Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত বা অন্য মানবিক সহায়তা প্রয়োজন, এমন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। একই সময়ে বিশ্বের ধনী দেশগুলি ব্যাপকভাবে কমাচ্ছে তাদের সাহায্যের পরিমাণ। সহজ পাটিগণিতের হিসেবই বলছে, এর ফলে আগামী বছরগুলিতে পেটে খিদে নিয়েই টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে বহু মানুষকে। মানবিক সহায়তা তাঁরা পাবেন না।
রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেব অনুযায়ী মানবিক সহায়তা প্রয়োজন এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি ৭০ লক্ষ। ধনী দেশগুলির সাহায্য যেভাবে কমছে, তাতে ২০২৫-এ খুব বেশি হলে এর ৬০ শতাংশ মানুষকে সাহায্য করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এর অর্থ, সামনের বছর অন্তত ১১ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ খাদ্য বা অন্যান্য মানবিক সহায়তা পাবে না।
কতটা কমেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবিক সহায়তার তহবিল? ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তার জন্য ৪৯৬০ কোটি ডলার সংগ্রহ করতে চেয়েছিল। কিন্তু, তাদের তথ্য বলছে সংগ্রহ হয়েছে এই লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪৬ শতাংশ।
২০২৩-এও তাদের যা তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল, তার অর্ধেকেরও কম অর্থ সংগ্রহ করতে পেরেছিল এই আন্তর্জাতিক সংস্থা। তহবিলের এই ঘাটতির কারণে সাহায্যে কাটছাঁট করতে হয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলিকে। ক্ষুধার্তদের রেশন কমাতে হয়েছে। মানবিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্যদের তালিকা থেকে বাদ দিতে হয়েছে বহু মানুষকে।
সিরিয়ার কথা ধরা যাক। দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মধ্য প্রাচ্যের দেশটিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য বিতরণকারী সংস্থা, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি’ বা ‘ডব্লিউএফপি’ ৬০ লক্ষ মানুষের মুখে খাবার তুলে দিত। চলতি বছরের শুরুতে তহবিলের কথা মাথায় রেখে, এই সংখ্যাটা তারা ১০ লক্ষে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে। ডব্লিউএফপি-র অংশীদারী এবং সংস্থান সংগ্রহ বিষয়ক সহকারী কার্যনির্বাহী কর্তা, রানিয়া দাগাশ-কামারার কথায়, ‘সিরিয়ায় আমরা এই মুহুর্তে ক্ষুধার্তদের থেকে নিয়ে অনাহারে থাকা মানুষদের খাওয়াচ্ছি।’
আসলে বর্তমানে বিশ্বের ধনী দেশগুলি, কোথায় এবং কত পরিমাণে সাহায্য করবে, তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আর্থিক চাপ, চরম আবহাওয়া পরিস্থিতির মতো বিভিন্ন কারণ তাদের এই দিকে ঠেলে দিয়েছে।
আরো পড়ুন:– পৃথিবী গোলাকার নয়, প্রমাণ করতে গিয়ে ৩১ লক্ষ টাকা খোয়ালেন ইউটিউবার, কিভাবে ? জানুন
একটা সময় বিশ্বে মানবিক সহায়তার অন্যতম মুখ ছিল জার্মানি। রাষ্ট্রপুঞ্জের তহবিলের অন্যতম বৃহৎ দাতা তারা। ২০২৪ সালেই, তার আগের বছরের তুলনায় জার্মানির মানবিক সহায়তা অনুদান ৫০ কোটি ডলার কমেছিল। আগামী বছরের জন্য সেই দেশের মন্ত্রিসভা ইতিমধ্যেই আরও ১০০ কোটি ডলার কমানোর সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে সেই দেশের ফেডারেল নির্বাচনও রয়েছে। তার পর এক নতুন সংসদ তাদের আগামী বছরের পরিকল্পনা ঠিক করবে।
অনাহার প্রতিরোধ ও মোকাবেলায় গোটা বিশ্বের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আমেরিকা। গত পাঁচ বছরে ৬৪৫০ ডলারের মানবিক সহায়তা দিয়েছে তারা। কিন্তু, জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ। এখনও তিনি মানবিক সহায়তা কাটছাঁটের বিষয়ে কিছু বলেননি। তবে, প্রথম মেয়াদে তিনি মার্কিন তহবিল কমানোর চেষ্টা করেছিলেন। আর দ্বিতীয় মেয়াদে, বিদেশী সাহায্য কী ভাবে কাটছাঁট করা যায়, তার জন্য তিনি ইতিমধ্যেই তাবড় উপদেষ্টাদের নিয়োগ করেছেন।
ট্রাম্প বারবারই বলেছেন, রাষ্ট্রপুঞ্জ আমেরিকার থেকে বেশি বেশি করে তহবিল সংগ্রহ করে। তাঁর দাবি, মানবিক সংস্থাগুলির উচিত বিশ্বের অন্য বড় দেশগুলিকে আরও তহবিল প্রদানের জন্য চাপ দেওয়া। না হলে আমেরিকার সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের দাবি অন্যায্য বলা যাবে না। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবিক তহবিলের সিংহভাগ আসে তিনটি ধনী দেশ বা সংস্থা থেকে – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং ইউরোপীয় কমিশন। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মানবিক সংকটের মোকাবিলায় রাষ্ট্রপুঞ্জ যে ১৭০০০ কোটি ডলার খরচ করেছে, তার ৫৮ শতাংশই দিয়েছিল এই তিন ধনী দেশ বা সংস্থা।
অর্থনৈতিক শক্তির দিক থেকে বিশ্বের প্রথম পাঁচ দেশের মধ্যে আমেরিকা ও জার্মানি ছাড়া রয়েছে চিন, রাশিয়া ও ভারত। ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত তাদের সম্মিলিত অবদান ছিল ১ শতাংশেরও কম। তহবিল প্রদানের ব্যবধানটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। এটা দূর না করতে পারা কিন্তু, রাষ্ট্রপুঞ্জের বড় ব্যর্থতা। হাতে গোনা কয়েকটি দেশের উপর নির্ভর না করে, তাদের আরও অন্যান্য দিকে তাকানো উচিত।
আরো পড়ুন:– কলকাতার বসু বিজ্ঞান মন্দিরে অনন্য গবেষণা, বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলেন বাঙালি বিজ্ঞানীরা