Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- উত্তরাখণ্ডে সোমবার থেকে কার্যকর হলো অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (Uniform Civil Code Or UCC)। স্বাধীন ভারতে এই রাজ্যেই প্রথম এই বিধি চালু হলো। মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামি জানিয়েছেন, UCC লাগু করার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত প্রস্তুতি হয়ে গিয়েছে। নিয়মবিধি জারির ক্ষেত্রে সবরকম অনুমোদন ইতিমধ্যেই মিলেছে। এর সঙ্গে জড়িত আধিকারিকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল BJP। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জনা প্রকাশ দেশাইয়ের নেতৃত্বে ওই বছরের ২৭ মে UCC-র খসড়া তৈরির জন্য এই প্যানেল গঠন করা হয়েছিল। ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দেশাই কমিটির সেই খসড়া রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়। এর পর উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় UCC বিল পাস হয়। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাতে সম্মতি দেন।
কী এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি?
সব ধর্মের মানুষের জন্য বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, জমি-সম্পত্তি এবং উত্তরাধিকার সংক্রান্ত অভিন্ন আইন চালু করার কথা বলা হয়েছে এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে। ধর্ম নির্বিশেষে পুরুষদের বহুবিবাহ বন্ধ এবং ‘লিভ ইন’ সম্পর্ক নথিভুক্ত করাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। যদি কোনও নারী-পুরুষ ‘লিভ ইন’ করতে চান, তবে অবশ্যই পুলিশ বা জেলা আধিকারিকদের অনুমতি নিতে হবে। আর যদি তাঁদের বয়স ২১ বছরের নীচে হয়, তবে বাবা-মায়ের সম্মতির প্রয়োজন। তা না হলে দু’জনেরই ২৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং তিন মাসের জেল হতে পারে। এই ধরনের সম্পর্কে থাকাকালীন সন্তানের জন্ম হলে সে বাবা ও মা, উভয়ের উত্তরাধিকার লাভ করবে।
ধর্ম নির্বিশেষে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর করা হয়েছে। মুসলিম-সহ সব ধর্মের নাগরিকদের জন্য বিয়ে রেজিস্ট্রি বা নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক হয়েছে। বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রেও রাজ্যের নাগরিকদের জন্য একই নিয়ম।
নয়া আইনে ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেক নারীর ও পুরুষের সমান অধিকার হবে। ধর্মীয় বিধানের জোরে নারীর অধিকার খর্ব করা যাবে না। নারী ও পুরুষ একাধিক বিয়ে এবং একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারবে না।
তবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আদিবাসীদের ক্ষেত্রে লাগু হবে না। জন্ম, বিয়ে, উত্তরাধিকার, নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে আদিবাসী সমাজের নিজস্ব বিধান চালু আছে। সেগুলি বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
বিতর্ক
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে সংবিধান প্রণয়নের কাল থেকেই বিতর্ক চলছে। উত্তরাখণ্ডের সদ্য প্রণীত বিধি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা ভিন্ন প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, যে বিধির পরিধি থেকে তফসিলি উপজাতিদের এবং ‘অবিভক্ত হিন্দু পরিবার’কে সরিয়ে রাখা হয়েছে সেটা কতটা ‘অভিন্ন’ দেওয়ানি বিধি, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
এ ছাড়াও সমাজের একাংশ মনে করছে, উত্তরাখণ্ডের অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লিভ ইন সম্পর্কের মতো একান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্কের আইনি নিশ্চয়তাকে নাকচ করছে। যা সংবিধান প্রদত্ত নাগরিকদের গোপনীয়তা, আত্মমর্যাদা আর ব্যক্তিগত পছন্দের অধিকারের পরিপন্থী।
উত্তরাখণ্ড সরকারের দাবি, অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে নারীর অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু লিভ-ইন সম্পর্ককে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় এনে আইন তৈরি করলে তা কোনও ভাবে নারীকে সুরক্ষা দিতে পারবে কি? উঠছে প্রশ্ন। সুপ্রিম কোর্ট অনেক আগেই লিভ-ইন সম্পর্ককে বৈধতা দিয়েছে। সেখানে উত্তরাখণ্ড কী ভাবে তার রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করে? এ প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ।
বিরোধীদের দাবি, স্বীকৃত অধিকারগুলি নিয়ে দেশের কষ্টার্জিত সংবিধানকেই অস্বীকার করতে চাইছে BJP।