Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ‘কোথায় বাড়ি। কত দিন ধরে ওখানে আছেন? নথিপত্র দেখি… কী কী এনেছেন?’ –– পান–বিড়ির দোকানের এক পাশে দাঁড়িয়ে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন করছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত এক পুলিশ অফিসার। আবেদনকারীও গড়গড় করে চা–সিগারেট সহযোগে ‘ইন্টারভিউ’ দিচ্ছিলেন। শেষে ‘জল–পানি’ বাবদ ২০০০ টাকা দিয়ে দক্ষিণ শহরতলির ওই বাসিন্দা ‘পরীক্ষায়’ পাস করেন। এই ঘটনার মাস খানেকের মধ্যেই তিনি হাতে পেয়ে যান পাসপোর্ট!
অথচ, এমনটা হওয়ার কথা নয়। আবেদনকারী আদৌ ওই ঠিকানায় থাকেন কি না, থাকলে, ভারতীয় কি না, তা সরেজমিনে যাচাই করার কথা পুলিশের। এই ভেরিফিকেশনের ধাপগুলিতে নানা ফাঁকফোকড় থেকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। সেই ফাঁক গলে কখনও বাংলাদেশি নাগরিকরা পেয়ে যাচ্ছেন ভারতীয় পাসপোর্ট, আবার কখনও মোটা টাকার বিনিময়ে ভুয়ো নথিতে এ দেশের বাসিন্দারাও পাসপোর্টের অধিকারী হয়ে উঠছেন।
আরো পড়ুন:– প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর কোন কাজকে সেরা মনে করতেন মনমোহন? কী নিয়ে ছিল আক্ষেপ?
সব ক্ষেত্রে এমনটা হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে, একজন পুলিশ অফিসারের গাফিলতির কারণে যদি কোনও জঙ্গি ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকেন, পরে বড়সড় নাশকতার নেপথ্য সেই জঙ্গির যোগাযোগ পাওয়া যায়, তা হলে সেই দায়িত্ব বর্তাবে কার ঘাড়ে?
ইতিমধ্যেই ভুয়ো পাসপোর্ট মামলায় এই ভেরিফিকেশন পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আলিপুর আদালতের বিচারক সৌভিক দে। তিনি কলকাতা পুলিশের তদন্ত পদ্ধতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে জানতে চেয়েছেন, কে বা কারা কী ভাবে এই ভেরিফিকেশনের দায়িত্বে ছিলেন? তাঁদের বিরুদ্ধে কী আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
পুলিশ সূত্রের খবর, পাসপোর্ট তৈরিতে জন্মের সংশাপত্র, মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড এবং সার্টিফিকেটের প্রয়োজন পড়ে। তা ঠিক থাকলে যে কেউ পাসপোর্ট পেয়ে যেতে পারেন। অভিযোগ, উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত লাগোয়া কড়েয়া কদম্বগাছি গ্রাম পঞ্চায়েত, গঙ্গারামপুর, বসিরহাট এবং বারাসত পুরসভার নাম ব্যবহার করে ভুয়ো বার্থ সার্টিফিকেট তৈরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ডের স্কুল সার্টিফিকেট এবং অ্যাডমিট কার্ড ব্যবহার করা হয়েছিল পাসপোর্টের জন্য। তা–ও ছিল ভুয়ো। তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন, ভুয়ো নথিতে পাসপোর্ট তৈরিতে সরকারি কোনও আধিকারিক বা কর্মী যুক্ত রয়েছেন কি না। আদালতের উষ্মা প্রকাশের পরে ভেরিফেকিশনের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন:– রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষায় আসছে আমূল বদল, সিলেবাস-পরীক্ষা পদ্ধতিতে কী কী পরিবর্তন হবে? জেনে নিন
পাসপোর্টের ফর্ম ফিলাপ থেকে এই ক্রাইমের শুরু হয় বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। বিশেষ করে গ্রামগঞ্জের মানুষ যাঁরা, ফর্ম ফিলাপের ঝক্কির মধ্যে পড়তে চান না, তাঁরা এজেন্টদের কাছে দরবার করেন। এদের মধ্যে আবার দু’টি ভাগ। একদল এজেন্ট সরকারি ফি–র পরে ৫০০ বা হাজার টাকা নিয়ে ফর্ম ফিলাপ করে দেন। এর পর, পরবর্তী ধাপে আবেদনকারীকে নথিপত্র জমা দিয়ে পাসপোর্ট পেতে হয়। দ্বিতীয় দলে থাকা এজেন্টরা ‘পাসপোর্ট সিন্ডিকেট’–এর সদস্য। তাঁরা ভুয়ো নথির মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরি করে দেন।
তদন্তে জানা গিয়েছে, এ রাজ্যের বাসিন্দা হলে, যাঁর কাছে যেমন ইচ্ছে দাবি করা হয় পাসপোর্টের জন্য। ২০–৩০ হাজার পর্যন্ত চাওয়া হয়। বাংলাদেশি হলে ১ থেকে দেড় লাখ পর্যন্তও নেওয়া হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এ সব ধাপ পেরোতে হলে পুলিশ ভেরিফিকেশনের ‘কড়া পরীক্ষা’য় পাস করতে হয়। সেখানেই গোড়ায় গলদের বিষয়টি সামনে এসেছে। অসাধু এজেন্টদের সঙ্গে পুলিশ অফিসারদের একাংশের যোগসাজশ গড়ে ওঠে বলে অভিযোগ। তাঁদের মাধ্যমেই কখনও পান–বিড়ির দোকান, কখনও থানায় ডেকেও ভেরিফিকেশন হচ্ছে।