Bangla News Dunia , Rajib : ‘অফিস টাইম’-এ ট্রেনে মারাত্মক ভিড়। কানে এয়ারপড। হাই ভলিউমে চলছে বিদেশি ভাষার গান। প্লে-লিস্টে বাংলা গান নেই বললেই চলে। হঠাৎ বেজে উঠল, ‘এইটা তোমার গান।’ ইনস্টা স্ক্রোল করতে গিয়ে থমকে গেল শ্রেয়ার বুড়ো আঙুল। ভিড় ট্রেনের মধ্যেও যেন সব কিছু শান্ত লাগছে তার। এক ঝটকায় মনে পড়ে গেল সেই ছোট্টবেলার প্রেমের কথা। স্কুল লাইফের প্রাক্তনের আজ কোনও খোঁজ নেই। তবে সাফেল মোডে ‘চন্দ্রবিন্দু’ বেজে উঠলে পুরনো স্মৃতি যেন এক ঝটকায় তরতাজা হয়ে ওঠে। বিশেষত জ়িলেনিয়ালদের। সেই ‘চন্দ্রবিন্দু’-র ১২ বছর পর নতুন অ্যালবাম প্রকাশ পেতে চলেছে। প্রথম অ্যালবাম যখন বেরিয়েছিল, সালটা ১৯৯৭। আর শেষ অ্যালবাম ২০১২ সালে। অন্যদিকে, জেন জ়ি হলো তাঁরাই, যাঁরা ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মেছেন। জ়িলেনিয়ালদের অনেকেই ‘চন্দ্রবিন্দু’-এর সঙ্গে যাপন করেছেন। কিন্তু যে সব জেন জ়ি-এর বয়স ১৬ কি ১৭, তাঁদেরকে কি ছুঁতে পেরেছে ‘চন্দ্রবিন্দু’? তাঁরা কি শোনেন ‘সুইটহার্ট, আই অ্যাম সিটিং অ্যালোন’?
এ ব্যাপারে ‘চন্দ্রবিন্দু’র সদস্য অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের কথা, ‘কোন গানটা কোন বয়সের মানুষ শুনবে, সেটা হলফ করে বলা যায় না। এটা যাঁর যাঁর চয়েজ়ের ব্যাপার। কিন্তু সংবেদনশীলরা নিশ্চয়ই চন্দ্রবিন্দুকে বোঝেন, তাই হয়তো গানগুলো শোনেন। এখনও যখন কলেজে আমরা শো করতে যাই, নতুন প্রজন্ম আমাদের গ্রহণ করে সাদরে।’ নব্বইয়ের দশক থেকে বাঙালির প্রজন্মের পর প্রজন্ম ‘চন্দ্রবিন্দু’ শুনে বড় হয়েছে। এখনও অনেকেই ‘চন্দ্রবিন্দু’ শুনছেন। কিছু শ্রোতা ৪০-এর কোঠায় পা দিয়েছেন, আবার কেউ ২৫। কিন্তু যাঁরা সদ্য যৌবনে পা দিয়েছেন, তাঁদের কাছে নব্বইয়ের কলকাতা অধরাই। তা হলে কি তাঁরা বুঝবেন না ‘চন্দ্রবিন্দু’কে? ব্যান্ডের আর এক সদস্য উপল সেনগুপ্ত বলেন, ‘কেউ যদি নব্বইয়ের দশককে চিনতে চান, জানতে চান, ‘চন্দ্রবিন্দু’-র গানে সেগুলো পেয়ে যেতে পারেন। আজ সেলুলার পেজার নেই। আগামী দিনে হয়তো গোলবাড়ির কষা মাংসও থাকবে না। কিন্তু ‘চন্দ্রবিন্দু’-র গানে এই সব পাওয়া যাবে।’
আরো পড়ুন :- ইজরায়েলের হাতে ‘মাদার অফ অল বম্ব’ ! ধ্বংস হয়ে যাবে মুসলিম দুনিয়া ?
আরো পড়ুন :- চীন-পাকিস্তানের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিল ভারত !
উপল আরও বলেন, ‘আজ থেকে ১০ বছর আগেও যখন বিদেশে শো করতে যেতাম, সেখানকার প্রবাসী বাঙালিদের নতুন প্রজন্ম আমাদের গান খুব একটা শুনতেন না। তাঁদের বাবা-মা উত্তেজিত হয়ে আমাদের গান শুনতেন। কিন্তু এই বছর বিদেশে গিয়ে দেখলাম, পরবর্তী প্রজন্মের যাঁরা ভাঙা ভাঙা বাংলা বলেন, তাঁরাও আমাদের গানে আনন্দ খুঁজে পেয়েছেন। সেদিক থেকে দেখতে গেলে কলকাতার জেন জ়ি-রা বাংলায় থেকে বাংলাকে নিয়েই যাপন করছেন। সুতরাং, ধরে নেওয়া যেতেই পারে, তাঁদের কাছে ‘চন্দ্রবিন্দু’ আরও বেশি কাছের।’
ফাইভ জি হাতে থাকা জেন জ়ি-রা নব্বইয়ের দশক নিয়ে বেশি মাথা ঘামান না। কিন্তু প্রেম! ওটা তো যুগে যুগে সত্য। আর বাঙালির কাছে ‘চন্দ্রবিন্দু’ প্রেমের চেয়ে কম কী! অনিন্দ্য ও উপল বলেন, ‘প্রেম সব বয়সের কাছেই প্রাসঙ্গিক। আর ‘চন্দ্রবিন্দু’-র গানও ঠিক তা-ই। হয়তো মাধ্যম বদলেছে, কিন্তু প্রেম-ভালোবাসা একই রয়ে গিয়েছে।’ ডেটিং অ্যাপের যুগে হাতে লেখা চিঠির চল প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু প্রেম আজও চিরন্তন। আজও ক্রাশের দেখা পেলে মন বলে ওঠে, ‘আমি ওমনি বোবা দু’চোখে হারাই’। প্রথম চুমুর পর সঙ্গীকে বলতে ইচ্ছে করে, ‘তুমি নরম ঠোঁটে স্বেচ্ছা ব্যথার নীল, তুমি অন্য মনে একলা পাখির ঝিল।’
‘মধ্যবিত্ত ভীরু প্রেম’ হয়তো আর টেস্টপেপারে রাখা নেই। কিন্তু আজও কোথাও যেন ‘গোপন কালশিটে’টা রয়ে গিয়েছে আড়ালে। ‘দুপুরের খামোখা খেয়াল’-এ মনে পড়বেই ‘দু’চোখের নীরবতা’। সেরকমই নতুন গান ‘রেকর্ড’-এ সেজে আসছে নতুন শ্রোতাদের জন্যেও। এএলপি রেকর্ড আকারে প্রকাশ পাচ্ছে ‘চন্দ্রবিন্দু’র নতুন অ্যালবাম ‘টালোবাসা’। একগুচ্ছ নতুন গান ও বাঙালির ইমোশন নিয়ে পুরনো স্বাদে ফিরছে ‘চন্দ্রবিন্দু’। ‘টালোবাসা’ তাদের দশম অ্যালবাম। সুতরাং, সেখানে চমক থাকতে বাধ্য। তাই বাংলায় এলপি রেকর্ডকে ফিরিয়ে আনতে চলেছে ‘চন্দ্রবিন্দু’। এটাও তো জেন জ়ি-র কাছে নতুন, নাইটিজ়ের সঙ্গে তাঁদের হ্যান্ডশেক। যতই হোক ‘মুহূর্তরা মুহূর্তের কাছে ঋণী’। এ ভাবেই বারবার বাঙালির কাছে ফিরে আসুক ‘চন্দ্রবিন্দু’।
#END