Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতনের একের পর এক অভিযোগ গত বেশ কয়েক মাস ধরেই উঠে আসছিল। তার উপর আবার কিছু দিন আগে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ আসাদুজ্জামান দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটির কোনও প্রয়োজন নেই।
কারণ, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষই মুসলিম। এ বার সে দেশের সংবিধান সংস্কার কমিশনও একই সুপারিশ করল। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের দাবি, রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূল নীতির মধ্যে তিনটিই বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে এই কমিশন।
বর্তমানে বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার যে চারটি মূল নীতি রয়েছে সেগুলো হলো, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরির পরে ১৯৭২ সালে যে সংবিধান রচিত হয়েছিল, তাতে রাষ্ট্র পরিচালনার এই চারটি নীতিই গৃহীত হয়েছিল। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের দাবি, এই চারটি নীতি বদল করে নতুন যে পাঁচটি মূল নীতির প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে শুধুমাত্র গণতন্ত্র বিষয়টি রাখা হচ্ছে।
বাকি চারটি মূল নীতি হিসেবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার ও বহুত্ববাদকে রাখা হয়েছে। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের জন–আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনস্বরূপ সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে এই পাঁচটি বিষয় বেছে নিয়েছে কমিশন।
পাশাপাশি অধ্যাপক আলি রিয়াজ়ের নেতৃত্বাধীন এই সংবিধান সংস্কার কমিশন ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ নামটিও পরিবর্তন করে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার সুপারিশ করেছে। আর প্রজাতন্ত্রের পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ করার প্রস্তাবও করেছে কমিশন। এ দিন আরও তিনটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনও জমা পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে। বাকি তিনটি কমিশন হলো নির্বাচন ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন এবং পুলিশ সংস্কার কমিশন। তবে এ সবের মধ্যে বাংলাদেশের সংবিধানের মূল নীতি হিসেবে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি বাদ দেওয়ার প্রস্তাবকে অন্ত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের বড় অংশ।
এই চারটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে ইউনূস বলেছেন, ‘এটা শুধু একটা আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বহু কমিটি তৈরি হয়, তাদের রিপোর্টও প্রকাশিত হয়, কিন্তু আজকের আনুষ্ঠানিকতা সেগুলোর চাইতে অনেক বেশি।’ তাঁর সংযোজন, ‘আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে সেটার কাঠামো তৈরির কাজ আপনাদের হাতে দিয়েছিলাম কমিশনের মাধ্যমে। সেই স্বপ্নের রূপরেখাগুলো তুলে ধরতে হবে।’
ইউনূস জানান, এই কমিশনগুলির প্রস্তাব নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবক’টি দলের সঙ্গে আলোচনা হবে। তাঁর কথায়, ‘ভবিষ্যতে যে নির্বাচন হবে, সেটাও হবে এই চার্টারের ভিত্তিতে। তা না হলে চার্টার হারিয়ে যাবে। কাজেই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।’ একইসঙ্গে এ দিন কমিশনগুলির যে সুপারিশ জমা পড়েছে, তাতে বাংলাদেশের বর্তমান এক কক্ষের পরিবর্তে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর একটি হবে নিম্নকক্ষ, যা পরিচিত হবে জাতীয় সংসদ নামে। অন্যটি হবে, উচ্চকক্ষ বা সেনেট। উভয় কক্ষের মেয়াদ হবে চার বছর। তা ছাড়া সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছরের পরিবর্তে চার বছর করার সুপারিশও করা হয়েছে।
এর আগেও ইউনূস যা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে বাংলাদেশে নির্বাচন হতে পারে চলতি বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের মাঝামাঝি। কিন্তু খালেদা জিয়ার দল বিএনপি বারবারই দাবি করেছে, চলতি বছরের মাঝামাঝিই নির্বাচন শেষ করতে হবে। এ নিয়ে দলের একাধিক প্রবীণ নেতা প্রায় প্রতিদিনই বিবৃতি দিচ্ছেন। ফলে আগামী দিনে বাংলাদেশের নির্বাচন কখন এবং কোন পথে হয়, সে দিকেও তাকিয়ে রয়েছেন দু’দেশের কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন:– হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ বন্ধের খবরে হুহু করে বাড়ল আদানি গোষ্ঠীর স্টকের দাম