Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- তেতো গাছে মিষ্টি রস! তাও আবার খেজুরের রসের মতো স্বাদ। দেখতে দুধের মতো সাদা। বিশ্বাস হচ্ছে না? বাস্তবে এমনটাই ঘটেছে মালদার ইংরেজবাজার ব্লকের মহদিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হাঁড়িপুকুর এলাকায়। চার দিন ধরে ওই গ্রামের পুকুড় পাড়ে থাকা একশো বছরের পুরোনো একটি নিম গাছ থেকে ক্রমাগত মিষ্টি রস ঝরছে।
গামলা, হাঁড়ি নিয়ে গাছের তলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রস সংগ্রহ করছেন। আবার কেউ বোতল, বালতি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছেন গাছের তলায়। ভিড় বাড়ছে দিন দিন। প্রথম প্রথম নিম গাছের মিষ্টি রস চেখে দেখার সময়ে ভয় লেগেছিল অনেকের। যদি কিছু হয়, এই ভেবে। কারও কোনও শারীরিক অসুবিধে না–হওয়ায় এখন অনেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন রস সংগ্রহে।
গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, নিম গাছের এমন মিষ্টি রস নাকি শরীর সুস্থ রাখছে। কেউ আবার বলছেন, বলবৃদ্ধিও নাকি হয়েছে। তবে এটা বুজরুকি না সত্যি, বুঝতে মাঠে নেমেছেন জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মকর্তারা। তাঁদের দাবি, ‘এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মহদিপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ঐতিহাসিক নিদর্শন গৌড় এলাকার অদূরেই রয়েছে হাঁড়িপুকুর গ্রাম। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গ্রামের পুকুর পাড়ে একটি পূর্ণবয়স্ক নিম গাছ থেকে ক্রমাগত রস ঝরে পড়ছে। খেলাধুলো করার সময়ে কয়েক জন কিশোর কৌতূহলে এই রস মুখে দিয়েই মিষ্টি স্বাদ পেয়েছিল। তারপরে হইচই পড়ে যায় এলাকায়। নিম গাছ তো তেতো। সেই গাছে মিষ্টি রস? তার আবার স্বাদ এমনি যে, কেউ আবার বোতল, গামলায় মজুত করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।
গ্রামের প্রবীণদের বক্তব্য, ‘এই রস খেলে শারীরিক ব্যাধি নির্মূল হচ্ছে। ফলে গ্রামের অনেকেই নিম গাছের মিষ্টি রস খাওয়ার জন্য ভিড় করছেন গাছতলায়।’ হাঁড়িপুকুর গ্রামের বাসিন্দা পিন্টু হাজি, মিরাজুল শেখ বলেন, ‘সাধারণত আমরা দেখে এসেছি এই সময়ে খেজুর গাছ থেকে রস পাওয়া যায়। সেটি খুব সুস্বাদু এবং মিষ্টি হয়। জীবনে কখনও দেখিনি যে নিম গাছ থেকে এ ভাবে মিষ্টি রস পড়ে। নিমের পাতা থেকে ফল এমনকী গাছের ছাল, সবই তো তেতো। তা হলে মিষ্টি রস বের হচ্ছে কী করে?’ বছর পঞ্চাশের আনোয়ার হোসেনের বক্তব্য, ‘রস খেয়ে দেখেছি শরীরে যেন এনার্জি চলে এসেছে। আমাদের মতো অনেকেই তেতো গাছের মিষ্টি রস খেয়েছেন।’
মহদিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল দলের প্রধান জুলি মণ্ডলের কানেও পৌঁছেছে এই খবর। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। গাছটাও দেখে এসেছি। অনেকেই এই গাছের রস খেয়েছেন। শারীরিকভাবে কারও সমস্যা হয়েছে বলে শুনিনি। ব্লক প্রশাসনকে পুরো ঘটনার কথা জানানো হয়েছে।’
মালদা কলেজের উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক সোমনাথ রায় বলেন, ‘এখানে কোনও আলৌকিক অথবা অপ্রাকৃতিক ঘটনা যুক্ত নয়। গাছের রেচনকার্যের সময়ে এক ধরনের রস বের হয়। মানুষের শরীরের কোনও অংশ কাটলে রক্তের সঙ্গে শ্বেতকণিকা যেমন বের হয়ে কাটার জায়গাটি রক্ত বন্ধ করতে সাহায্য করে, ঠিক একইভাবে গাছের কোথাও ক্ষত হলে এক ধরনের রস বেরিয়ে সেই জায়গাটি ভরাট করে। গাছের ক্ষত এই আঠালো রসের মাধ্যমে বন্ধ হয়। এটাও গাছের একটি ইমিউনিটি সিস্টেম।’
আরও পড়ুন:- গাছটির ‘অবদান’ কী, জানাবে পরিবেশবান্ধব কলেজ, কিভাবে ? জানতে বিস্তারিত পড়ুন
আরও পড়ুন:-ট্রাম্পের ২৫% ট্যারিফের গুঁতোয় তলানিতে ঠেকল টাকার দাম, জানুন বিস্তারিত