Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- সারি সারি রংবাহারি ফুলের বাগান। গাঁদা–চন্দ্রমল্লিকা–ইনকা, কত কী। রিলস বানানোর আদর্শ জায়গা বলে মনে হয়েছে ওদের। ফেসবুকেও তো প্রায়ই এই জায়গায় রিলস বানাতে দেখেছে ওরা। তাই সাধ হয় ক্ষীরাইয়ে যাবে। মনে মনে স্বপ্নের জাল বুনে সরস্বতী পুজোর দিনকে বেছে নেয় বেলদার ১২ জন খুদে পড়ুয়া। এরপর মোবাইলে ইউটিউব দেখে বেলদা থেকে কী ভাবে ক্ষীরাই যাবে, তাও জেনে নেয় ওরা। সোমবার ক্ষীরাইয়ের জন্য রওনা দেয় ওই ১২ পড়ুয়া। ফুলের বাগানে রিলস বানিয়ে সে দিনই ফেরার কথা ছিল ওদের। কিন্তু বাধ সাধে টাকা। হাতের টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় আর বাড়ি ফেরা হয়নি।
এ দিকে, বাড়ির লোকও তাদের জন্য চিন্তায় পড়ে। সব জায়গা খোঁজার পর বেলদা পুলিশের দ্বারস্থ হয় ১২ জন পড়ুয়ার বাড়ির লোক। সোমবার পুলিশকে জানায়নি পরিবার। মঙ্গলবার বিকেলে বেলদা থানায় মৌখিক ভাবে জানান নিখোঁজ ছাত্রের বাবা-মায়েরা। পুলিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের উদ্ধার করে পরিবারের হাতে তুলে দেয়।
মোবাইলে ইউটিউব থেকে ক্ষীরাইয়ের হদিশ পেয়েছিল ওই ১২ জন পড়ুয়া। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়ার ক্ষীরাই ফেসবুকেও দেখেছে ওরা। দক্ষিণবঙ্গের ফ্লাওয়ার ভ্যালি নামে পরিচিত ক্ষীরাই। কী ভাবে সেখানে পৌঁছনো যায় তা মোবাইল ঘেঁটে জেনে নিয়ে সরস্বতীর পুজোর দিন হাতে ২০–৩০ টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ১২ জন পড়ুয়া। পুলিশ জানিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তাদের বাড়ি।
বয়স ১২ থেকে ১৫ বছর। সবাই ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির পড়ুয়া। এক স্কুলে না-পড়লেও পাশাপাশি গ্রামে থাকায় একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। সকাল–বিকেল একসঙ্গে খেলাধুলো করত তারা। জানা গিয়েছে, এক বিকেলে খেলতে খেলতেই পরিকল্পনা করে সরস্বতী পুজোর দিন ক্ষীরাই যাওয়া হবে। সে দিন ঠাকুর দেখতে যাব বললে বাড়ির কেউ ‘না’ করবেন না। এই সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। সেই মতো সরস্বতী পুজোর দিন সাজগোজ করে বেরিয়ে পড়ে তারা। একজন সঙ্গে মোবাইল নিয়েছিল।
সোমবার সকালে নারায়ণগড় স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে সোজা খড়্গপুর চলে আসে কিশোরদের দল। সেখান থেকে হাওড়াগামী ট্রেন ধরে পৌঁছে যায় ক্ষীরাইয়ে। তারপরে যেন হাতে স্বর্গ পাওয়া। বিঘের পর বিঘে ফুলের জমির মাঝে মহা আনন্দে রিলস বানিয়ে খেলাধুলো করতে করতে কখন বিকেল হয়ে গিয়েছে বুঝতে পারেনি কেউ।
সূর্য ডুবতেই হুঁশ ফেরে সকলের। তাড়াতাড়ি খড়্গপুর স্টেশনে পৌঁছয়। তখন রাত হয়ে গিয়েছে। এ দিকে, বাড়ির লোকও খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু বাড়ি ফিরবে কী করে, হাতের টাকাও তো শেষ। কী করবে বুঝতে না-পেরে সোমবার রাতটা খড়্গপুর স্টেশনে কাটিয়ে দেয়। পর দিন প্রায় দুপুর পর্যন্ত সেখানেই মুড়ি খেয়ে বসে ছিল সবাই। শেষে হেঁটে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেয় দুই পড়ুয়া। বাকিরা প্রথমে রাজি হয়নি। মঙ্গলবার দুপুরের পর হাঁটা শুরু করে ওই দু’জন। রাস্তা জিজ্ঞেস করে বেনাপুর পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। প্রথমে ওই দু’জনকে পুলিশ বেনাপুর থেকে নারায়ণগড়ের দিকে হেঁটে যাাওয়ার সময়ে পথে উদ্ধার করে।
ওই দু’জন বেরোনোর পরে বাকি ১০ জন ছাত্রছাত্রীও হেঁটে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা দেরিতে বেরোনোয় বেনাপুর পৌঁছতে রাত হয়ে যায়। তখন বেনাপুর স্টেশনে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয় ১০ জন। পরে বেনাপুর স্টেশন থেকেই ওই দশ পড়ুয়াকে উদ্ধার করে বেলদায় নিয়ে আসে পুলিশ। বুধবার ১২ পড়ুয়াকে তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেয় পুলিশ।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, ‘ছাত্র নিখোঁজের খবর পাওয়া মাত্র আমরা পুলিশের তিনটি টিম গঠন করি। চারদিকে তল্লাশি চালিয়ে সাফল্য মেলে।’
আরও পড়ুন:- বাংলার শাড়িকে বিশ্বের দুয়ারে পৌঁছবে রিলায়েন্স, কত টাকা বিনিয়োগ আম্বানির ? জেনে নিন বিস্তারিত
আরও পড়ুন:- সকালের জলখাবারে এই ৬ ধরনের খাবার খেলে অ্যাসিডিটি হতে পারে