Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার সপ্তাহ দুয়েক আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গ্রিনল্যান্ড কেনার জন্য ‘মাগা’-র ফেরিওয়ালা যে মরিয়া মনোভাব দেখিয়েছেন তাতে হতভম্ব ন্যাটো সঙ্গীরাও। গ্রিনল্যান্ড বিক্রি না করলে মিলিটারি পাওয়ারের মাধ্যমে তা দখলের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি তিনি। যা দেখে ট্রাম্পকে সতর্ক করেছে জার্মানি ও ফ্রান্স। গ্রিনল্যান্ডবাসীদের বড় অংশ নিজেদের দেশ বিক্রি করতে নারাজ। ডেনমার্কও বিক্রির বদলে আমেরিকার আলোচনা করতে প্রস্তুত। কিন্তু প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসার আগেই কেন গ্রিনল্যান্ড নিয়ে এত বেপরোয়া হয়ে উঠলেন ট্রাম্প?
গ্রিনল্যান্ডের অবস্থান ও ইতিহাস
এই দেশ সুমেরু বা আর্কটিকে অবস্থিত। এটি বিশ্বের সবথেকে বড় আইল্যান্ড। ২১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তা বিস্তৃত রয়েছে। ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, ব্রিটেন, ইটালি, গ্রিস, সুইজ়ারল্যান্ড এবং ইতালি- ইউরোপের এই সব দেশ এঁটে যাবে গ্রিনল্যান্ডে। কিন্তু এর ৮০ শতাংশই ঢাকা থাকে পুরু বরফের চাদরে। সুবিশাল এই এলাকার দক্ষিণ, ও দক্ষিণ-পশ্চিমের সামান্য এলাকায় থাকেন ৫৭ হাজার বাসিন্দা।
গ্রিনল্যান্ড ভারত বা আমেরিকার মতো পুরোপুরি স্বাধীন দেশ নয়। ভৌগোলিকভাবে উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত হলেও গ্রিনল্যান্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে তিন হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইউরোপের দেশ ডেনমার্ক। ১৯৫৩ সালে কিংডম অফ ডেনমার্কের অংশ হয় গ্রিনল্যান্ড। সেখানকার বাসিন্দারা ডেনমার্কের নাগরিকত্ব পান। তার আগে এই এলাকা ছিল ডেনমার্কের উপনিবেশ। ১৯৭৯ সালে গ্রিনল্যান্ড স্বায়ত্ত শাসন পায়। তবে গ্রিনল্যান্ডের বৈদেশিক নীতি এবং প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ডেনমার্কের হাতেই ন্যস্ত রয়েছে। যদিও ডেনমার্কের অধীন থেকে বেরিয়ে এসে পুরোপুরি স্বাধীন হওয়ার দাবিও রয়েছে গ্রিনল্যান্ডের অন্দরে। ২০০৯ সালে এক গণভোটের মাধ্যমে সেই অধিকার অর্জন করেছে গ্রিনল্যান্ড। ২০১৯ সালে কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়েরর এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ৬৭ শতাংশ গ্রিনল্যান্ডবাসী ভবিষ্যতে ডেনমার্কের অধীন থেকে বেরিয়ে পুরোপুরি স্বাধীন হওয়ার পক্ষপাতী।
আরও পড়ুন:– বাংলাদেশের বাসিন্দাদের উপর বিপুল ট্যাক্স চাপালেন ইউনূস, বিপাকে সাধারণ মানুষ, বিস্তারিত জানুন
আমেরিকার সঙ্গে গ্রিনল্যান্ডের সম্পর্ক
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই গ্রিনল্যান্ডে রয়েছে মার্কিন মিলিটারি বেস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির নাৎসি বাহিনী ডেনমার্ক দখল করার পর গ্রিনল্যান্ডের দখল নেয় আমেরিকা। যদিও ১৯৪৫ সালে তা ডেনমার্ককে ফিরিয়ে দিয়েছিল আমেরিকা। কিন্তু তখন থেকেই ড্যানিশ সেনার পাশাপাশি মার্কিন মিলিটারি বেস রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম আইল্যান্ডে। তবে ১৯৪৬ সালে ডেনমার্কের থেকে গ্রিনল্যান্ড কিনতে চেয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিপুল অঙ্কের অফারও দিয়েছিল। যদিও সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় ডেনমার্ক। ২০১৯ সালে ট্রাম্প প্রথমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ড- দুই দেশকেই অফার দিয়েছিলেন ট্রাম্প। দুই দেশই সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল। ট্রাম্পও বিষয়টি নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করেননি। কিন্তু এখন কেন এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠলেন ট্রাম্প?
কেন মার্কিন নজরে গ্রিনল্যান্ড?
গ্রিনল্যান্ড পৃথিবীর এমন একটি দেশ যার অধিকাংশ এলাকা বরফে ঢাকা এবং এর বড় অংশ এখনও অনাবিষ্কৃত। কিন্তু সেখানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে দুর্লভ খনিজ পদার্থ এবং খনিজ তেল। ২০২৩ সালে ডেনমার্ক সরকারের একটি রিপোর্টে খনিজ উত্তোলনের সম্ভাবনার বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। কপার, আয়রন, কোবাল্ট, নিকেল, লিথিয়ামের মতো খনিজে ঠাসা এই বরফাবৃত এলাকা। উইন্ড টার্বাইন হোক বা ইভি-র ব্যাটারি বা ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্ট- ভবিষ্যতের দুনিয়ায় এই সমস্ত খনিজের চাহিদা থাকবে তুঙ্গে। এই খনিজের দখল রাখা গেলে আগামী দিনে প্রযুক্তির লড়াইয়ে কয়েক যোজন এগিয়ে থাকা যাবে। কিন্তু এই সব খনিজ পদার্থ তো দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে গ্রিনল্যান্ডে। কিন্তু হঠাৎ করে এখন কেন তা নিয়ে এত আগ্রহ তৈরি হচ্ছে?
এর সবথেকে বড় কারণ হল গ্লোবাল ওয়ার্মিং। জলবায়ুর পরিবর্তনে গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলছে। এর জেরে মাইনিং বা খননের পরিস্থিতি অনুকূল হচ্ছে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধিতে গত তিন দশকে গ্রিনল্যান্ডের ১১ হাজার বর্গ মাইল এলাকায় আইসশিট, গ্লেসিয়ার গলে গিয়েছে। আগামী দিনে তা আরও বাড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ট্রাম্প অতীতে একাধিকবার ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ’কে ‘হোক্স’ বলে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে উড়িয়েছেন। তবে এই বরফ গললে খনিজ উত্তোলনের পাশাপাশি আরও কয়েকটি সম্ভাবনা তৈরি হবে। তখন শক্তিধরদের নজর গিয়ে পড়বে পৃথিবীর উত্তরতম প্রান্তে। ভবিষ্যতের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কনফ্লিক্ট জ়োন হয়ে ওঠার পোটেন্সিয়াল রয়েছে। এ বিষয়ে প্রাক্তন মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট সি ও’ব্রায়েন বলেছেন, ‘আর্কটিকের স্ট্র্যাটেজিক ইমপরট্যান্স বাড়বে ভবিষ্যতে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বাণিজ্যপথ হয়ে উঠবে ওই এলাকা।’
আর্কটিক এলাকার বরফ গললে পণ্য পরিবহনের নতুন রুট তৈরি হবে। বর্তমানে পশ্চিম ইউরোপ এবং আমেরিকার পূর্ব উপকূল থেকে পূর্ব এশিয়া আসতে বিস্তৃত পথ পাড়ি দিতে হয় জাহাজকে। কিন্তু আর্কটিক সমুদ্র দিয়ে গেলে পূর্ব এশিয়ায় পৌঁছে যাওয়া সহজ হবে। সুয়েজ় খাল দিয়ে এশিয়ায় আসতে যত রাস্তা পেরোতে হয়, তার থেকে ৪০ শতাংশ কম পথ যেতে হবে। এর পাশাপাশি পানামা খাল পেরনোর প্রয়োজনও অনেকটা কমবে। আর্কটিক কাউন্সিলের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত এক দশকে আর্কটিক রুট দিয়ে জাহাজের যাতায়াত ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। বরফ যত গলবে এই রুটের ব্যস্ততাও বাড়বে।
দেশের নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ডকে কব্জায় রাখার বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের চিন্তা অবশ্য খুব নতুন নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই গ্রিনল্যান্ডে রয়েছে মার্কিন সেনা ঘাঁটি। সেখানে মিলিটারি বেস তৈরি এবং মেনটেনের জন্য ১৯৫১ সালে ডেনমার্কের সঙ্গে করা এক প্রতিরক্ষা চুক্তিও করেছিল আমেরিকা। বিষয়টি নিয়ে রয়্যাল ড্যানিশ ডিফেন্স কলেজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর মার্ক জ্যাকবসেন বলেছেন, ‘রাশিয়া যদি আমেরিকায় নিউক্লিয়ার মিসাইল হামলা করে তবে উত্তর মেরু ও গ্রিনল্যান্ডের উপর দিয়ে সবথেকে শর্ট রুটে করা যেতে পারে। তাই মার্কিন প্রতিরক্ষার জন্য গ্রিনল্যান্ডের পিটুফিক স্পেস বেস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ ডেনমার্কের বিদেশমন্ত্রী রাসমুসেনও মনে করেন গ্রিনল্যান্ডের উপর মার্কিন আগ্রহের যৌক্তিকতা রয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘গ্রিনল্যান্ডে আমেরিকার ইন্টারেস্ট লেজিটিমেট। আমরা দেখছি রাশিয়া ও চিনের আগ্রহও বাড়াছে এই এলাকায়। এর প্রধান কারণ খনিজ।’
এই সব কারণেই গ্রিনল্যান্ডকে আমেরিকার অংশ বানাতে চাইছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তা দখলের কারণ হিসাবে বলেছেন, ‘আমেরিকা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড প্রয়োজন।’ এ ব্যাপারে তিনি কতটা মরিয়া সেটাও বুঝিয়েছেন নিজের বক্তব্যে। সে জন্যই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বা মিলিটারি পাওয়ারের মাধ্যমে গ্রিনল্যান্ড দখলের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি। বিশ্বের বৃহত্তম আইল্যান্ডের মালিকানা পাওয়া এবং সেখানে নিয়ন্ত্রণ কব্জা করা তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষায় ‘অ্যাবসিলিউট নেসেসিটি’।
আরও পড়ুন:– উচ্চ বেতনে কলকাতা হাই কোর্টে কর্মী নিয়োগ চলছে! কিভাবে আবেদন করবেন দেখুন
আরও পড়ুন:– বিচারের ভুলে ২৫ বছর বন্দি থাকার পর সুপ্রিম নির্দেশে মুক্তি, পড়ুন এক নিদারুন কাহিনী
রেলওয়ে নিয়োগ 2025 : 32,438টি গ্রুপ ডি শূন্যপদের জন্য অনলাইনে আবেদন করুনhttps://t.co/8GpFZxawtG
— The Global Press Bangla (@kaushik94544429) January 6, 2025
পশ্চিমবঙ্গ চাকরির শূন্যপদ 2025 : সমস্ত WB চাকরির নিয়োগ আপডেট জানুনhttps://t.co/QDNLjfCNhF
— The Global Press Bangla (@kaushik94544429) January 4, 2025
SBI Recruitment 2025 : 14191 ক্লার্ক শূন্য পদের জন্য অনলাইনে আবেদন করুনhttps://t.co/950tLOEBdm
— The Global Press Bangla (@kaushik94544429) January 6, 2025