‘পুরুষদের ঋতুস্রাব হলে বুঝত’, মহিলা বিচারকের অপসারণ ইস্যুতে ক্ষুব্ধ শীর্ষ আদালত

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

supreme court

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- শুধুমাত্র, মামলার নিষ্পত্তির হার কম থাকার কারণে, কোনও মহিলা বিচারককে বরখাস্ত করা যায় না। বুধবার (৪ ডিসেম্বর), বরখাস্ত হওয়া এক মহিলা বিচারকের মামলার শুনানির সময়, তাঁকে বরখাস্ত করার জন্য মধ্য প্রদেশ হাইকোর্টকে তীব্র ভর্ৎসনা করল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি বি ভি নাগারত্ন এবং এন কোটিশ্বর সিং-এর বেঞ্চ জানায়, হাইকোর্ট ওই মহিলা বিচারকের স্বাস্থ্য এবং মানসিক সুস্থতার কথা বিবেচনা করেনি। বিচারপতি নাগারত্ন বলেন, ‘বিচারক যেখানে মানসিক এবং শারীরিকভাবে সমস্যায় ভুগছিলেন, সেখানে তিনি কতগুলি মামলার নিষ্পত্তি করেছেন, সেটা তাঁর যোগ্যতা মাপের মাপকাঠি হতে পারে না।’

মধ্য প্রদেশ হাইকোর্টের পরামর্শে, সেই রাজ্যের নিম্ন আদালতের ছয় মহিলা বিচারককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিল মধ্য প্রদেশ সরকার। তাঁদের মধ্যে বিচারক অদিতি কুমার শর্মা এই বরখাস্তর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে, শীর্ষ আদালত স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এই মামলা গ্রহণ করেছিল। সহায়তার জন্য সিনিয়র অ্যাডভোকেট গৌরব আগরওয়ালকে ‘অ্যামিকাস কিউরি’ বা ‘আদালত বন্ধু’ হিসেবে নিয়োগ করেছিল।

 

তিনি শীর্ষ আদালতকে জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে বিচারক অদিতি কুমার শর্মাকে নিয়োগ করা হয়েছিল। চার বছরের চাকরির সময়ে তাঁকে বরাবরই বিচার বিভাগীয় কাজে অত্যন্ত দক্ষ বলে মূল্যায়ন করা হয়েছে। তাঁর দেওয়া রায় এবং আদেশগুলি ভালো ছিল। তাঁর প্রমাণের বিচার করার ক্ষমতা, যুক্তি বোধ এবং মামলার বিচারের সময় বিভিন্ন আইনি বিবেচনার ক্ষমতাও ভালো। বেঞ্চ বলে, ‘আদালত বন্ধুর নোট থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম, তাঁর সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নেতৃত্বদানের ক্ষমতা এবং ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা খুব ভালো। তিনি অধস্তন কর্মীদের নির্দেশ দিতে ও তত্ত্বাবধান করতে সক্ষম।’

আদালত বন্ধুর এই নোটের প্রেক্ষিতে, বিচারকের কৌঁসুলি শীর্ষ আদালতকে জানান, তাঁকে অপসারণের সুপারিশ করার সময় মধ্য প্রদেশ হাইকোর্ট তাঁর কাজের গুণমানকে উপেক্ষা করেছিল। পরিবর্তে, কাজের পরিমাণের উপর মনোনিবেশ করেছিল। সরকার পক্ষের আইনজীবী জানান, বিচারক অদিতি শর্মার মামলার নিষ্পত্তির হার অত্যন্ত খারাপ ছিল। এতে বেঞ্চ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়। বিচারপতি নাগারত্ন বলেন, ‘বরখাস্ত করা হল বলে, বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া খুব সহজ। এমনকী, এই মামলাটিও আমরা দীর্ঘ সময় ধরে শুনছি। আইনজীবীরা কি বলবেন আমরাও অত্যন্ত মন্থর?’

প্রসঙ্গত, তাঁরা কতগুলি মামলার নিষ্পত্তি করতে পেরেছেন, তার উপর ভিত্তি করে নিম্ন আদালতে প্রোবেশনে থাকা বিচারকদের মূল্যায়ন করা হয়। ২০২৩-এ মধ্য প্রদেশে বিচারকরা গড়ে ৪.৫ নম্বর পেয়েছিলেন। বিচারক অতিদি শর্মার নম্বর ছিল ২। তবে তার আগের বছরই তাঁর নম্বর ছিল ৪.৮০। আদালত বন্ধু গৌরব আগরওয়াল জানিয়েছেন, তাঁর নম্বরের এই অবনতির পিছনে কিছু ব্যক্তিগত কারণ ছিল। এই সময়কালে ওই মহিলা বিচারকের গর্ভপাত হয়েছিল। তাঁর ভাই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর নিজেরও কোভিড ধরা পড়েছিল। তাই শারীরিক ও মানসিক – দুই দিক থেকেই বিধ্বস্ত ছিলেন তিনি।

এই প্রেক্ষিতে বেঞ্চ জানায়, ওই বিচারককে উন্নতি করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাঁর মধ্যে সেই সম্ভাবনা ছিল। বেঞ্চ মন্তব্য করে, ‘তিনি উপযুক্ত কারণ দেখিয়েছেন। কম মামলার নিষ্পত্তি করা, তাঁকে অপসারণের একমাত্র কারণ হতে পারে না। আপনাকে গুণমান দেখতে হবে, শুধু পরিমাণ নয়।’ বেঞ্চ আরও জানায়, হাইকোর্টের বিশেষ পরিস্থিতিতে বিবেচনা করা উচিত ছিল। বিচারকের স্বাস্থ্যের বিষয়ে হাইকোর্টের উদাসীনতা প্রসঙ্গে ক্ষুব্ধ বিচারপতি নাগারত্ন বলেন, ‘পুরুষদের ঋতুস্রাব হলে তবে বুঝত।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ করে মহিলারা যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকেন, তাহলে তাঁদের মন্থর বলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেবেন না। পুরুষ বিচারক এবং বিচার বিভাগীয় কর্তাদের জন্য একই মানদণ্ড থাকলে দেখতাম কী হতো। জেলা স্তরের বিচার বিভাগে, মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যার লক্ষ্য বেঁধে দেন কীভাবে?’ তিনি আরও জানান, ওই মহিলা বিচারকের বিরুদ্ধে যে যে অভিযোগগুলি করা হয়েছিল, তদন্তে দেখা গিয়েছে সেগুলির কোনও সারবত্তা নেই। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১২ ডিসেম্বর।

 

আরো পড়ুন:– কবে আসবে আপনার মৃত্যু? বলে দিচ্ছে এআই-চালিত ‘ডেথ ক্লক’। কিভাবে? জানলে অবাক হবেন

আরো পড়ুন: সস্তা স্যামসাঙ স্মার্টফোন পাওয়া যাচ্ছে মাত্র 6499 টাকার বিনিময়ে, পাওয়া যাবে 50MP Camera এবং 5000mAh Battery

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন