Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের গয়ংগচ্ছ ভাব দেখে দক্ষিণ কোরিয়ার একদল শিশু সরকারের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিল। অভিযোগপত্রে শিশুরা জানাল, সুস্থ-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বাঁচা প্রতিটি শিশুর জন্মগত অধিকার, এবং সরকার তাদের সেই অধিকার হরণ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, তাদেরকে ঠেলে দিচ্ছে এক তমসাচ্ছন্ন ভবিষ্যতের দিকে। গত ২১ মে দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক কোর্টে পরিবেশ সংক্রান্ত চারটি মামলার শুনানি হল। বাকি তিনটি মামলার বাদী ছিলেন শিশুদের অভিভাবকেরা।
২০২৩-এ এক শিশুর অভিভাবক মাতৃ-জঠরে নিদ্রিত শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই তাঁর শিশু-সন্তানের আগাম সুরক্ষায় সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন। গর্ভস্থ সেই শিশু-সন্তানের ডাকনাম ছিল ‘উডপেকার’। আজ জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে ‘হোক কলরব’-এর নেতা ১ বছরের খুদে ‘উডপেকার’।
শিশুদের মামলায় দৃশ্যতই বিব্রত দক্ষিণ কোরিয়া সরকার আদাজল খেয়ে নামল। যে ভাবেই হোক ২০৩০-এর মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন তারা ২০১৮-র তুলনায় ৪০% কমাবেই। বিশ্বের সব দেশ ২০৩০-এর মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাসের দাপাদাপি যদি ৪০% কমাতে পারে, তবে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস নয়, শতক-শেষে প্রাক-শিল্পায়ন যুগের তুলনায় ৩ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা অক্লেশে কমানো সম্ভব। দক্ষিণ কোরিয়ার দেখাদেখি দিল্লি-কলকাতা-হাওড়ার শিশুরাও কি সমস্বরে জিজ্ঞেস করবে না, কেন ভারতে প্রতি ৩ মিনিটে একটি শিশুর জীবন যাবে ভয়াবহ দূষণে?
যূপকাষ্ঠে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি
পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির লক্ষ্যপূরণে ভারত ২০২২ সালেই ১০% পিছিয়ে ছিল। কোন জাদুবলে ২০৩০-এ ৫০০ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরনযোগ্য শক্তি সে উৎপন্ন করবে? ৫০০ গিগাওয়াটের গল্পটা মোদীজি ফেঁদেছিলেন ২৬তম গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনের মঞ্চে। মোদীজি দ্বারা অনুপ্রাণিত আদানি গোষ্ঠী ‘সিক্স বিলিয়ন ডলার’ খরচে ৮ গিগাওয়াটের একটি সৌরশক্তি প্রকল্প বানিয়ে ফেলল অচিরেই।
প্রশ্ন হল, তা কিনবেটা কে? ২০২২ সালে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির বিপণনে কেন্দ্র চালু করেছিল ‘রিনিউয়েবল পারচেজ় অবলিগেশন’। বলা হয়েছিল, ২০৩০-এর মধ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার ৪৩.৩% বাড়াতেই হবে। নীতি আয়োগের ভাষ্যে, সাড়ে ৩ বছর মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও আদানি-গ্রিন নাকি এক ছটাক সৌরবিদ্যুৎ বিক্রির বন্দোবস্ত করে উঠতে পারেনি।
সৌরবিদ্যুৎ বেচার তাগিদেই নাকি আদানিরা ঘুষের বিনিময়ে বিভিন্ন রাজ্য সরকারি আধিকারিকদের কিনতে চেয়েছিল। আজও ভারতে কয়লা পুড়িয়ে ৭৫% বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। ল্যানসেট-এর হিসাবে, ২০২৪ সালেই ১২ হাজার দিল্লিবাসীর প্রাণ গেছে ভয়াবহ দূষণে। অদ্যাবধি দূষণ প্রাণ কেড়েছে ৪ হাজার ৭০০ জন কলকাতাবাসীরও। এদের প্রাণে বাঁচাতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিই হতে পারত সরকারের সেরা বাজি।
নজরে দিল্লি
বিএস-থ্রি এবং বিএস-ফোর পেট্রোল/ডিজ়েল গাড়ির চলাচল দিল্লিতে নিষিদ্ধ। অত্যাবশ্যক পণ্য-পরিষেবা বাদে বড় ডিজ়েল ট্রাক ও মেয়াদ-উত্তীর্ণ পেট্রোল এবং ডিজ়েল গাড়ির দিল্লি প্রবেশের জরিমানা ২০ হাজার টাকা। দিল্লির রাস্তাঘাট কলকাতার তুলনায় বহু গুণ ভালো। দিল্লির ট্রি কভারেজ ১৩.১৫%, কলকাতার ১%-র কম। তথাপি কেন দিল্লিতে বছরশেষের দূষণকে কিছুতেই বাগ মানানো যাচ্ছে না? দিল্লি-দূষণে মূল আসামি ২০০৯ সালে প্রণীত ‘পাঞ্জাব প্রিজ়ার্ভেশন অফ সাবসয়েল ওয়াটার অ্যাক্ট’।
পাঞ্জাব-হরিয়ানা সহ সমগ্র উত্তর ভারতেই ভূগর্ভস্থ জলস্তর অপস্রিয়মাণ। ধান জল-নিবিড় চাষ। বিলম্বে বোধোদয়ে, মাটির তলার জলের ভান্ডার বাঁচাতে পাঞ্জাব সরকার ১০ মে-র আগে ধানের বীজতলা তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ১০ জুনের আগে পাঞ্জাব-হরিয়ানায় ধানের চারা রোপণ নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে চাষিকে হেক্টর-পিছু প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে এবং নিজের খরচে বীজতলা নষ্ট করে ফেলতে হবে। পাঞ্জাব সরকারের যুক্তি: বর্ষা নেমে গেলে ধানচাষে ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন ও ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে না। ভবিষ্যতের জন্য জল-ভান্ডার সুরক্ষিত থাকবে। ১০ জুন ধান চাষ শুরু হলে ধান পেকে চাষির ঘরে উঠতে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ গড়িয়ে যাচ্ছে।
১৫ নভেম্বরের মধ্যে হ্যাপিসিডার বা সুপার-সিডারের মাধ্যমে গমের বীজ বপন-পর্ব সমাধা না হলে গমের ফলন মার খাবে। ধান কাটা এবং গমের বীজ রোপণের মধ্যে দিন দশেকের অন্তর্বর্তী সময়ে, ধানের গোড়া পুড়িয়েই গম চাষের জমি তৈরি সম্ভব, অন্যথায় নয়। সুতরাং নাড়াপোড়া চলতেই থাকবে। তা ছাড়া ভারতের ‘ব্রেড বাস্কেট’-এর কৃষক লবিকে চটানোর হিম্মত কোন সরকারের আছে? দিল্লির আশেপাশে ইটভাটা, পাথরখাদান এবং দূষণকারী কলকারখানা বন্ধ বহু কাল। শীতকালে দিল্লিতে উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বে কনকনে ঠান্ডা বাতাস বয়। আফগানিস্তান-পাকিস্তানের ইটভাটা এবং কলকারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া সেই ঠান্ডা বাতাসের ঘাড়ে চেপে বিনা পাসপোর্ট-ভিসায় দিল্লিতে প্রবেশ করে। কোন প্রহরী সেই হাওয়া মোরগের অভিমুখ বদলাবে?
বজ্র আইন, ফস্কা গেরো
দিল্লির দূষণ মোকাবিলায় ১৯৮১-তে তৈরি হয়েছিল ‘এয়ার অ্যাক্ট’, ১৯৮৬-তে বলবৎ হল ‘এনভায়রনমেন্ট অ্যাক্ট’, কেন্দ্র আরও জবরদস্ত আইনের তাগিদে ১৯৯৮-তে তৈরি করল ‘এনভায়রনমেন্ট পলিউশন (প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল) অথরিটি’ বা ইপিসিএ। দূষণ বাগ না মানায়, ২০১৭-তে দিল্লি-এনসিআর-এর জন্য পরিবেশ মন্ত্রক চালু করল ‘গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান’ (জিআরএপি)।
২০১৯-এ আসরে নামলেন মোদীজি, প্রণীত হল ‘ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম’। জিআরএপি-র রূপায়ণে ১৫টা দপ্তরের সমন্বয় জরুরি, বাস্তবে একটিরও সমন্বয় নেই। সমন্বয়ের অভাবে খুঁড়িয়ে চলা জিআরএপি-র কাজকর্মে তিতিবিরক্ত সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করল। এহ বাহ্য, কেন্দ্র এবং আপ সরকারের আটটি মন্ত্রকের অধীনে রয়েছে আরও অজস্র কমিটি/বোর্ড/আইন। অধিক আইনে বিচার প্রহসনে পরিণত হয়েছে!
আরো পড়ুন:- শুধুই কি ভিক্ষা করে ৭.৫ কোটি টাকার মালিক ভরত? জেনে নিন ‘ধনীতম ভিখারি’র আয়ের গোপন রহস্য
কুজ়নেট্স কার্ভ ও দূষণ
উন্নয়নশীল বা উন্নত, প্রতিটা দেশই অঢেল গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন করেছে এবং করবেও। ‘এনভায়রনমেন্টাল কুজ়নেট্স কার্ভ’ অনুযায়ী গ্রিনহাউস গ্যাস এবং দূষণ চরম সীমায় পৌঁছনোর পরেই উন্নয়নের সোপানে পা ফেলা দেশটির মাথাপিছু আয় বাড়তে থাকে, উন্নয়নের সুফল চুঁইয়ে নামে দরিদ্র প্রান্তিক মানুষের পর্ণকুটিরে। ক্রমশ কমতে থাকে দূষণ। ‘কুজ়নেট্স কার্ভ’কে ভুল প্রমাণ করতে এবং প্রসাধনী উন্নয়নের খামতি ঢাকতে ‘দুর্বিষহ মাতালের প্রলাপের মতো’ সরকারের কর্ণধারকে বলতেই হয়, ‘ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম’-এ ২০২৪-এর মধ্যে পিএম২.৫ দূষণ ২০-৩০% কমানো হবে। আজকের দিনে দিল্লির পিএম২.৫-এর মান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার ৪০ গুণ বেশি। কলকাতার ক্ষেত্রে তা ৩৩.৬ গুণ।
দূষণ নিয়ন্ত্রণের রাস্তা
রোমানিয়ার টারকু পাহাড়ের তৃণভূমিতে বছর কয়েক আগে ১৭০টি বাইসন ছাড়া হয়েছে। আমেরিকার ৪৩ হাজার পেট্রোল-চালিত গাড়ি নিঃসৃত সারা বছরের কার্বন ডাই-অক্সাইডের সমতুল কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ/আত্তীকরণ করছে ১৭০টি বাইসন। বাইসনদের উপস্থিতিতে টারকুতে ৯.৮% বেশি কার্বন শোষিত হচ্ছে। ঘাস জাতীয় তৃণের মাথা সমান ভাবে মুড়িয়ে খায় বাইসনরা, দ্রুত বাড়ে তৃণ। বাইসনদের বিষ্ঠা তৃণভূমিকে উর্বর করে, বীজের বিস্তার ঘটায় ও মাটিতে আবদ্ধ কার্বনকে দৃঢ়-সংবদ্ধ রাখে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বেড়ে চলে সবুজ। শহরের কোনও প্রশস্ত জায়গায় বাইসন প্রতিপালন সম্ভব কি না, সরকার এক বার ভেবে দেখতেই পারে!
বিভিন্ন দেশ ‘কম্যান্ড-কন্ট্রোল’ এবং ‘মার্কেট-বেসড ইনস্ট্রুমেন্টস’-এর যুগলবন্দিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটছে। কম্যান্ড-কন্ট্রোলে কাটাতেল/ডিজ়েল-চালিত ও বিএস-ফোর গাড়ি নিষিদ্ধ করা এবং মার্কেট-বেসড ইনস্ট্রুমেন্টসে পরিবেশ-বান্ধব আধুনিক বৈদ্যুতিক গাড়ির দু’বছরের পথ-কর এবং পার্কিং ফি মকুব করা যেতে পারে। কোনও গাড়ি যানজটদীর্ণ বা ভিড় রাস্তায় ঢুকলেই সিঙ্গাপুর-লন্ডন-মিলান-স্টকহোমের মতো ‘কনজেশন ট্যাক্স’-এর মাধ্যমে গাড়ির চলাচলে রাশ টেনে দূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
কৃষি, নগরায়ণে ‘সবুজ প্রযুক্তি’র বাধ্যতামূলক ব্যবহার (মাইক্রোবিয়ম স্টুয়ার্ডশিপ), ছোট/বড় প্রতিটা বাড়ি/ফ্ল্যাটে ‘ক্যাম-উদ্ভিদ’-সঞ্জাত এক টুকরো বাগান (বা ভার্টিকাল গার্ডেন), বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী গৃহ নির্মাণে ভর্তুকি ও বাড়ির ছাদ সাদা রঙে রাঙিয়েও উষ্ণায়ন ও দূষণ রোখা সম্ভব। জীবাশ্ম-জ্বালানির ভর্তুকি প্রত্যাহার এবং বিদ্যুৎক্ষেত্রে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ঢালাও ব্যবহারে দূষণ কমবে। নগরায়ণ, গৃহনির্মাণ, পরিবহণ, বিদ্যুৎক্ষেত্রে ‘কার্বন ট্যাক্স/কার্বন ক্রেডিট’ চালু করাও জরুরি। সর্বোপরি সরকারের শিক্ষা-চেতনা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা-দৃঢ়তা এবং দূরদর্শিতা ছাড়া দূষণকে নিয়ন্ত্রণ করা কার্যত অসম্ভব।
লেখক জিন-বিশেষজ্ঞ
আরো পড়ুন:- নতুন শিক্ষাবর্ষে উচ্চমাধ্যমিকের 19টি বিষয়ে পাঠক্রম বদল, কোন কোন বিষয়? জেনে রাখুন
কী কারণে আজও অবিবাহিত পায়েল ? সিক্রেট জানলেন অবাক হবেন…https://t.co/OnLSEazndh
— The Global Press Bangla (@kaushik94544429) December 7, 2024
পুরুষরা সাবধান ! ভুল অন্তর্বাসেই যৌনতায় পড়বে ভাটা, জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের মতhttps://t.co/ubWQD3IyIV
— The Global Press Bangla (@kaushik94544429) December 7, 2024
এক ছোঁয়াতেই বন্ধ হয় দরজা ! জানেন, শোভন-বৈশাখী কত লক্ষ টাকার গাড়ি চড়েন ?https://t.co/Ju9zwaum88
— The Global Press Bangla (@kaushik94544429) December 7, 2024