দেশের ব্যাঙ্কগুলির ভাঁড়ারে নগদের জোগান তলানিতে। কেন এমন অবস্থা ?

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- দেশের ব্যাঙ্কগুলির ভাঁড়ারে নগদের জোগান তলানিতে। ব্লুমবার্গ ইকোনমিক ইনডেক্স-এর পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় নগদের জোগান-ঘাটতি গত ছয় মাসের সর্বোচ্চ স্তর ১.৫ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছে গিয়েছে, যে পরিস্থিতি ২৪ জুনের পর আর কখনও এতটা চড়েনি।

যার জেরে ‘ইন্টারব্যাঙ্ক ওয়েটেড অ্যাভারেজ কল-রেট’, যা দিয়ে এক দিনের ঋণের খরচ পরিমাপ করা হয়, তা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বেঞ্চমার্ক রেপো রেট ৬.৫০% এর থেকেও ৩৫ বেসিস পয়েন্ট (০.৩৫%) বেড়ে রয়েছে। নগদের টানাটানিতে এই ‘চড়া’ সুদে ব্যাঙ্কগুলি যখন নিজেদের মধ্যেই ‘ওভারনাইট’ লেনদেন সারতে বাধ্য হচ্ছে, সেখানে আমজনতাকে ‘লোন’ দেওয়ার মতো যথেষ্ট টাকা যে তাদের কাছে থাকবে না, তা সহজেই অনুমেয়।

এর জেরে আমজনতা এমনকী কর্পোরেটদের পক্ষেও আগামী দিনে ‘সহজে’ ঋণ পাওয়া কষ্টকর হবে। ঋণের চাহিদা খুব বেশি হলে উল্টে সুদের হার বাড়াতে পারে ব্যাঙ্কগুলি। যার ফলে বেশি মাসিক কিস্তি গুনতে হতে পারে ঋণগ্রহীতাকে।

আমজনতা থেকে কর্পোরেট, প্রত্যেককে আরও বেশি করে ঋণ নেওয়ার সুযোগ করে দিতে সম্প্রতি সুদের হার কমানোর পক্ষে জোরদার সওয়াল করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি নির্ধারক কমিটি দীর্ঘ সময় ধরে সুদের হার না কমানোর কারণে অর্থনীতির গতি শ্লথ হচ্ছে বলে সরাসরি পুরো দায় শীর্ষ ব্যাঙ্কের উপরে চাপিয়ে দিয়েছিলেন কেন্দ্রের দুই মন্ত্রী।

যে প্রস্তাবে অবশ্য কর্ণপাত করেননি সদ্য প্রাক্তন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। শীর্ষ ব্যাঙ্ক দিল্লির দাবি মেনে নিয়ে চাহিদা মতো সুদের হার কমালেও সেই পরিস্থিতি যে খুব একটা পাল্টাত না, সম্প্রতি প্রকাশিত এক তথ্য থেকে তা অবশ্য পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।

ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় নগদের জোগান-ঘাটতি (লিক্যুইডিটি ডেফিসিট) হিসেব করা হয় দৈনন্দিন শর্ট-টার্ম লেনদেন এবং ব্যবসায়িক দায়বদ্ধতা মেটাতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) থেকে দেশের ব্যাঙ্কগুলি কত টাকা ধার নিচ্ছে তার পরিমাণ থেকে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, অক্টোবর থেকে ডলারের তুলনায় টাকার দরে বড়সড় ওঠানামা ঠেকাতে রাজকোষ থেকে ক্রমাগত ডলার বেচে দিচ্ছেন আরবিআই কর্তৃপক্ষ।

পাশাপাশি, দেশের সংস্থাগুলির তরফে অ্যাডভান্স ট্যাক্স পেমেন্ট অনেকটাই বেড়ে যাওয়ায়, চাপ বেড়েছে ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে। এরই পাশাপাশি দেশের বাণিজ্য ঘাটতির উত্তরোত্তর ‘শ্রীবৃদ্ধি’ এবং টাকার তুলনায় ডলারের বিনিময়-দর সর্বকালীন রেকর্ড ৮৪.৯৩৩৭ টাকায় পৌঁছে যাওয়ায়, অদূর ভবিষ্যতে দেশের ব্যাঙ্কগুলিতে ক্যাশ ডেফিসিট আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন গরিষ্ঠ অংশের বাজার বিশেষজ্ঞরা।

আরো পড়ুন:- দেশি’ এবং ‘বিদেশি’ মুসলমানদের লড়াই, বিস্ফোরক দাবি যোগীর

অবশ্য রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে এই ঘাটতি মেটাতে ক্যাশ-রিজ়ার্ভ রেশিও (সিআরআর) কমানোর পাশাপাশি ভেরিয়েবল রেট রেপো অকশন-এর মাধ্যমে নগদ জোগান বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এত সবের পরেও এর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে না বলেই মনে করছেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ অনুভূতি সহায়।

তাঁর মতে, ‘এইসব পদক্ষেপে হেডলাইন লিক্যুইডিটি নিউট্রাল বা অল্প ঋণাত্মক স্তরে রেখে দেওয়ার বেশি কিছু করতে পারবে না। ঘাটতি মেটাতে হলে ওপেন-মার্কেট বন্ড বিক্রি, আরও ক্যাশ-রিজ়ার্ভ রেশিও কমানো, ফোরেক্স সোয়্যাপ-এর মতো রাস্তায় হাঁটা ছাড়া খুব বেশি পথ খোলান নেই।

প্রতি ত্রৈমাসিকের শেষ মাসে অগ্রিম কর দিয়ে থাকে দেশের শিল্প সংস্থাগুলি। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অগ্রিম কর দেওয়ার জন্য সংস্থাগুলি অ্যাকাউন্ট থেকে নগদ তুলে নেওয়ার কারণে জোগানের উপর চাপ পড়েছে। তা ছাড়া, উৎসবের কারণে বছরের শেষে ব্যাঙ্ক থেকে বিপুল নগদ তুলে নেওয়া এই ঘাটতি বাড়ানোয় অনুঘটকের কাজ করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ গৌর সেনগুপ্ত বলেন, ‘সম্প্রতি সংস্থাগুলি তাদের ত্রৈমাসিক অগ্রিম কর দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা থেকে ১.৪ লক্ষ কোটি টাকা বেরিয়ে গিয়েছে।’

আরো পড়ুন:- সুখবর! ১৯,৯০০ টাকা বেতন, মাধ্যমিক পাশে ভারতীয় পোস্ট অফিসে প্রচুর কর্মী নিয়োগ! শীঘ্রই এভাবে আবেদন করুন

 

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন