গবাদি পশুদের এলএসডি থেকে রক্ষা করতে ভ্যাক্সিন আনছে ভারত বায়োটেকের বায়োভেট, জানুন বিস্তারিত

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- গবাদি পশুদের জন্য নতুন ভ্যাক্সিন তৈরি করেছে ভারত বায়োটেকের সংস্থা বায়োভেট । নাম বায়োলুম্পিভ্যাকসিন (BIOLUMPIVAXIN) । এবার সেই ভ্যাক্সিনকে মান্যতা দিল সেন্ট্রাল ড্রাগ স্টান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন । গাবাদি পশুরা ল্যাম্পি স্কিন ডিসিজ নামে এক সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয় । তাদের সাহায্য করবে এই ভ্যাক্সিন ।

কী এই ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ ?

গবাদি পশুরা বিভিন্ন সময় এই রোগে আক্রান্ত হয় । তাদের শীরের বিভিন্ন অংশে গর্ত তৈরি হয় চামড়া কুঁচকে যায় । তাদের বারবার জ্বর হয় । পাশাপাশি তারা আগের থেকে অনেক কম পরিমাণে দুধ উৎপাদন করে । শুধু তাই নয়, তাদের চলাফেরার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয় । ভারতীয় অর্থনীতিদের গাবাদি পশুদের এই রোগের বিরাট প্রভাব রয়েছে । কম পরিমাণে দুধ দিলে সামগ্রিকভাবে দুধের পরিমাণ কমে যায় । সাধারণত মশার কামড় থেকে বা অন্য কোনও পতঙ্গ থেকে গবাদি পশুর শরীরে এই রোগেল জীবাণু প্রবেশ করে ।

2022 সালে এলএসডি-র প্রকোপ একলপ্তে অনেকটা বেড়ে যায় । গুজরাত থেকে শুরু করে মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব এবং জম্মু কাশ্মীরে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে এলএসডির । একটি পরিসংখ্যান বলছে, কমবেশি 80 শতাংশ গবাদি পশুর মধ্যে এই রোগের নানা উপসর্গ দেখতে পাওযা যায় । মৃত্যুর হার বেড়ে হয় 67 শতাংশ । এই রোগের কারণে দেশর বিরাট অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল । প্রায় 18,337.76 কোটির ক্ষতি হয় । তাছাড়া সে বছর দেশে স্বাভাবিকের তুলনায় 26 শতাংশ কম দুধ উৎপাদিত হয়েছিল ।

আরও পড়ুন:- রায়দান স্থগিত ! ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় কী পর্যবেক্ষণ করল সুপ্রিম কোর্ট ?

এলএসডি যে চিরকাল ভারতের অর্থনীতিকে বিপদে ফেলে এসেছে এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই । 1929 সালের একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় জাম্বিয়াতে বহু গবাদি পশু সে সময় এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল । পরবর্তী চার দশকে আফ্রিকায় দাপট দেখাতে থাকে এই রোগ । অনেক পরে 1988 সালে মিশরে হানা দেয় এই রোগ । পরের বছর ইজরায়েলে হানা দেয় রোগ । এরপর মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি দেশে হানা দেয় এলএসডি । এরপর তার গন্তব্য ছিল ইউরোপ । অনেক পরে ভারতে হানা দেয় এলএসডি । 2019 সালে প্রথমবার ভারতে এলএসডির প্রকোপ দেখা যায় ভারতে । তথ্য আরও বলছে, গত দু’বছরে প্রায় 2 লক্ষ গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে । আরও বহু গবাদি পশু তাদের দুধ উৎপাদনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে ।

এলএসডি রোধে বিশ্বের একমাত্র মার্কার ভ্যাক্সিন

গবেষণা থেকে উঠে এসেছে, গবাদি পশুর শরীরে থাকা বায়োলুম্পিভ্যাকসিন নিরাময়ে একমাত্র মার্কার ভ্যাক্সিন । বিজ্ঞানের পরিভাষায় মার্কার ভ্যাক্সিন বলতে এক বিশেষ ভ্যাক্সিনকে বোঝায় । ভ্যাক্সিন পেয়েছে এমন পশু আর ভ্যাক্সিন পায়নি এমন পশুর মধ্যে প্রভেদ করতে একমাত্র এই মার্কার ভ্যাক্সিনই পারে ।

ভ্যাক্সিনের গুণমান সংক্রান্ত গবেষণা হয়েছে ইন্ডিয়ান ভেটেনারি রিসার্চ ইন্সটিটিউটে । ভ্যাক্সিনটি তৈরিতে 2019 সালে রাঁচি থেকে সংগ্রহ করা ভাইরাসের অংশকে কাজে লাগানো হয়েছে । ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ অ্যাগ্রিকালচার রিসার্চ ইন্সটিটিউট এবং ন্যাশনাল সেন্টার রিসার্চ সেন্টার অন ইউকুইনস এবং বায়োটেক একসঙ্গে ভাইরাস তৈরিতে কাজ করেছে ।

এলএসডি-কে নিয়ন্ত্রণ করতে ভ্যাক্সিন সবচেয়ে কার্যকরী উপায় বলে মনে করা হয় । জানা গিয়েছে, গবাদি পশুর শরীরে প্রবেশ করার পর প্রাথমিকভাবে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার কাজ করে ভ্যাক্সিন । অনেক ক্ষেত্রে অবশ্য দেখা গিয়েছে, গবাদি পশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে 3 থেকে 4 সপ্তাহ সময় লাগে । তাছাড়া আগে থেকে এই ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করলে গবাদি পশুদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায় অনেকটা ।

গবেষণা ও পরীক্ষা

গত তিন বছর ধরে এই ভ্যাক্সিন সংক্রান্ত পরীক্ষার কাজ চলে আসছে এনআরসিই-তে । গবেষণার কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন নবীন কুমার । তিনি পুনে এনআইভি-র অধিকর্তা । তাঁর পাশাপাশি বড় ভূমিকা পালন করেছেন আইসিএমআরের অ্যানিমেল সায়েন্সের প্রাক্তন অধিকর্তা বিএন ত্রিপাঠি । এখন তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের এসকেইউএএসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ।

কোন পথে এগিয়েছে গবেষণা ?

গবাদি পশু আছে এমন জায়গায় এই ভাইরাসের পরীক্ষা হয়েছে । তাতে এমন কোনও উপদানের দেখা পাওয়া যায়নি যা পশুদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে । পাশপাশি দেখা গিয়েছে এই ভ্যাক্সিনের সাহায্যে পশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বেড়েছে । শুধু তাই নয়, পশু যে দুধ দিয়েছে তাতেও ভাইরাসে থাকা ভ্যাক্সিনের প্রভাব সেভাবে দেখতে পাওয়া যায়নি । হরিয়ানার হিসারে অনেক পশুর শরীরে এই ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে । তাদের কারও কোনও সমস্যা হয়নি । তাছাড়া গবেষণায় উঠে এসেছে এই ভ্যাক্সিন গর্ভবতী গবাদি পশুদের শরীরেও নিশ্চিন্তে প্রয়োগ করা যায় ।

বিশ্বে এলএসডি-কে প্রতিহত করতে আরও ভ্যাক্সিন আছে । তবে সেই সমস্ত ভ্যাক্সিন ব্যবহার করে নানা ধরনের সমস্যা হয় । শরীরে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় । জ্বরও হতে পারে । আর তার সঙ্গে দুধ উৎপাদনের ক্ষমতাও কমে যায় উল্লেখযোগ্য ভাবে । বাওভেটের প্রতিষ্ঠাতা চিকিৎসক কৃষ্ণা এল্লা বলেন, “এই মার্কার ভ্যাক্সিন খুবই কার্যকরী ভূমিকা নিতে চলেছে । এর সাহায্য কোনও গবাদি পশু আগে এলএসডি-তে আক্রান্ত হয়েছিল কিনা সেটাও বোঝা যাবে । পাশাপাশি সিডিএসসিও আমাদের যে ছাড়পত্র দিয়েছে সেটাও ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ । এই ভ্যাক্সিন আমাদের দেশকে গবাদি পশুদের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হতে সাহায্য করবে।” জানা গিয়েছে খুব অল্প দিনের মধ্যেই বাজারে আসতে চলেছে এই ভ্যাক্সিন । বাওভেট আপাতত বছরে 500 মিলিয়ন বায়োলুম্পিভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারে ।

ভারতের জিডিপির ক্ষেত্রে ডেয়ারি শিল্পের বিরাট ভূমিকা আছে । বহু মানুষ দুধ এবং দুগ্ধজাত বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করে সংসার চালান । এলএসডি রোধে এই ভ্যাক্সিন দেশেক সর্বত্র প্রভাব ফেলবে তাতে কোনও সংশয় নেই ।

(ডিসক্লেইমার: এই প্রতিবেদনের সাধারণ তথ্য দেওয়ার জন্য লেখা হয়েছে । চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া এই প্রতিবেদনের লক্ষ্য নয় । পেশাদার চিকিৎসক যেভাবে পরামর্শ দিতে পারেন বা রোগ নির্ণয় করতে পারেন এই প্রতিবেদন তার বিকল্প নয় । চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার যে কোনও প্রশ্ন থাকলে সবসময় আপনার চিকিত্সক বা কোনও স্বাস্থ্য-সংগঠনের পরামর্শ নিন ।)

আরও পড়ুন:- গাছটির ‘অবদান’ কী, জানাবে পরিবেশবান্ধব কলেজ, কিভাবে ? জানতে বিস্তারিত পড়ুন

আরও পড়ুন:-ট্রাম্পের ২৫% ট্যারিফের গুঁতোয় তলানিতে ঠেকল টাকার দাম, জানুন বিস্তারিত

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন