Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ২০২২-এ তৎকালীন পাকিস্তানি বিদেশ মন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো দাবি করেছিলেন, পাক সরকার তাকে ‘অপরাধী’ বলে ঘোষণা করার আগেই আফগানিস্তানে পালিয়ে গিয়েছে জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান, মাসুদ আজ়হার। তাই তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব নয়। অথচ বেশ কিছু সংবাদ প্রতিবেদনের দাবি, সম্প্রতি পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে আয়োজিত এক জনসমাবেশে বক্তৃতা দিয়েছে সে। শুক্রবার, এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি দিল ভারত। আজ়হারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ করার দাবি জানাল নয়া দিল্লি।
এ দিন, বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, খবরটি সঠিক হলে, এটা বাকি বিশ্বের কাছে পাকিস্তানকে নগ্ন করে দেবে। সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে তাদের দ্বৈত অবস্থান স্পষ্ট হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি, তার (মাসুদ আজ়হার) বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত এবং তাকে বিচারের আওতায় আনা উচিত। তিনি পাকিস্তানে নেই বলে জানিয়েছে পাক সরকার। প্রতিবেদনগুলি সঠিক হলে, সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে পাকিস্তানের দ্বৈত অবস্থান ফাঁস হয়ে যাবে। মাসুদ আজ়হার ভারতে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদী হামলার সঙ্গে জড়িত। আমরা চাই যে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
আরো পড়ুন:- চাপে পড়ে নতিস্বীকার, সব ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ইউনূসের, জানতে পড়ুন বিস্তারিত
প্রসঙ্গত, পাক সরকার তাকে ‘পলাতক’ বলে ঘোষণা করলেও, গত মঙ্গলবার, জইশ পরিচালিত এক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মাসুদ আজ়হারের একটি বক্তৃতা দেওয়ার ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয়। ১৯২৪ সালে তুর্কি খিলাফতের বিলুপ্তি ঘটেছিল। তার শতবর্ষ উপলক্ষে ওই জনসবার আয়োজন করা হয়েচিল। আজহার সেখানে তার বক্তৃতায় ভারত ও ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে নতুন করে জিহাদি অভিযান শুরুর প্রতিশ্রুতি দেয়। দাবি করেন, এর থেকেই বিশ্বব্যাপী একটি নতুন ইসলামী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। খিলাফত পুনরুদ্ধারের জন্য শ্রোতাদের সে তার নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানায়। শ্রোতাদের করতালির মধ্যে, তাকে বারবার চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ‘ভারত, তোমার মৃত্যু আসন্ন’।
আজ়হার এই বক্তৃতা কখন, কোথায় দিয়েছে, তা স্পষ্ট করেনি জইশ-ই-মহম্মদ। ইদানিং তারা তাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলিতে একের পর এক মাসুদ আজ়হারের পুরোনো বক্তৃতার ভিডিয়ো প্রকাশ করে। তবে, চলমান ইজ়রায়েল-গাজ়া যুদ্ধের উল্লেখ এবং তুর্কি খিলাফতের পতনের ১০০ বছরের উল্লেখ থেকে স্পষ্ট, ভিডিয়োটি চলতি বছরের। সেই ক্ষেত্রে, গত দুই দশকের মধ্যে এই প্রথম মাসুদ আজহারকে তার অনুগামীর উদ্দেশে বক্তৃতা দিতে দেখা গেল।
‘দ্য প্রিন্ট’-এর এক প্রতিবেদনে, এক ভারতীয় গোয়েন্দা কর্তা দাবি করেছেন, ভিডিয়োটিতে আজ়হারকে যে জায়গায় বক্তৃতা দিতে দেখা যাচ্ছে, সেটি সম্ভবত ‘উম্ম-উল-কুরা’ মসজিদ চত্বর। জায়গাটি পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরের কাছে। ওই ভবনে একটি প্রশাসনিক কার্যালয় এবং বেশ কয়েকটি আবাসিক ব্লক রয়েছে। ভবনটি এর আগে জইশ-এর দখলেই ছিল। তবে ২০১৯ সালে এর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছিল পাকিস্তান সরকার। তবে, স্থানীয় প্রতিবেদন অনুযায়ী, জইশ তার পর একটি নতুন ভবন তৈরি করেছে এবং সেখানে যাতে অনুমতি ছাড়া কেউ ঢুকতে না পারে, তার জন্য দরজায় সশস্ত্র প্রহরী রেখেছে। সবটাই হয়েছে পাক সরকারের নাকের ডগায়।
২০০৩ সালে পাকিস্তানের প্রাক্তন সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মুশারফের প্রাণনাশের চেষ্টা করেছিল মাসুদ আজহার। তার পর থেকে তাকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি। তার আগে, ২০০১ সালে বারতীয় সংসদে হামলার প্রেক্ষিতে তাকে বন্দি করেছিল পাকিস্তান। তবে, তার কখনও বিচার করা হয়নি। ২০১৬ সালে, তাকে ‘প্রোটেকটিভ কাস্টডি’-তে রেখেছিল পাক সরকার। তবে, সেখান থেকে তাকে কবে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, এবং কখন সে আফগানিস্তানে পালিয়ে গেল, তার কোনও বিশদ তথ্য কখনও দিতে পারেনি ইসলামাবাদ।