Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ২০১১ সালে এক সেলিব্রিটি জুটির ব্রেক-আপ বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল। না, হলিউড বা বলিউডের কোনও সেলিব্রিটি দম্পতির কথা হচ্ছে না। সেই সেলিব্রিটি দম্পতি ছিল ‘বিবি’ এবং ‘পোল্ডি’। দু’টি ১১৫ বছর বয়সী ‘গালাপাগোস কচ্ছপ’।
অস্ট্রিয়ার এক চিড়িয়াখানায় একই খাঁচায় প্রায় একশো বছর এক সঙ্গে ঘর করত তারা। এমনিতে গালাপাগোস কচ্ছপরা ‘মোনোগ্যামাস’ নয়। অর্থাৎ, একই পুরুষের সঙ্গে গোটা জীবন কাটিয়ে দেবে কোনও মহিলা কচ্ছপ, তা কখনওই হয় না। জীবন জুড়ে বহু পুরুষের সঙ্গী হয় তারা। তাই গালাপাগোস কচ্ছপ হিসেবে প্রায় একশো বছর ঘর করে এক প্রকার রেকর্ড করেছিল বিবি এবং পোল্ডি। তবে, তাদের মিলনে কোনও সন্তান হয়নি।
তার পর ওই ২০১১ সালে বিবি-র হঠাৎ যে কী হল। একদিন, পোল্ডির খোলসে কামড় বসাল সে। কামড়ে খোলসের কিছুটা অংশ ছিড়ে নিল। রক্ত বেরিয়ে গিয়েছিল। তাও বিবি থামেনি। সমানে তার এত দিনের সঙ্গীকে আক্রমণ করতে থাকে। শেষে চিড়িয়াখানার কর্মীরা পোল্ডিকে অন্য একটি খাঁচায় সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। দু’জনের মধ্যে ফের মিলমিশ করার অনেক চেষ্টা করেছিল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, তারা তখন একে অপরকে আর সহ্যই করতে পারে না। ‘ডিভোর্স’ হয়ে গিয়েছে যে। হ্যাঁ, শুধু মানব সমাজেই নয়, প্রাণী জগতেও ডিভোর্স বা ব্রেকআপ হয়।
বিয়ে না করলেও ‘লিভ টুগেদার’
প্রাণী সমাজে ডিভোর্স বা ব্রেকআপের কথা চমকে দিতে পারে। বিচ্ছেদের আগে এক সঙ্গে থাকতে হবে তো। প্রাণীরা স্বামী-স্ত্রীর মতো একসঙ্গে থাকে? বিজ্ঞান বলছে তারা বিয়ে না করলেও ‘লিভ টুগেদার’ করে। অর্থাৎ, পুরুষ ও মহিলা একসঙ্গে থাকে, তাদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধন তৈরি হয়।
তবে, এর অর্থ এই নয় যে, তারা তাদের পার্টনারের বাইরে অন্য কারও সঙ্গে যৌন মিলনে লিপ্ত হয় না। সেটা তাদের সাংসারিক জীবনে প্রভাব ফেলে না। মানুষের মতো হিংসে করে না তারা। তা হলে কেন তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে? পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে বেশ কিছু কারণ।
আরও পড়ুন:– জানুয়ারি মাসে অতিরিক্ত রেশন দেওয়ার ঘোষণা। কোন রেশন কার্ডে কত কিলো মাল পাবেন? দেখে নিন
বাবার দায়-দায়িত্ব
স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে এক সঙ্গীকে নিয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বেশ কম। মাত্র ১০ শতাংশ স্তন্যপায়ী প্রজাতি সারা জীবন এক সঙ্গীকে নিয়ে কাটায়। বাকিদের ক্ষেত্রে লেগেই থাকে ডিভোর্স-ব্রেকআপ।
বিজ্ঞানীদের মতে, শাবককে বড় করার দায়-দায়িত্বের এই ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা আছে। ম্যাকুয়ারি ইউনিভার্সিটির ইভোলিউশনারি ইকোলজিস্ট, অধ্যাপক সাইমন গ্রিফিথ জানিয়েছেন, অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে শাবকদের বড় করার দায়িত্ব নেয় মহিলারাই। তারাই গর্ভধারণ করে, শিশুদের দুধ খাওয়ায়।
পাশাপাশি, শিশুদের বড় করার ক্ষেত্রে বাবাদের কোনও ভূমিকাই থাকে না। সে হয়তো শাবক যেখানে আছে, সেই জায়গায় কিছুটা পাহারা দেবে। ব্যস, এর বাইরে সন্তানদের জন্য তাদের কিছু করার ক্ষমতা নেই। তাই মহিলারা গর্ভবতী হওয়ার পর বা সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর, তাদের এক সঙ্গে থাকার প্রয়োজনও থাকে না।
পাখিদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ডিমে তা দেওয়া থেকে শুরু করে শাবকদের মুখে খাবার তুলে দেওয়া, প্রায় সব ক্ষেত্রেই মায়ের মতোই সমান ভূমিকা নেয় বাবা। তাই পাখিদের ক্ষেত্রে সারা জীবন এক সঙ্গীকে নিয়ে কাটানোর প্রবণতা বেশি থাকে।
মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির ইভোলিউশনারি ইকোলজিস্ট, অধ্যাপক রাউল মুল্ডার জানিয়েছেন, পাখিদের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশের বেশি প্রজাতি সারা জীবন এক সঙ্গীকে নিয়েই কাটিয়ে দেয়। তবে, জেনেটিক টেস্টিং থেকে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছেন, এক সঙ্গে থাকার ক্ষেত্রে অধিকাংশ পাখি বিশ্বস্ত হলেও, যৌনতার ক্ষেত্রে তারা তাদের সঙ্গীদের প্রতি বিশ্বস্ত নয়। সামাজিক সঙ্গী একটি হলেও, যৌন সঙ্গী থাকতে পারে একাধিক।
পরিবেশ
পাশাপাশি বিজ্ঞানীদের দাবি, বিচ্ছেদের পিছনে পরিবেশের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। গ্রিফিথ জানিয়েছেন, কঠিন পরিবেশে বেঁচে থাকার দায় অনেক পাখিদের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে। উত্তর গোলার্ধে প্রজনন ঋতুর সময়ে আগে থেকে বোঝা যায়। দিনের দৈর্ঘ্যের উপরে তা নির্ভর করে। পরিবেশ পরিস্থিতি তুলনামূলক ভাবে সহজ। তাই ইউরোপীয় পাখিদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার বেশি।
তুলনায় বিচ্ছেদের হার কম অস্ট্রেলীয় পাখিদের মধ্যে। সেখানে প্রজনন জলবায়ুর উপর নির্ভরশীল। অস্ট্রেলিয়ার শুষ্ক অঞ্চলে কোনও কোনও বছর এক ফোঁটাও বৃষ্টি হয় না। ফলে গাছগাছালিও মরে যায়। সেখানকার পাখি ও প্রাণীরা সেই বছরে বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। তাই সেখানে তারা একসঙ্গে থেকে প্রজননের জটিল সিদ্ধান্ত নিতে চায়।
আয়ু
ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. রুইজিয়াও সানের মতে, প্রাণীদের আয়ুর উপরেও তাদের বিচ্ছেদের বিষয়টা নির্ভর করে। দীর্ঘায়ুদের মধ্যে এক সঙ্গীকে নিয়ে সারা জীবন কাটানোর প্রবণতা বেশি।
‘ওয়ান্ডারিং অ্যালবাট্রস’ যেমন। ৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচে এই পাখি। সাধারণত সারা জীবন তারা এক সঙ্গীকে নিয়েই থাকে। তাদের সঙ্গী বাছাই প্রক্রিয়াটাও অনেক দীর্ঘ। অনেক বিচার-বিবেচনার পরই তারা তাদের সঙ্গী বাছাই করে। যদি কোনও কারণে কোনও ওয়ান্ডারিং অ্যালবাট্রসের সঙ্গী মারা যায়, তবে ফের প্রজনন শুরু করার জন্য নতুন সঙ্গী খুঁজে পেতে তাদের কয়েক বছর সময় লেগে যায়।
তাদের এই বিশ্বস্ততার পিছনেও রয়েছে সন্তান বড় করার প্রেরণা। সান জানিয়েছেন, প্রতিটি প্রজনন ঋতুতে শুধুমাত্র একটি করেই ডিম পারে অ্যালবাট্রসরা। সেই ডিম রক্ষা করতে এবং তাতে তা দিতে সব সময় বাবা-মায়ের মধ্যে কোনও একজনকে বাসায় থাকতে হয়। আবার খাবার সংগ্রহের জন্য এদিক-ওদিক ঘুরতেও হয়। পুরুষ ও মহিলা অ্যালবাট্রস পালা করে এই দুই দায়িত্ব সামলায়। তাই তাদের মধ্যে বন্ধনও হয় অত্যন্ত দৃঢ়। বছরের পর বছর ধরে প্রজননের ফলে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে আরও ভালো সমন্বয় গড়ে ওঠে।
অন্য দিকে, স্বল্পায়ুদের মধ্যে বিবিধ সঙ্গীর সঙ্গে মিলনের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। আসলে তাদের হাতে অ্যালবাট্রসের মতো অনেক সময় নেই। অল্প দিনের জীবন। তার মধ্যে প্রজননের সর্বাধিক সুযোগ তৈরির চেষ্টা করে তারা। আর তাই একের পর এক সঙ্গী পাল্টে চলে তারা। একের পর এক ব্রেকআপ হতেই থাকে।
আরও পড়ুন:– উদ্ধার 967 শিশু ! ‘নানহে ফারিস্তে’ অভিযানে বিশেষ সাফল্য পূর্ব রেলের – NANHE FARISTEY
মৃত্যুর হার এবং লিঙ্গ অনুপাত
বিজ্ঞানীদের মতে যে সব প্রাণীদের মৃত্যুর হার বেশি এবং পুরুষ-মহিলার সংখ্যার তারতম্য বেশি হয়, তাদের ক্ষেত্রে বিচ্ছেদের হারও বেশি থাকে। কারণ, দুই ক্ষেত্রেই সঙ্গীর জন্য প্রতিযোগিতা চলে। প্রাণীরা আরও আকর্ষণীয় কারও সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রলুব্ধ হয়।
জলবায়ু সঙ্কট
গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রাণীদের বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে জলবায়ু সঙ্কটেরও বড় ভূমিকা থাকতে পারে। অ্যান্টার্কটিকায় পাথরের খাঁজে বাসা বাঁধে ‘স্নো পেট্রেল’। সান এবং তাঁর সহ-গবেষকরা দেখেছেন, প্রজনন ঋতুতে তুষারপাত বেশি হলে ব্রেকআপও বেশি হয়।
বাসায় অত্যধিক তুষার পড়লে, ডিমগুলি খুব ঠান্ডা হয়ে যায়। ফলে সেগুলি থেকে বাচ্চা জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায়। এর পর, মহিলারা হয় সেই বাসা ছেড়ে উড়ে যায়, অথবা তাদের পুরুষ সঙ্গীকেই ত্যাগ করে। সান জানিয়েছেন, ক্রমাগত তুষারপাত ওই পাখিদের মধ্যে এক মানসিক চাপ তৈরি করে। সেটাই তাদের ওই পরিস্থিতির জন্য সঙ্গীকে দোষারোপ করার দিকে ঠেলে দেয়।
আরও পড়ুন:– দেশের সেরা পাঁচটি Engineering College এর তালিকা। এখানে পড়াশোনা করে দুর্দান্ত কেরিয়ার তৈরি করা যায়
অগ্নিবীর নিয়োগ 2025 : বিভিন্ন পদের জন্য এখনই আবেদন করুনhttps://t.co/0CMmYG6hay
— The Global Press Bangla (@kaushik94544429) January 3, 2025
India Post GDS Recruitment 2025 : 65,200টি শূন্য পদের জন্য এখনই আবেদন করুনhttps://t.co/6NF7Xktxce
— The Global Press Bangla (@kaushik94544429) January 3, 2025
ITBP নিয়োগ 2025: মোটর মেকানিক শূন্যপদের জন্য এখনই আবেদন করুনhttps://t.co/dmqHraRemt
— The Global Press Bangla (@kaushik94544429) January 3, 2025