একা মায়ের লড়াইয়ে উদ্ধার পাচার হওয়া কন্যা, পড়ুন রুদ্ধশ্বাস কাহিনী

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ফেসবুক হঠাৎই যেন হাতে তুলে দিয়েছিল জিয়নকাঠি — ঠিক মতো ছোঁয়াতে পারলেই ফিরে আসবে হারানিধি!

সে পথেই বছর সাতেক আগে পাচার হয়ে যাওয়া মেয়েকে উত্তরপ্রদেশের আলিগড় থেকে খুঁজে আনলেন উত্তর ২৪ পরগনার শাসনের বাসিন্দা মুখ্যুসুখ্যু আমিনা বিবি (নাম পরিবর্তিত)। এক রকম একা হাতেই! পুঁজি বলতে ছিল সাহস আর আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথা বলার পরে শাসন থানার পুলিশও বলতে দ্বিধা করেনি, ‘আপনাকে সেলাম। ঘরে ঘরে যদি এমন মা থাকতেন!’

গল্পের শুরুটা ২০১৭–য়। শাসনের এক হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য আমিনার মেয়ে বছর দশেকের মীনা (নাম পরিবর্তিত)। এক মহিলা পড়শি মীনার বাবাকে বলেছিল, ‘তোমাদের তো দু’বেলার খাওয়া-পরা জোটে না। তোমার বড় মেয়েটাকে দাও না আমায়। ওকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে পড়াশোনা করাব। ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেবো।’ আপত্তি করেননি মীনার বাবা। পড়শির হাতে তুলে দেন মেয়েকে। প্রথম প্রথম ওই পড়শির কাছ থেকে খবর পেলেও করোনা অতিমারীর পর থেকে আর মেয়ের সঙ্গে সেটুকু যোগসূত্রও ছিন্ন হয়ে যায় আমিনার। পড়শি মহিলা তাঁকে জানায়, মীনা নাকি পালিয়ে বিয়ে করেছে।

আরও পড়ুন:– ৭ নতুন IPO-তে লগ্নির সুযোগ মিলবে এ সপ্তাহে, নজর থাকবে এই ৫ সংস্থার লিস্টিংয়ে

মেয়ের সঙ্গে কোনও যোগাযোগই ছিল না মায়ের, উপায়ও ছিল না। বছর দুই আগে হঠাৎ মোবাইলে ফেসবুকে আমিনার চোখে পড়ে একটি ছেলের সঙ্গে মীনার ছবি। কেঁদে ওঠে মায়ের মন। মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে ওই ছেলেটির নম্বর নেন আমিনা। জানতে পারেন, ওই ছেলেটিই নাকি তাঁর জামাই। মেয়ে এখন আলিগড়ে ‘শ্বশুরবাড়ি’তে থাকে।

আমিনার সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা বলত মীনাও। তবে ‘শ্বশুরবাড়ি’র শর্ত ছিল, কথা বলতে হবে হিন্দিতে এবং সবার সামনে, যাতে বাকিরা বোঝে যে সে মাকে কী বলছে। আশপাশে লোকজন থাকায় ভয়ে সত্যিটা বলেও উঠতে পারেনি মীনা। তবে তথাকথিত শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মাকে সে বাংলায় বলে, সে ভালো নেই। আমিনাদের ওই পড়শিই আসলে তাকে দু’লক্ষ টাকায় সেখানে বিক্রি করে দিয়েছে। নাবালিকা হওয়া সত্ত্বেও জোর করে তাকে বিয়ে করে একটা লোক। তারপর থেকে ঘরে আটকে রেখে চলত শারীরিক-মানসিক নির্যাতন।

এরপর থেকে মীনা সুযোগ পেলে পাড়া-প্রতিবেশীর ফোন থেকে কল বা ভিডিয়ো কল করত মাকে। সেই সূত্রে আমিনা জানতে পারেন, উত্তরপ্রদেশের ওই সব চত্বরে এ ভাবে নাবালিকাদের ‘কিনে এনে’ বিয়ে এবং সবাই মিলে ভোগ করাটাই রেওয়াজ। থানা–পুলিশ করেও লাভ নেই। আমিনা জানান, গত বছর ২৪ ডিসেম্বর আবার জামাইয়ের নম্বরে ভিডিয়ো কল করেন তিনি। তবে মীনাকে ফোন দেয়নি সে। আমিনার কথায়, ‘৩১ তারিখ ফের ভিডিয়ো কল করি। তখন আমার চোখে পড়ে যে, মেয়ের দু’টো হাতেই ব্যান্ডেজের কাপড় জড়ানো!’

তারপর থেকে মেয়েকে যে কোনও উপায়ে বাড়ি ফেরানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন ক্লাস ফোর পাশ আমিনা। বহু দিন ধরে জমানো হাজার পাঁচেক টাকা পুঁজি করে রওনা দেন আলিগড়। মীনার ‘শ্বশুরবাড়ি’ পৌঁছে দেখেন মেয়েটার দু’হাত, পা থেকে রক্ত ঝরছে। একটা পেরেক লাগানো লাঠি রাখা পাশে। এই শীতেও মেয়ের গায়ে কোনও গরম জামা নেই! মীনার মায়ের কথায়, ‘মেয়েকে ফেরত চাইলে ওরা বলে দু’লাখ টাকায় কিনেছি। ওই টাকা দিয়ে মেয়েকে নিয়ে যাও। কেউ টের পেলে দু’জনের কেউ বাঁচবে না।’

বুদ্ধি করে আমিনা মেয়ের হাত-পা গরম জলে মুছিয়ে দেবেন বলে বাকিদের রাজি করান। তবে মেয়ের ঘরে ঢুকতেই বাইরে থেকে মীনার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তালা মেরে দেয়। ঘরের ভিতর থেকেই আমিনা মেয়ের ওই বীভৎস অবস্থার ভিডিয়ো তুলে এক পরিচিতকে পাঠান। বাড়িতে ফোন করে পুলিশকে জানাতে বলেন।

শাসন থানার পুলিশের তরফে সমাজকর্মী ঋষিকান্তকে ভিডিয়োটি শেয়ার করা হয়। তিনি তা ‘জাস্ট রাইট ফর চিলড্রেন অ্যালায়েন্স’, ‘কোশী লোকমঞ্চ’ ও ‘শক্তিবাহিনী’র সঙ্গে শেয়ার করেন। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শক্তিবাহিনী আলিগড় পুলিশের কাছে যায় ও পুরো ঘটনা জানায়। ওই থানার বিরাট বাহিনী সেখানে পৌঁছে মা-মেয়েকে বের করে আনে। তবে আমিনার অভিযোগ, সেখানকার পুলিশ কোনও জিডি বা এফআইআর করেনি। তার বদলে মা-মেয়েকে সটান হাওড়াগামী ট্রেনে বসিয়ে দেয়! শনিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ তাঁরা হাওড়া পৌঁছন। আলিগড় থানার সঙ্গে এ নিয়ে রবিবার যোগাযোগ করা হলে জবাব আসে — ‘ইধার তো অ্যায়সা হোতা হি হ্যায়। লড়কি কো খরিদকে বেহা করতা হ্যায়!’

হাওড়া থেকে এনজিও-র কর্মীরা আমিনাদের শাসন থানায় নিয়ে যান। সেখানে ‘জ়িরো এফআইআর’ রুজু করে আলিগড়ের সংশ্লিষ্ট থানায় ইতিমধ্যেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেয়েটিকে সিডব্লিউসি-র নির্দেশে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাকে রবিবারই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সুস্থ হওয়া পর্যন্ত আপাতত সে মায়ের কাছে থাকবে। মীনা মানসিক ভাবে এতটাই বিধ্বস্ত যে, কথা বলার অবস্থায় নেই। আলিগড়েই তাকে ফেলে আসতে হয়েছে তার এক বছরের ছেলেকে। শূন্য দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে থাকে।

আমিনার পথে হেঁটে মীনাও কি লড়বে তার মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে? জবাব মিলবে ভবিষ্যতে…

আরও পড়ুন:– ‘চাঁদ নয়, সোজা মঙ্গলে কলোনি’, বড় লক্ষ্য মাস্কের, বিস্তারিত জানুন

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন