বঙ্গে বাল্যবিবাহ রোধে বাধা পঞ্চায়েত-রাজনীতি?

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- পূর্ব মেদিনীপুরের প্যারা লিগাল ভলান্টিয়ার (পিএলভি) বা ‘অধিকার মিত্র’রা বাল্যবিবাহ রুখতে সচেতনতার কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতের শাসানির মুখে পড়েছিলেন কিছুদিন আগে। পঞ্চায়েত প্রতিনিধি প্রশ্ন তুলেছিলেন, বিয়ের আসরে গিয়ে বিয়ে ভাঙার তিনি কে? আবার এমন কিছু হলে তাঁদের দেখে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। এমনকী নালিশ জানাতে গেলে স্থানীয় থানাও প্রশ্ন তোলে, ‘আপনার এত মাথাব্যথা কীসের?’

পশ্চিম মেদিনীপুরে আবার একটি গ্রামে বাল্যবিবাহ রুখে দিয়েছিলেন এক অধিকার মিত্র। তাতে এতটাই খাপ্পা হয় স্থানীয় পঞ্চায়েত, যে তাঁকে অতি অসুস্থ শরীরে পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে স্থানীয় রাজনীতিকদের কাছে গিয়ে ‘ক্ষমা’ চাইতে বাধ্য করা হয়। অভিযোগ, পরে খোদ পঞ্চায়েত প্রধান দাঁড়িয়ে থেকেই ওই বিয়ে দেন।

মুর্শিদাবাদ ও হাওড়ার অধিকার মিত্রদের বক্তব্য, ভাঙন, নিরক্ষরতা, দারিদ্র — একগুচ্ছ সমস্যার মধ্যেও মানুষকে বুঝিয়ে ১৮ বছরের কমবয়সি মেয়ে ও ২১ বছরের কমবয়সি ছেলের বিয়ে অনেক আটকেছেন তাঁরা। সেটা করতে গিয়ে তাঁরাও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও পঞ্চায়েতের রোষে পড়ছেন।

আরও পড়ুন:– পোস্ট অফিসের দুর্দান্ত স্কিম, 5 বছরের বিনিয়োগে সুদ 2,25,000 হাজার টাকা ! এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না

এগুলো কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছবিটা যে মোটের উপর এই রকমই, শনিবার কলকাতা হাইকোর্টে ‘স্টেট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি’ আয়োজিত ‘পশ্চিমবঙ্গে বাল্য বিবাহের অভিশাপ ও তা নির্মূল করার উপায়’ শীর্ষক এক আলোচনাচক্রে এমন অভিজ্ঞতার কথাই শোনালেন তৃণমূল স্তরের কর্মীরা।

এগুলো যে গল্পকথা নয়, তা অনেকাংশে স্বীকার করে নিচ্ছেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারাও। অনেকেই মনে করছেন, বহু উদ্যোগ নেওয়ার পরেও যে বাল্যবিবাহ সে ভাবে আটকানো যাচ্ছে না, তার অন্যতম কারণ প্রশাসনিক কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। দলমত নির্বিশেষে এমন সব পঞ্চায়েত এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধ করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা।

রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের এক শীর্ষকর্তা সোমবার বলেন, ‘আমার কাছে এই ধরনের কোনও অভিযোগ সরাসরি আসেনি। তবে বাল্যবিবাহের অভিশাপ দূর করতে পঞ্চায়েত যাতে উদ্যোগী হয় ও অংশগ্রহণ করে, সে জন্য সব পঞ্চায়েতের লিডারদের আইআইএম, আইআইটি, এমডিআই-সহ নানা পেশাদার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আমরা নিজেরাও দিয়েছি।’

আরও পড়ুন:– ইন্ডিয়ান নেভিতে প্রচুর কর্মী নিয়োগ চলছে! আবেদন পদ্ধতি সহ বিস্তারিত দেখেনিন

শনিবারের ওই আলোচনাচক্রে উপস্থিত পঞ্চায়েত দপ্তরের ডেপুটি সেক্রেটারি শুভঙ্কর ভট্টাচার্যের ব্যাখ্যা, ‘আমরা ৩৫০০ পঞ্চায়েত সদস্যকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ নিয়ে বিস্তারিত প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এই অভিশাপ বন্ধে সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’ নারী ও শিশু বিকাশ এবং সমাজকল্যাণ দপ্তরের বিশেষ সচিব পর্ণা চন্দ্র বলেন, ‘২০২২ থেকে কাঁচা বয়সে বিয়ে রুখতে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাকশন প্ল্যান চালু করা হয়েছে। রিয়েল টাইম ডেটা-সহ বাল্যবিবাহের বিষয়ে খবর রাখতে ২০২৩-এ শুরু হয়েছে সিএমআরটিএস (CMRTS) পোর্টালও। তবে পঞ্চায়েত, শিক্ষা-সহ সব দপ্তরকে সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে।’ ওই দপ্তরেরই এক আধিকারিক স্বীকার করেন, পঞ্চায়েতের সাহায্য অনেক ক্ষেত্রেই পাওয়া যাচ্ছে না। এই সমস্যার কোনও সমাধান আছে কি না, তাঁর জানা নেই।

এমন অভিযোগও উঠছে যে, পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল অঞ্চলের বেশ কিছু পঞ্চায়েতের হাতের মুঠোয় থানা। বাল্যবিবাহ নিয়ে তাই পুলিশ হেনস্থা করছে সমাজকর্মীদের। এই বিষয়ে ওই জেলা পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘আমরা এই বিষয়ে অত্যন্ত সিরিয়াস। এ রকম হয়ে থাকলে নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখা হবে।’ তিনিও জানান, বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হলে পুলিশ একা কিছু করতে পারবে না। স্কুল-পঞ্চায়েত-স্বাস্থ্য এবং সিভিল সোসাইটিকে একসঙ্গে কাজ করে মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

আরও পড়ুন:– দেশে ন্যায়তন্ত্র থাকলে সবার আগে মোদি-যোগীকে শাস্তি দেওয়া হত, কেন এই কথা বললেন পুরীর শঙ্করাচার্য ?

আরও পড়ুন:– ‘ব্যাঙ্কের অ্যাপে’ এ বার সাইবার হানা, আসল-নকল না বুঝলে বড় বিপদ শিয়রে…

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন