Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- বাঘের পর এ বার বাঘের মাসি! বাংলার জীববৈচিত্র্যের তালিকায় নয়া সংযোজন। পুরুলিয়ার কোটশিলার জঙ্গলে উপস্থিতি মিলল ‘রাস্টি স্পটেড ক্যাট’ বা মরচে দাগযুক্ত বেড়ালের, যা বন্য বেড়াল বা ওয়াইল্ড ক্যাট গোত্রের ক্ষুদ্রতম সংস্করণ! এই নতুন অতিথির উপস্থিতির পিছনে পুরুলিয়ার জঙ্গলের নিরুপদ্রব চরিত্রকেই গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা, আর সেটাই আশার আলো দেখাচ্ছে তাঁদের।
পুরুলিয়া বন বিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহের সহাস্য সংযোজন, ‘মানুষ ও বন্যপ্রাণের সহাবস্থানের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে পুরুলিয়া। উত্তরবঙ্গের মতো এখানের জঙ্গলমহলও পরবর্তী সময়ে অভয়ারণ্যের মর্যাদা পেলে অবাক হব না।’
বিশ্বের ক্ষুদ্রতম এই বন্য বেড়ালের পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ওজন খুব বেশি হলে ০.৯-১.৬ কিলোগ্রাম, যেখানে সাধারণ পূর্ণবয়স্ক বেড়ালের ওজন অন্তত ৪-৫ কেজি। আর এই ছোট্ট বেড়ালের ওজনের মধ্যে বেশিটাই লেজ-সর্বস্ব! গায়ে মরচের মতো ছোপই ‘রাস্টি স্পটেড ক্যাট’-এর নামকরণের রহস্য।
শ্রীলঙ্কা, নেপালের পাশাপাশি ভারতে এই খুদে বেড়ালের উপস্থিতি মিললেও তা সীমাবদ্ধ ছিল মূলত গুজরাট, রাজস্থান, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ওডিশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, কেরালা, তামিলনাড়ুতে। ঝাড়খণ্ড, ছত্তিসগড়ের মতো পড়শি রাজ্যে কখনও দেখা মিললেও এতদিন বাংলায় পা রাখেনি সে। এ বার সেই দুঃখও ঘুচল।
আইইউসিএনের রেড লিস্টে ‘প্রায় বিপন্ন’ বলে উল্লিখিত ‘রাস্টি স্পটেড ক্যাট’ সম্প্রতি ধরা পড়েছে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা কলকাতার এনজিও ‘হিউম্যান অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অ্যালায়েন্স লিগ’ (হিল)-এর লাগানো ক্যামেরা ট্র্যাপে। এই প্রজাতির বেড়ালের সদ্যোজাতের ওজন মুরগির ডিমের থেকেও হালকা! হিল-এর সদস্য তিয়াসা আঢ্যের কথায়, ‘এত দিন পশ্চিমবঙ্গে বন্য বেড়ালের আটটি প্রজাতি পাওয়া যেত, রাস্টি স্পটেড ক্যাট চিহ্নিত হওয়ার পর সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ৯। ঝাড়খণ্ড এবং ছত্তিসগড়ের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ছোট নাগপুর মালভূমি অঞ্চলের ভূতত্ত্বগত মিল রয়েছে। আর সেটাই পশ্চিমবঙ্গে এই ছোট্ট বেড়ালের উপস্থিতির অন্যতম কারণ হতে পারে।’
আরও পড়ুন:– ময়না-তদন্ত, ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই দেহ পাঠাচ্ছে ইউপি! বিপাকে পরিজন
তবে, এর জন্য বন-বিভাগকেই ধন্যবাদ দিচ্ছেন হিল-এর সেক্রেটারি শুভ্রজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘বছর দু’য়েক আগে পুরুলিয়ার এই অঞ্চলেই চিতাবাঘের উপস্থিতি মিলেছিল। সেই সময়ে ভয়ের চোটেই গ্রামবাসীরা কাঠকুঠো বা শিকারের সন্ধানে জঙ্গলের গভীরে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এ দিকে, বন দপ্তরও সেখানে নজরদারি বাড়ায়। বনের মধ্যে বেশ কিছু ক্যামেরা ট্র্যাপ বসানো হয়। বনদপ্তরের সক্রিয়তাতেই জঙ্গলের অন্দরে মানুষের আনাগোনা কমে যায়, ফিরে আসে শান্ত-নিবিড় জঙ্গলের চরিত্র। আর তাতেই বাজিমাত। এর আগে ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল হানি ব্যাজ়ারের উপস্থিতি, আর এ বার দেখা গেল রাস্টি স্পটেড ক্যাট। নিরুপদ্রব জঙ্গল না হলে এদের দেখা পাওয়া সহজ নয়।’
জঙ্গলের এই নিরুপদ্রব, শান্ত চরিত্র বজায় থাকলে স্লথ ভল্লুক, প্যাঙ্গোলিন, স্মল ইন্ডিয়ান সিভেট, গোল্ডেন জ্যাকেল, বনবিড়াল, হায়না, নেকড়ের আনাগোনা বাড়বে বলে আশাবাসী তিয়াসাও। পুরুলিয়া বন বিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহের মতে, ‘জঙ্গলের গুণগত মান উন্নত না হলে, অর্থাৎ জঙ্গল স্বয়ংসম্পূর্ণ না হলে এ ধরনের গভীর জঙ্গলের প্রাণীর দেখা মেলে না। চিতাবাঘের পর হানি ব্যাজার আর এখন রাস্টি স্পটেড ক্যাট— একের পর এক প্রাণীর উপস্থিতি দেখে আমরা আশাবাদী। আমাদের জঙ্গল জীববৈচিত্র্যে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে।’
রাস্টি স্পটেড ক্যাটের উপস্থিতি বাস্ত্ুতন্ত্রের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, এটাও মনে করিয়ে দিলেন শুভ্রজ্যোতি। জানালেন, এই বেড়াল প্রধানত গাছের কোটরে লুকোনো ইঁদুর, ছোট পাখি শিকার করে। সাইজে ছোট বলেই এরা গাছের ছোট্ট কোটরে ঢুকে ইঁদুর মারতে পারে, যা অন্য বেড়াল বা শিকারি প্রাণীদের ক্ষেত্রে একটু মুশকিল। তাই এরা গ্রামবাসী তথা চাষিদেরও বন্ধু! এই বন্ধুত্বের সহাবস্থান আরও মজবুত হোক, সেটাই চাইছেন বন্যপ্রেমীরা।
আরও পড়ুন:– ডিভোর্স তো শুনেছেন, গ্রে ডিভোর্স শুনেছেন কি, এই ডিভোর্স এখন বাড়ছে