Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- মানব জীবনে একটাই জিনিসই নিশ্চিত, মৃত্যু। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ জানার চেষ্টা করেছে, তার আয়ু কতদিন হতে পারে। তবে, এটা শুধু ব্যক্তিগত কৌতূহলের বিষয় নয়। অবসরকালীন আয়ের চাহিদা থেকে শুরু করে জীবন বীমা, পেনশন তহবিলের মতো সব ধরনের অর্থনৈতিক গণনার জন্য আয়ু জানাটা সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাগুলির কাছেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতদিন পর্যন্ত, বাস্তব জীবনের পরিসংখ্যান থেকেই আয়ু অনুমানের চেষ্টা করা হতো। এবার, এর দায়িত্ব বর্তেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর।
গত জুলাই মাসে বাজারে চালু হয়েছিল এআই-চালিত আয়ু মাপার অ্যাপ, ‘ডেথ ক্লক’। মার্কেট ইন্টেলিজেন্স ফার্ম, ‘সেন্সর টাওয়ার’ জানিয়েছে এই অ্যাপ নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। লক্ষাধিক মানুষ ইতিমধ্যেই অর্থের বিনিময়ে এই অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন। প্রায় ১,২০০টিরও বেশি আয়ু সংক্রান্ত তথ্যভান্ডার দিয়ে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রশিক্ষিত। খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়ামের অভ্যাস, স্ট্রেস লেভেল এবং ঘুম সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য ব্যবহার করে, এই অ্যাপ মৃত্যুর সম্ভাব্য তারিখের পূর্বাভাস দেয়। অ্য়াপটির নির্মাতা, ব্রেন্ট ফ্রানসনের দাবি, এতদিন যে পদ্ধতিগুলিতে আয়ুর অনুমান করা হত, তার তুলনায় তাঁর তৈরি অ্যাপের অনুমান অনেক বেশি নির্ভুল।
আরো পড়ুন:– এবার নর্থ সিকিম বেড়াতে যাওয়া যাবে? কবে থেকে? জেনে নিন জরুরি তথ্য
যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের হিসেব বলছে, একজন ৮৫ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিকের এক বছরের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা তাকে ১০ শতাংশ। তাদের গড়ে আরও ৫.৬ বছর বাঁচার সম্ভাবনা থাকে। ব্রেন্ট ফ্রানসন জানিয়েছেন, এক বিস্তৃত মার্জিন ধরে এই গড়গুলি করা হয়। যেমন, ৮৫ বছরের কোনও মার্কিন বৃদ্ধের গড় আয়ু ৫.৬ বছর বলা হলেও, একি সঙ্গে বলা হচ্ছে তাদের মধ্যে ১০ শতাংশের ১ বছরের মধ্যেই মৃত্যু হতে পারে। তাদের ডেথ ক্লকের নতুন অ্যালগরিদমগুলি এই মার্জিনটা অনেকটা কমিয়ে দেব এবং আরও নিখুঁত তথ্য পাওয়া যাবে।
কবে আপনি মারা যাবেন, সেই তারিখ জানাচ্ছে অ্যাপটি। তাই প্রাথমিকভাবে এই অ্যাপ অনেকের কাছেই অস্বস্তির মনে হতে পারে। কিন্তু, ‘গ্রিম রিপার’-এর ছবি-সহ এই অ্যাপে একটি সুন্দর ডেথ-ডে কার্ডও দেখানো হয়। যা, ওই অস্বস্তি অনেকটাই কাটিয়ে দেয় এবং ডেথ ক্লক মানুষকে আরও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে উৎসাহিত করছে বলে, দাবি সেন্সর টাওয়ারের। তাই, স্বাস্থ্য এবং ফিটনেস বিভাগের অ্যাপগুলির তালিকায় বেশ উপরের দিকে রয়েছে ডেথ ক্লক। এ তো গেল স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কথা। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এই অ্যাপের বিস্তৃত সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
সম্প্রতি, হার্ভার্ড এবং লন্ডন বিজনেস স্কুলের গবেষকদের তৈরি এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে আমেরিকার, ‘ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকোনমিক রিসার্চ’। বার্ধক্য প্রক্রিয়া, শারীরবৃত্তীয় ক্ষমতাকে কী কী ভাবে প্রভাবিত করে সেটাই এই গবেষণাপত্রের বিষয়। বলা হয়েছে, ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মানুষের যে বয়স হয়, তাতে অর্থনৈতিক বিভিন্ন দিক ভালোভাবে ধরা নাও পড়তে পারে। বয়সের ভিত্তিতে ধরে নেওয়া হয় কোনও মানুষ কাজ করার জন্য কতটা সক্ষম। বয়সের ভিত্তিতেই তৈরি করা হয় বিভিন্ন নীতি। এভাবে চললে, সভ্যতা দীর্ঘায়ুর সুবিধাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হবে। এই ক্ষেত্রে এআই-এর অনুমান কাজে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আবার, বিনিয়োগ উপদেষ্টা সংস্থা ক্রিলোজির আর্থিক পরিকল্পনাকারী রায়ান জাব্রোভস্কির মতে, আয়ুর নির্ভুল অনুমান, অবসর গ্রহে পাড়ি দেওয়া মানুষদের জন্যও অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, আমেরিকায় বয়স্কদের এক বড় উদ্বেগ হল, তাঁরা যত বছর বাঁচবেন ধরে নিয়ে অর্থ জমিয়েছেন, যদি তাদের আয়ু তার থেকে বেশি হয়? আয়ু সঠিকভাবে জানা থাকলে, এই উদ্বেগ দূর হবে। কতটা সঞ্চয় করতে হবে, কখন ব্যাঙ্কে জমা অর্থ তুলতে হবে, এই সকল সিদ্ধান্ত আয়ুর উপর ভিত্তি করেই গণনা করা হয়। এআই-এর অনুমান, এই সকল গণনার কাজটা অনেক সহজ করে দিতে পারে। এই ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা অনেকটাই কমাতে পারে।
শুধু তাই নয়, এআই প্রযুক্তি মানুষের আয়ু বাড়িয়েও দিতে পারে। ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে, ডেথ ক্লক মানুষকে স্বাস্থ্যকর জীবন অভ্যাসে উৎসাহিত করছে। এআই-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে, হার্ট-রেট মনিটর, অক্সিজেনের ঘনত্ব মাপার মতো যন্ত্রগুলি মৃত্যুর অনিশ্চয়তাও অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে। তারপরও অবশ্য সীমাবদ্ধতা থাকবে। দুর্ঘটনা বা মহামারির মতো সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত বিষয়গুলি ব্যর্থ করে দিতে পারে এআই-এর অনুমান।