Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ঋণ পরিশোধের জন্য প্রথমে তিনি নিজের একটি কিডনি বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট হয়নি ঋণ আদায়কারী এজেন্টরা। এখন টাকা আদায়ের জন্য তাদের নজর পড়েছে তাঁর দুুই মেয়ের কিডনির দিকেও। এক মাইক্রোফিনান্স সংস্থার কর্মীর বিরুদ্ধে গুরুতর হয়রানির অভিযোগ করেছেন গীতা নামে কর্নাটকের রামানগর জেলার মাগাদি শহরে এক মহিলা। ওই মাইক্রোফিনান্স কর্মী দেহাংশ পাচারের অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করেছেন তিনি।
গীতার দুরবস্থা শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। আচমকা মৃত্যু হয়েছিল গীতার স্বামীর। ওই মাইক্রোফিনান্স সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন তিনিই। তাঁর মৃত্যুর পর দুই মেয়ের ভরণপোষণ এবং সাংসারিক অন্যান্। খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন গীতা। সেই সময় আবার মঞ্জুনাথ নামে ওই মাইক্রোফিনান্স সংস্থার এক কর্মী ঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দিতে শুরু করেন।
মঞ্জুনাথ, গীতার পূর্ব পরিচিত। স্বামীর মৃত্যুর পর, তিনি যারপরনাই আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন দেখে মঞ্জুনাথ তাঁকে তাঁর কিডনি বিক্রি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। একটা কিডনি নিয়েই তিনি বেঁচে থাকতে পারবেন বলে গীতাকে আশ্বস্ত করেছিলেন তিনি। তবে প্রথমে কিডনি বিক্রির বিষয়ে রাজি ছিলেন না গীতা।
শেষে বছর তিনেক আগে টাকা জোগারের অন্য কোনও উপায় না পেয়ে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হয়েছিলেন। তাঁকে একটি গাড়িতে করে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যশবন্তপুরের একটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেখানে মঞ্জুনাথ ছাড়াও আরও এক দম্পতি ছিলেন। হাসপাতালের প্রবেশপথে তাঁদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল কিডনির প্রাপকের স্ত্রীর। এর পর, গীতাকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রোপচার করে তাঁর কিডনি বের করে নেওয়া হয়। এর জন্য তাঁকে আড়াই লক্ষ টাকা দিয়েছিল মঞ্জুনাথ।
কিন্তু এতেও গীতার সমস্যার অবসান হয়নি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ফের মঞ্জুনাথ তাঁদের বাড়িতে আসতে শুরু করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন গীতা। ধারের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ফের চাপ দিচ্ছেন তিনি। আর টাকা দিতে পারবেন না বলে জানানোর পর, মঞ্জুনাথ তাঁর মেয়েদের কিডনি বিক্রি করার জন্য চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন গীতা। গীতা বলেছেন, ‘তিনি আমার উপর চিৎকার চেচামেচি করা শুরু করেন। আমায় বলেন মেয়েদের কিডনি বিক্রি করতে। আমি সরাসরি তা প্রত্যাখ্যান করেছি।’
গীতার আরও অভিযোগ, এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মঞ্জুনাথ একটি অঙ্গ পাচারকারী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। গীতার দাবি, তাঁর মতো মাগাদির আরও বেশ কয়েকজন মহিলাকে হুমকি দিয়ে কিডনি বিক্রি করতে বাধ্য করেছেন মঞ্জুনাথ। শান্তাম্মা নামে তাঁদেরই গ্রামের আরেক মহিলাও আর্থিক অনটনের কারণে, সাত বছর আগে মঞ্জুনাথের মাধ্যমে তাঁর কিডনি বিক্রি করেছিলেন।
গীতার অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার প্রাসঙ্গিক ধারায় মঞ্জুনাথের বিরুদ্ধে তোলাবাজির একটি মামলা নথিভুক্ত করেছে পুলিশ। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে মাইক্রোফিনান্স সংস্থাগুলির ঋণ আদায়কারীদের কোনও সংযোগ নেই। তাঁদের আরও দাবি মাগাদি শহরে কোনও কিডনি বা অঙ্গ পাচার চক্রও নেই। যদিও সাম্প্রতিক অতীতে, রামনগর এবং মাগাদিতে অবৈধ কিডনি প্রতিস্থাপনের বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে।