Bangla News Dunia, দীনেশ :- অতীতে পণ্য কেনা বা বিক্রি করার জন্য কোন প্রকার মুদ্রা ছিল না। একটি পণ্যের বিনিময়ে আরেক পণ্য পাওয়া যেত। কিন্তু এরপর এলো মুদ্রা যা কাগজের তৈরি নোট অথবা ধাতুর তয়ের মুদ্রা হতে পারে। এবং আরো একটি মুদ্রা রয়েছে যা সম্পূর্ণ ডিজিটাল সেটা হল ক্রিপটো কারেন্সি।
ক্রিপ্টো কারেন্সি নিয়ে সকলের মনে উদ্বেগ রয়েছে যে ক্রিপ্টোকারেন্সি কি? ক্রিপ্টোকারেন্সি কিভাবে কাজ করে? ক্রিপ্টোকারেন্সির সুবিধা ও অসুবিধা? ক্রিপ্টোকারেন্সি কি বৈধ? ক্রিপ্টো মার্কেট সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য জানার জন্য পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কী ?(Cryptocurrency In Bengali)
ক্রিপ্টোকারেন্সি হল একটি Private Digital Currency। ক্রিপ্টোকারেন্সি নতুন একটা লেনদেনের উপায়। বলা যেতে পারে ক্রিপ্টোকারেন্সি হল একপ্রকার Digital Currency Of Cash। Crypto শব্দ টির অর্থ হল Secret বা গোপন এবং Currency শব্দের মানে হল অর্থ যার বিনিময়ে বিভিন্ন পণ্যের আগান প্রদান করা হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি এর অর্থ হলো গোপনঅর্থ। ক্রিপ্টোকারেন্সি হল একটি Encrypted Currency যেখানে লেনদেন সম্পূর্ণ গোপন থাকে এবং এর উপরে কোনো তৃতীয় ব্যক্তির হাত থাকে না। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সরকারের হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকছে না ।
আরো পড়ুন :- মোদির প্রশংসায় পঞ্চমুখ পুতিন, দিলেন বড় আশ্বাস
ক্রিপটোকারেন্সির ইতিহাস (History Of Cryptocurrency)
ক্রিপটোকারেন্সি হল অনলাইন কারেন্সি যাকে আপনি হাত দিয়ে ছুঁতে পারবেন না, কিন্তু যার সাহায্যে আপনি অনলাইন লেনদেন করতে পারবেন।
১৯৮৩ সালে এই ক্রিপটোকারেন্সি বা গুপ্ত মুদ্রা সূচনা হয়েছিল। ডেবিড চৌম নামক মার্কিন গুপ্ত লেখক ক্রিপ্টোকারেন্সির সূচনা করেছিলেন। যাকে আমরা ক্রিপটোকারেন্সি বলে চিনি তাকে ডেভিড চৌম নাম দিয়েছিলেন ক্যাশ। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এই অদৃশ্য ক্রিপটোকারেন্সি নিয়ে কাজ করেছেন ডেভিড চৌম। সে সময় নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছেন ডেভিড চৌম।
ডেভিড চৌমের সেই নতুন প্রচেষ্টাকে প্রাণ দিয়েছিল Satoshi Nakamoto। যিনি এই কারেন্সিকে অনেকটা সফল করতে পেরেছিলেন এবং তিনি বিটকয়েনের আবিষ্কার করেছিলেন। সেই সময় থেকে ক্রিপটোকারেন্সির প্রচলন শুরু হয় এবং দিনের পর দিন ক্রিপটোকারেন্সির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
ক্রিপটোকারেন্সির মূল্য
ক্রিপটোকারেন্সি নোট বা কয়েনের মতো ছাপা কোনো আক্ষরিক সংখ্যা নেই কিন্তু ক্রিপটোকারেন্সির একটি নির্দিষ্ট মূল্য বা ভ্যালু আছে। এটি ডিজিট আকারে অনলাইনে থাকায় একে ডিজিটাল মানি বা ভার্চুয়াল মানি বা ইলেক্ট্রনিক মানি বলা হয়। ক্রিপটোকারেন্সির মধ্য দিয়ে আপনি পণ্য কেনাবেচা করতে পারবেন কিন্তু এটিকে ব্যাংকে বা লকার বা আপনি আপনার পকেটে নিয়ে ঘুরতে পারবেন না।
ক্রিপটো কারেন্সির একটি ভ্যালু রয়েছে যা অন্যান্য কারেন্সি এর ভ্যালুর থেকে কয়েক হাজারগুণ বেশি আবার কম হতেও পারে। এই নির্ভর করে তার জনপ্রিয়তার উপর। ক্রিপটো কারেন্সি এর ভ্যালু অপরিবর্তিত থাকে না, এর ভ্যালু সর্বদা উঠানামা করে। যার ফলে একদিনে ক্রিপটোকারেন্সির ভ্যালু নানান রকমের হতে পারে।
আরো পড়ুন :- আর অল্প সময়ের অপেক্ষা, রাতের আকাশে দেখা যাবে এক মহাজাগতিক বিস্ময়, আরও জানতে পড়ুন…..
ক্রিপটোকারেন্সি কিভাবে কাজ করে
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্লকচেইন এর মাধ্যমে কাজ করে। ব্লকচেইন পদ্ধতির সূচনা হয় ১৯৮০ সালে। চেইন কথার অর্থ হলো শিকল। সহজ ভাষায় বললে ব্লকচেইন হল একটি চেনের মধ্যে অনেকগুলি ব্লকের সংযুক্ত অবস্থা। যখন ক্রিপটোকারেন্সিতে লেনদেন করা হয় তখন লেনদেনের সমস্ত তথ্য রেকর্ড করে রাখা হয় অর্থাৎ একটি ব্লকে লেনদেনের তথ্য নিরাপত্তার সহিত রাখা হয়।
ব্লাকগুলোকে নিরাপত্তা প্রদান করে খনি শ্রমিকরা। একটি শক্তিশালী কম্পিউটার দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয় যাকে কম্পিউটার মাইনিং বলা হয়। যারা কম্পিউটার মাইনিং করে তাদের মাইনার বলা হয়। ক্রিপটোকারেন্সিগুলি হ্যাস ফাংশন এবং ডিজিটাল স্বাক্ষর এর মত ক্রিপ্টোগ্রাফিকের মাধ্যমে কাজ করে।
ক্রিপটোকারেন্সির কাজ কি ?
আপনার কাছে যদি ক্রিপ্টো মুদ্রা থেকে থাকে সেগুলো দিয়ে আপনি কি কি করতে পারবেন চলুন দেখে নেওয়া যাক –
- ক্রিপ্টো মুদ্রা দিয়ে আপনি পন্য কেনাকাটা করতে পারবেন।
- ক্রিপ্টো মুদ্রা দিয়ে আপনি অনলাইনে লেনদেন করতে পারবেন কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই আইনগত অনুমতি নিতে হবে।
- ক্রিপ্টো কারেন্সিকে আপনি দেশ-বিদেশে আদান প্রদান করতে পারবেন।
ক্রিপটোকারেন্সির সুবিধা
বর্তমান দিনে ক্রিপটোকারেন্সির ব্যবহার বেড়েই চলেছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করার আগে জেনে নেওয়া যাক ক্রিপ্টোকারেন্সির সুবিধা গুলি –
- আমরা যেরকম নোট ব্যবহার করি ২০০০ টাকার নোট , 500 টাকার নোট সেক্ষেত্রে যান নোট বা ছেঁড়া নোট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি ডিজিটাল মুদ্রা এক্ষেত্রে জাল বা বিকৃত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
- আপনি যদি হঠাৎ দ্রুত দূরবর্তী স্থানে কাউকে টাকা পাঠাতে চান সেক্ষেত্রে ক্রিপটোকারেন্সি হল অন্যতম মাধ্যম। কারণ ক্রিপটোকারেন্সি হল ডিজিটাল মুদ্রা, ডিজিটাল মুদ্রা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে বেশি সময় নেয় না।
- যেহেতু ক্রিপ্টোকারেন্সির কোনো কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান নেই তাই ক্রিপ্টোকারেন্সির কোনো নির্দিষ্ট শর্তাবলী বা নির্দেশাবলী নেই।
- টাকা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে কিছু টাকা কেটে নেওয়া হয়ে থাকে কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে কোন চার্জ কাটা হয় না।
- ক্রিপ্টো মুদ্রা গুলিকে আপনি ATM Card এর মাধ্যমে টাকায় রূপান্তরিত করতে পারবেন।
- ক্রিপ্টোকারেন্সি কোনো সরকার বা রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না।
- ক্রিপ্টো কারেন্সি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খুব ভালো বিকল্প কারণ এর মূল্য কখনো অনেকটা বেড়ে যায়।
- ক্রিপটোকারেন্সির ক্ষেত্রে কোন ব্যাংকের প্রয়োজন হয় না।
ক্রিপ্টোকারেন্সির অসুবিধা
সবকিছুরই দুটি দিক থাকে। ক্রিপটোকারেন্সির যেরকম সুবিধা রয়েছে সেরকম এর অসুবিধাও রয়েছে। আসুন ক্রিপ্টোকারেন্সির অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক –
- ক্রিপ্টোকারেন্সি কোন সরকার বা রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না । অর্থাৎ ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর কারো নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। যার ফলে ক্রিপটো কারেন্সির মূল্য প্রবলভাবে উঠা নামা করে।
- ক্রিপ্টোকারেন্সি হল একটি ডিজিটাল মুদ্রা, তাই এতে হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- ক্রিপ্টোকারেন্সির কোন ফিজিক্যালি অস্তিত্ব নেই।
- ক্রিপ্টোকারেন্সি একবার স্থানান্তরিত হয়ে গেলে তা আর পুনরুদ্ধার করা অসম্ভব।
- ক্রিপটোকারেন্সির ব্যবহার সব দেশে বৈধ নয়।
- ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার সীমিত।
- ক্রিপ্টোকারেন্সি অবৈধ কার্যকলাপ চালানোর আদর্শ পন্থা হতে পারে।
জনপ্রিয় কিছু ক্রিপ্টোকারেন্সি
বর্তমান সময়ে যেসব ক্রিপ্টোকারেন্সি খুবই জনপ্রিয় সেগুলি হলো –
S.N | জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি |
---|---|
১) | Bitcoin |
২) | Ethereum |
৩) | Ripple |
৪) | Tether |
৫) | Litecoin |
৬) | Monero |
৭) | Cosmos |
৮) | Peercoin |
৯) | Bit Torrent |
১০ | Name Coin |
১১) | USD Coin |
১২) | Stellar |
১৩) | Polkadot |
১৪) | Doge Coin |
১৫) | Bitcoin Cash |
১৬) | Binance Coin |
১৭) | Cardano |
১৮) | TRON |
১৯) | Ethereum Classic |
ক্রিপটোকারেন্সির প্রকারভেদ
সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি হল বিটকয়েন কিন্তু বিটকয়েন ছাড়া আরো অনেক ক্রিপটোকারেন্সি রয়েছে। কিছু জনপ্রিয় শীর্ষ ক্রিপ্টোকারেন্সি হল –
বিটকয়েন (Bitcoin)
বিটকয়েন ২০০৯ সালে Satoshi Nakamoto শুরু করেছিলেন। যা ছিল বিশ্বের প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সি। এটি সব থেকে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে। বর্তমানে সবথেকে বেশি ব্যয়বহুল ডিজিটাল মুদ্রা হল বিটকয়েন এর মূল্য প্রায় আকাশছোঁয়া।
ইথেরিয়াম (Ethereum)
২০১৫ সালে প্রথম ইথেরিয়াম শুরু হয়েছিল। ইথেরিয়াম বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক। আগে ইথেরিয়াম এর মূল্য খুব বেশি ছিল না কিন্তু বর্তমানে একটি ইথেরিয়ামের মূল্য প্রায় ৩ হাজার মার্কিন ডলারের সমান।
ডগিকোয়েন (Doge Coin)
কয়েনে কুকুরের ছবি আছে বলে এর নাম ডগিকয়েন। এর উপর কুকুরের ছবি থাকায় এটি সকলের কাছে একটি মিম এ পরিণত হয় এর ফলে টেসলা কোম্পানির মালিক ইলন মাস্ক এর সহায়তায় এর মূল্য বৃদ্ধি পায়।
লাইট কয়েন (Light Coin)
২০১১ সালের চার্লি লি প্রথম লাইট কয়েন চালু করেন। যিনি গুগলের ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেও কাজ করেছিলেন। লাইট কয়েন সবচেয়ে দ্রুততম লেনদেন এর জন্য পরিচিত ছিল।
কার্ডানো (Cardano)
অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির গুলোর মতই কার্ডানো খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করে। একটি কার্ডানোর মূল্য প্রায় ৬৯ মার্কিন ডলারের সমান। এর মূল্য ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
বিনান্স কয়েন (Binance Coin)
বর্তমানে খুব বেশি জনপ্রিয়তা অর্জনকারী ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলির মধ্যে অন্যতম হলো বিনান্স কয়েন। এই কয়েন গুলির মাধ্যমে ভ্রমণের জন্য ট্রেন এয়ারপ্লেন বুক সহ ট্রৈডিং করতে পারবেন।
নেম কয়েন (Name Coin)
নেম কয়েন মূলত বিটকয়েন এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। নেম কয়েনের ডোমেন নেম হলো সেন্সরশীপ প্রতিরোধ ডোমেন নেম .bit। যার উপর ICANN এর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।
রিপল (Ripple)
এই ক্রিপ্টোকারেন্সিটি ২০১২ সালে আমেরিকান কোম্পানি দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। এটি একটি ক্রিপটোকারেন্সির পাশাপাশি ক্রিপটো এক্সচেঞ্জও।
ভারতে কি ক্রিপ্টোকারেন্সি বৈধ
আগে ভারতে ক্রিপ্টোকারেন্সি বৈধ ছিল না কিন্তু ২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্ট ক্রিপ্টোকারেন্সিকে বৈধতা প্রদান করে। এরপর থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ বৈধ স্বীকৃত হয়।
ভারতে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার
ভারত সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সিকে বৈধতা প্রদানের জন্য নানাবিধ প্রচেষ্টা করেন ।
FAQ
ভারতে কি ক্রিপ্টোকারেন্সি বৈধ ?
২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্ট ক্রিপ্টোকারেন্সিকে বৈধতা প্রদান করে।
ভারতের ক্রিপ্টোকারেন্সি কোনটি?
ভারতের নিজস্ব কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সি নেই।
বিটকয়েন কি বাংলাদেশে বৈধ ?
না! বিটকয়েন বাংলাদেশে বৈধ নয়।