কফিন খুলে স্ত্রী আর মেয়ের মুখ দেখেই হাহাকার শোভনের

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- সকাল তখন সওয়া দশটা। সিকিম থেকে অ্যাম্বুল্যান্সটি এসে দাঁড়াল উত্তর ২৪ পরগনার নিউ ব্যারাকপুর পুরসভার শব সংরক্ষণকেন্দ্রে। তার আগেই শোভন শাসমলের স্ত্রী ও মেয়ের কফিনবন্দি দেহ বের করে আনা হয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্সে শোভন আসতেই বন্ধুরা ধরাধরি করে তাঁকে বসিয়ে দিলেন। সিকিমে দুর্ঘটনায় স্ত্রী–মেয়েকে হারানো শোভনও গুরুতর জখম। পা ভেঙেছে। তাই গাড়ি থেকে নামা সম্ভব ছিল না। অ্যাম্বুল্যান্সের জানলা থেকেই শেষবারের মতো আড়াই বছরের মেয়ে ও স্ত্রীকে দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলেন শোভন। হাহাকার করে উঠলেন, ‘এ ভাবে তো আমাদের ফেরার কথা ছিল না…।’

উপস্থিত সকলের চোখেই তখন জল। দেরি না করে অ্যাম্বুল্যান্স এরপর শোভনকে নিয়ে ছুটল কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। আর বিকেলে স্ত্রী পায়েলের দেহ কাশীপুরের রতনবাবুর ঘাট মহাশশ্মানে দাহ করা হয়। শোভন–পায়েলের আড়াই বছরের মেয়ে শ্রীনিকাকে সমাহিত করা হয়েছে মধ্যমগ্রামের গঙ্গানগরে।

সিকিমের হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর পায়েল ও শ্রীনিকার দেহ বিমানে সোমবারই চলে এসেছিল নিউ ব্যারাকপুরে। সড়কপথে অ্যাম্বুল্যান্সে আসছিলেন শোভন। জেদ ধরেছিলেন, তিনি না–ফেরা পর্যন্ত যেন শেষকৃত্য না হয়। সেই মতো দেহ দু’টি রাখা ছিল। ফোনেই বন্ধুদের বলে রেখেছিলেন মেয়ে–বৌয়ের মুখ না দেখে তিনি কিছুতেই হাসপাতালে ভর্তি হবেন না।

আরও পড়ুন:– প্যান কার্ড নিস্ক্রিয় হতে চলেছে নতুন বছরে? এইভাবে প্যান কার্ড স্ট্যাটাস চেক করে জানুন

এ দিকে অত উঁচু থেকে খাদ পড়ে পায়েলের মুখ থেঁতলে গিয়েছিল। সেই মুখ কী করে দেখাবেন শোভনকে? ভেবে পাচ্ছিলেন না বন্ধুরা। কিন্তু শোভনও অনড়। শেষমেশ দু’জনের মুখই দেখলেন। তারপর অ্যাম্বুল্যান্সে বসেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন। কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলেন, ‘সবাই আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলে!’ শোভনের হাল দেখে কফিনের সামনে আর তাঁকে বেশিক্ষণ রাখেননি বন্ধুরা। দ্রুত শোভনের অ্যাম্বু্ল্যান্স সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

বিকেলে মা–মেয়ের দেহ প্রথমে সুকান্ত সরণির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নাতনি–বৌমার শেষ দেখা পেতে সকাল থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন পায়েলের পক্ষাঘাতগ্রস্ত শ্বশুর ও শাশুড়ি। এক চোখ জল নিয়ে শোভনের মা পিয়ালি শাসমল বলেন, ‘ঠাকুর সমস্ত কিছু দিয়েছিল। একটা দুর্ঘটনায় সবটা কেড়েও নিল। ওদের ছাড়া কী নিয়ে বাঁচব? নাতনির মুখটা সব সময়ে চোখে ভাসছে।’ কিছুক্ষণ বাদে সুকান্ত সরণি থেকে দেহ দু’টি নিয়ে যাওয়া হয় মধ্যমগ্রামের বসুনগর পেয়ারাবাগানে পায়েলের বাপের বাড়িতে। কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পেয়ারবাগানের বাতাসও।

মা-মেয়ের কফিনবন্দি দেহ, অ্যাম্বুল্যান্সে ফিরছেন বাবা

প্রসঙ্গত, স্ত্রী পায়েল ও মেয়ে শ্রীনিকাকে নিয়ে ২৩ ডিসেম্বর উত্তর সিকিম বেড়াতে গিয়েছিলেন শোভন। সঙ্গে গিয়েছিল শোভনের মামাতো ভাইয়ের পরিবারও। ছ’জনে গাড়িতে করে শনিবার জ়ুলুকে যান। ফেরার পথে লামাটেনের কাছে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে গাড়ি খাদে গিয়ে পড়ে। শ্রীনিকা তখন মায়ের কোলে। খাদে পড়ার মুহূর্তে একরত্তিকে বাঁচাতে পায়েল কোল থেকে মেয়েকে ফেলে দিয়েছিলেন। শ্রীনিকা খাদে পড়লেও গভীরে গিয়ে পড়েনি।

কিন্তু পায়েল খাদের অনেকটাই নীচে গিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। শ্রীনিকা উদ্ধারের পরেও বেঁচেছিল। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় তার। শোভনের পা ভেঙেছে। শরীরে আরও চোট–আঘাত রয়েছে। শোভনের মামাতো ভাই ও তাঁর স্ত্রীও চোট পেয়েছেন। তাঁদের বাচ্চাকে গাড়ি খাদে পড়ার মুহূর্তে জানলা দিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেলায় সে বেঁচে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: টাকাতেই কি আটকে সুখের ঠিকানা ? উত্তরের খোঁজে ঋত্বিক-শোলাঙ্কি 

আরও পড়ুন:– ‘এবার ঘুরে দাঁড়ানোর পালা’- কার উদ্দেশ্যে বার্তা সলমন খানের ?

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন