো এই ধরনের ঘটনায় মানসিক ট্রমা তৈরি হয়, সমাজও আঙুল তোলে নিগৃহীতাদের দিকে। অথচ তাঁদের কোনও অপরাধ নেই। তাঁদের প্রতি অপরাধ ঘটানো হয়েছে।’ এফআইএর–এ যে শব্দগুলি ব্যবহার করা হয়েছে, তা দেখে মনে হচ্ছে ছেলেদের হস্টেলে লুকিয়ে যে সব চিঠি পড়া হয়, তেমন কিছু লেখা হয়েছে। পুলিশকে ভর্ৎসনা করে আদালত বলে, ‘নির্যাতিতা মাত্র ১৯ বছরের এক ছাত্রী। এফআইআর দায়ের করতে গিয়ে ভেবেচিন্তে শব্দচয়ন করা উচিত ছিল। লেখাটা পড়ে মনে হচ্ছে যেন হেনস্থা হওয়ার জন্য দায়ী তাঁর পোশাক।’
এফআইআর প্রকাশ্যে আসার জন্য আইপিসি ১৮৬০ থেকে বিএনএস ২০২৩–এ পরিবর্তন হওয়ায় যান্ত্রিক ত্রুটি দায়ী বলে জানান পি এস রামন। আদালত অবশ্য এই যুক্তিকে ‘কাঁচা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
প্রশ্নের মুখে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। অভিযুক্ত কী করে বিনা বাধায় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আদালত। এই ঘটনার পরে ক্যাম্পাসে ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য একটি পাকাপাকি কমিটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল জে রবীন্দ্রন। ম্যানেজমেন্টের তরফে নির্যাতিতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং তাঁর কাউন্সেলিং চলছে বলে আদালতকে জানানো হয়। নির্যাতিতার পড়াশোনায় যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা এবং তাঁর থেকে ভবিষ্যতে আর কোনও ফি না নেওয়ার জন্য আদালত নির্দেশ দেয়।
এ প্রসঙ্গে উঠে এসেছে চেন্নাইয়ের পুলিশ কমিশনারেরে প্রেস কনফারেন্স। সেখানে তিনি বলেছিলেন যে অভিযুক্ত এক জনই। তা নিয়ে কোর্ট অ্যাডভোকেট জেনারেল পি এস রামনকে জিজ্ঞেস করেন, তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই এমন মন্তব্যের কারণ কী? রামন জানান, একটা ধারণা তৈরি করা হয়েছিল যে তদন্তে কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সে জন্য তিনি প্রেস মিট করতে বাধ্য হন। রামন এ–ও স্পষ্ট করে দেন যে কমিশনার ওখানেই জানিয়েছিলেন যে তদন্ত সবে প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। কোনও রকমের সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
আরো পড়ুন:– জ়িনাতকে ধরতে বন দপ্তরের সফল অভিযানকে কুর্নিশ মমতার, কী লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী?
এফআইআর আপলোড করা ইচ্ছাকৃত নয় বলার পাশাপাশি অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, মিডিয়া এই ঘটনাটি নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি করছে। সেনসেশনালাইজ় করছে। তাদেরও কিছু দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা রয়েছে। এফআইআর দেখেছে বলেই তা প্রকাশ করে দিতে হবে ও ওই ছাত্রীকে আরও বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলতে হবে, তা কিন্তু নয়। কিছু সাধারণ নাগরিকও সোশ্যাল মিডিয়ায় এফআইআর কপি পোস্ট করেছেন। এগুলো কি উচিত? আদালত অ্যাডভোকেট জেনারেলের বক্তব্যকে মান্যতা দিলেও সে জন্য মিডিয়ার বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়াও যে সম্ভব নয়, তা–ও স্পষ্ট করেন।
এই ঘটনায় অভিযুক্ত শাসকদলের ঘনিষ্ঠ বলে যে দাবি করা হয়েছে, আদালত তা উড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘বিয়েবাড়িতে গেলে অনেকেই আমাদের সঙ্গে ছবি তোলেন। তার মানে কি আমরা তাঁদের সবাইকে চিনি? এই ধরনের কথাবার্তা অবান্তর। তদন্ত চলুক।’ যদিও রবিবারও বিরোধী এডিএমকে অভিযুক্তের সঙ্গে ডিএমকের সম্পর্ক ও ডেপুটি সিএম উদয়নিধি স্ট্যালিনের ছবি থাকা নিয়ে ফের রাস্তায় নামে। শহরজুড়ে ‘অভিযুক্ত কাকে স্যর বলছে’ লেখা পোস্টার ছড়িয়ে দেয় তারা।
আরো পড়ুন:– ১১ নম্বরে রোজ ১১১ মিনিট! আয়ু বাড়ায় ১১ বছর, দাবি গবেষণায়। বিস্তারিত জানুন