জান বাঁচাতে কাঁটাতার টপকে এপারে বালিকা, কিভাবে? পড়ুন রোহমর্শক কাহিনী

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ‘জি লে আপনি জিন্দেগী’ — বুকে পাথর চেপে এই ‘সিমরন’–এর বাবা বাংলায় হয়তো এমন কিছুই বলেছিলেন।

তারপরে বাংলাদেশের পঞ্চগড় থেকে এক পারিবারিক বন্ধুর হাত শক্ত করে চেপে অন্ধকার পথ পেরিয়ে এসেছিল নাবালিকা। পিছনে তাড়া করে বেড়িয়েছিল শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যাওয়া হুমকি, ‘তুলে নিয়ে যাব ওকে’। অপরাধ? পদ্মাতীরে এক সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারে হেসে–খেলে বেড়ে উঠেছিল বছর চোদ্দর এই সিমরন। চোখের সামনে থেকে মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ‘অর্থ’ বুঝতে সময় লাগেনি ইসকনের সমর্থক বাবা–মায়ের। তার চেয়ে কাঁটাতারের সীমান্ত পেরিয়ে যদি প্রাণে বেঁচে যায় মেয়ে! কে জানে আর কোনওদিন দেখা হবে কি না! তবু…….

হুমকিটা নেমে এসেছিল মঙ্গলবার দুপুরে। বাবা–মা ঠিক করেন, যেনতেন প্রকারে মেয়েকে ভারতে পাঠিয়ে দিতেই হবে। তাতে যদি অন্তত মেয়েটার প্রাণ বাঁচে! সে দিনই গোপনে ভাঙাচোরা রাস্তা আর আলপথ মিলিয়ে ১১ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে আসে সিমরন। পিছনে পড়ে থাকে বাবা–মায়ের আকুল কান্নার শব্দ। এক পারিবারিক বন্ধু এ পার সীমান্তের কাছাকাছি এসে খানিকটা দূর থেকে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেন — ওই তো কাঁটাতারে ঘেরা সীমান্ত। নাবালিকাকে ছেড়ে মিলিয়ে যান রাতের অন্ধকারে। আর তারপর?

গুটি গুটি পায়ে সন্তর্পনে কাঁটাতারের কাছে এসে দাঁড়ায় মেয়ে। রাত বাড়তে থাকে। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে তার হৃদস্পন্দন। তারা–ভরা আকাশের নীচে একা মেয়েটি সুযোগের অপেক্ষায় ঘাপটি মেরে বসে থাকে কাঁটাতারের ও পারে। বাঁচতে হবে তাকে। পিছনের পথে অপেক্ষা করছে মৃত্যুর হাতছানি। সামনে রাতের অন্ধকার চিরে ভেসে আসছে ভারী বুটের শব্দ। গভীর রাতে সেই শব্দ কিছুটা স্তিমিত হতেই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) চোখে ধুলো দিয়ে সীমান্তের কাঁটাতার টপকে সে ঢুকে পড়ে এ পারে। কাজটা সহজ ছিল না।

আরো পড়ুন:- খাচ্ছি খাবার, গিলছি ‘বিষ’! শহরের খাবারের পুর–রিপোর্ট, কি জানা গেলো? 

কিন্তু, সে জানত, কাঁটাতারের ও পারে অন্তত মৃত্যুর শীতলতা নেই। জানত, ভারতে একবার গোপনে ঢুকে পড়তে পারলে একে–ওকে জিজ্ঞেস করে সে ঠিক পৌঁছে যাবে জলপাইগুড়ির বেলাকোবায়। সেখানে আত্মীয়ের বাড়ি। বাবা ফোন করে দিয়েছেন তাঁকে। কিন্তু, বিজিবি–র চোখে ধুলো দিতে পারলেও কাঁটাতার টপকাতেই এ পারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) নজরে পড়ে যায় নাবালিকা। উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া ব্লকের ফতেপুর বিওপি থেকে ওই বাংলাদেশি নাবালিকাকে মঙ্গলবার রাতে উদ্ধার করে বিএসএফ। চোপড়া থানায় বসে ভারতের ভোর দেখে মেয়ে। বুধবার জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড তাকে কোচবিহারের একটি হোমে পাঠিয়ে দেয়।

বাবা মেডিক্যাল রিপ্রেজ়েন্টেটিভ। তিনি অসুস্থ। মেয়েকে সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দিতে প্রতিবেশীর সাহায্য চেয়েছিলেন। তিনিই সীমান্ত থেকে কিছুটা দূরে নাবালিকাকে ছেড়ে দেন। ধরা পড়ার পরে সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও পুলিশ বেলাকোবায় তার আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। রাতেই বেলাকোবা থেকে ওই নাবালিকার আত্মীয় চোপড়া থানায় পৌঁছন।

তিনি বুধবার বলেন, ‘মেয়েটি আমার পরিচিত। বাংলাদেশের একটি স্কুলে পড়াশোনা করে। ওর পরিবার ইসকনের ভক্ত। বাবা–মার একমাত্র মেয়ে।’ ক্ষোভ উগরে দিয়ে তাঁর সংযোজন, ‘বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের মাত্রা মোটেও কমেনি। শুধুমাত্র ইসকনের ভক্ত হওয়ায় ওদের লাগাতার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। আমার আত্মীয় মেয়েকে লুকিয়ে ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। আমাকে ফোন করে জানান। তবে কোথায়, কবে তাকে পাঠানো হবে, তা নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়নি। রাতে চোপড়া থানার ফোন পাই।’

বাবা–মাকে ছেড়ে এই ক’দিন আগেই পশ্চিমবঙ্গে এসেছে বাংলাদেশের এক কলেজ পড়ুয়া। তার তবু স্টুডেন্ট ভিসা ছিল। তাই রক্ষে। এ পারে এসে একটি বেসরকারি কলেজে ভর্তিও হয়েছে ওই তরুণী। কিন্তু সিমরনের তো তা–ও নেই। কাঁটাতার টপকে ভারতে ঢুকতে গিয়ে সম্প্রতি ধরা পড়েছেন কলেজ পড়ুয়া জীবন বর্মন। তিনিও পালিয়ে এসে পঞ্চগড়ের জগদ্দল সীমান্তে এসে করতোয়া নদীতে থাকা হিউম পাইপের মধ্যে দিয়ে শুখানি সীমান্ত হয়ে জলপাইগুড়িতে ঢোকেন জীবন। মঙ্গলবার তিনিও ধরা পড়ে যান বিএসএফের হাতে। বুধবার জলপাইগুড়ি জেলা আদালতের বাইরে

সংবাদমাধ্যমকে জীবন বলেন, ‘বেছে বেছে হিন্দু পরিবারগুলিকে টার্গেট করা হচ্ছে। আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হবে।’ রংপুর জেলার অহনানগর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। বাংলার প্রথম বর্ষের ছাত্র। গত মাসে সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস গ্রেপ্তারের পরে তাঁর মুক্তির দাবিতে পথে নেমেছিলেন জীবন। তারপর থেকেই বাড়তে থাকে অত্যাচার।

আরো পড়ুন:- মাশরুমের উপকারিতা জুরি মেলা ভার ! কি জানালেন পুষ্টিবিদ?

 

 

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন