Bangla News Dunia, দীনেশ : ‘ঘর ওয়াপসি’র প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর দল আওয়ামি লিগের শীর্ষনেতৃত্ব। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে তাঁদের একাংশ ইতিমধ্যে দাবি করেছেন, ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে তাঁরা দেশে ফিরতে চান। সেই কারণে বাংলাদেশজুড়ে ১ ফেব্রুয়ারি লিফলেট বিলির মধ্যে দিয়ে একাধিক কর্মসূচি নেওয়া শুরু করে দিয়েছে আওয়ামি লিগ। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের একটি প্রথম শ্রেণির দৈনিক দাবি করেছে, কলকাতার ট্যাংরা এলাকায় আওয়ামি লিগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক বসেছিল গত মঙ্গলবার বিকাল তিনটেয়। তারা লিখেছে, হাসিনার দলের সভাপতিমণ্ডলের সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ট্যাংরার যে বাড়িতে বর্তমানে বাস করছেন সেখানেই ওই গোপন বৈঠক বসেছিল।
আরও পড়ুন:– প্রায় 63 বছর 8 বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা নতুন আয়কর বিলে । নতুন আইন সম্পর্কে জেনে নিন
হাসিনার পতনের পর এটিই ছিল দলের ওয়ার্কিং কমিটির প্রথম বৈঠক। আওয়ামি লিগের সভানেত্রী হাসিনাও টেলিফোনে ওই সভায় বিভিন্ন নির্দেশ দিয়েছেন। ফেব্রুয়ারিজুড়ে বাংলাদেশে যে সমস্ত কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলি বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই দৈনিকটির খবর অনুযায়ী, কলকাতা সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে হাসিনার দলের যে সমস্ত সদস্য রয়েছেন, তাঁরা প্রায় সকলেই মঙ্গলবারের বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছিলেন। ৫ অগাস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ভারতের নিরাপদ আশ্রয়েই রয়েছেন হাসিনা। সেই গোপন ডেরা থেকেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে লাগাতার বিষোদগার করছেন তিনি। কখনও বিবৃতি জারি করে আবার কখনও ভয়েস রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে বারবার সুর চড়িয়েছেন হাসিনা। আওয়ামি লিগের ফেব্রুয়ারি কর্মসূচি থেকে স্পষ্ট, ইউনূসের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই আরও জোরদার হবে। তবে ওই লড়াইয়ের মোকাবিলা করতে তৈরি হচ্ছে ইউনূস সরকারও।
আরও পড়ুন:– রাজ্যে PM পোষন স্কিমের অধীনে চাকরি! মাসিক ১৮,০০০ টাকা বেতন, বিস্তারিত দেখে নিন
শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, বাংলাদেশের গর্ব বলে পরিচিত যে অমর একুশে বইমেলা, তাতে শেখ হাসিনার ছবি দেওয়া ডাস্টবিন রেখে অন্তর্বর্তী সরকার তাদের হাসিনা-বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। সেখানে যে ডাস্টবিন রয়েছে তাতে শেখ হাসিনার ছবি রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম তাতে নোংরা ফেলার কয়েকটি ছবি দিয়ে ইতিমধ্যে ফেসবুকে পোস্টও করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফে ওই ডাস্টবিন তৈরি করা হয়েছে। নিজেদের ফেসবুক পেজে সেই ছবিও দিয়েছে তারা। যদিও ডাস্টবিন প্রসঙ্গকে বইমেলার আয়োজক সংস্থা অভিব্যক্তি প্রকাশের স্বাধীনতা বলে দাবি করেছে। এবছর অমর একুশে বইমেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্টল রয়েছে। সেই স্টলের বাইরে ডাস্টবিন রাখা হয়েছে। তাতে হাসিনার বিকৃত করা একটি মুখের ছবি রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর প্রেসসচিব গিয়েছিলেন বইমেলায়। সেখানেই শফিকুল ওই ডাস্টবিনে নোংরা ফেলার ছবি তোলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা তথা বাংলাদেশের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তাফা সরয়ার ফারুকি।
আরও পড়ুন:– টাকা দিয়ে কি সুখ কেনা যায় ? কি বলছে সাম্প্রতিকতম গবেষণা ?
অমর একুশে বইমেলায় বাংলাদেশের বর্তমান নেতৃবৃন্দের এহেন মানসিকতার তীব্র নিন্দা করেছেন নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তিনি সামাজিকমাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমি মনে করি, ঢাকার অমর একুশে বইমেলায় শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে ডাস্টবিন বানানো উচিত হয়নি। এসব করে বইমেলা কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত নিম্নরুচির পরিচয় দিয়েছেন।’ অপরদিকে বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক তথা চলচ্চিত্রকার প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী তথা অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন ফেসবুকে এই ঘটনায় তীব্র বিষোদগার করেছেন। শফিকুল আলমের সমালোচনা করে তিনি লিখেছেন, ‘দায়িত্বশীল পদে থাকা ভদ্রলোক চমৎকার কিছু কথা সহ বইমেলা উদ্বোধনের ছবি দিতে পারতেন। মেলার প্রথম দিনে কোন বই কিনলেন কিংবা কোন কোন বই কেনার আগ্রহ রাখেন, সেটাও সবাইকে জানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি ফেসবুকে নিজের দেওয়ালে ছবি দিয়ে ওঁর ডাস্টবিন মার্কা রুচির পরিচয় দিয়েছেন।’ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে একুশে বইমেলার হাল দেখার জন্য হুমায়ুন আহমেদ যে বেঁচে নেই, সেকথাও বলেছেন শাওন।