বিচারের ভুলে ২৫ বছর বন্দি থাকার পর সুপ্রিম নির্দেশে মুক্তি, পড়ুন এক নিদারুন কাহিনী

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- বিচারেও ভুল হয়। আরও এক বার স্বীকার করে নিল সুপ্রিম কোর্ট। ভুল শুধরেও নিল। তবে সেই সংশোধনের আগে আদালতের ভুলের মাসুল গুণেই সিকি শতক জেলখানায় কাটাতে হলো উত্তরাখণ্ডের ওম প্রকাশকে। যাঁর বয়স এখন পঁয়তাল্লিশ। জেলে ঢুকেছিলেন ২০ বছর বয়সে। তাঁর জীবনের পঁচিশটা বছর কে ফেরাবে, সে উত্তর অবশ্য জানা গেল না সুপ্রিম–নির্দেশেও।

তবে শেষ পর্যন্ত যে তিনি জেল থেকে বেরোতে পারছেন, ওম প্রকাশ সেটাকে ভাবতেই পারেন নতুন জীবন। কারণ, ২০১২ অবধি তাঁর মাথার উপরে ঝুলছিল মৃত্যুদণ্ডের ফাঁস। ছেলের প্রাণভিক্ষা চেয়ে ওম প্রকাশের মায়ের দ্বিতীয় আবেদনে সে বছর সারা দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি, তবে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত জেলেই থাকতে হবে। শেষ পর্যন্ত সেই মেয়াদের ১৫ বছর আগে মুক্তি পাচ্ছেন ওই যুবক আর হয়তো নিজের গায়েই চিমটি কেটে ভাবছেন, এ ভাবেও তবে ফিরে আসা যায় মৃত্যুর শীতল ছায়া থেকে!

আরও পড়ুন:– QR কোড ফেলতে পারে প্রতারণার খপ্পরে, সাবধান থাকতে কি করবেন? জেনে রাখুন

দায়রা আদালত থেকে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে বার বার যে কথা জানিয়েও এতদিন সুরাহা পাননি ছেলেটি, এ বার তাঁর সে কথাটাই মন দিয়ে শুনেছে বিচারপতি এমএম সুন্দ্রেশ এবং বিচারপতি অরবিন্দ কুমারের বেঞ্চ। যে ঘটনায় বন্দি, সেই সময়ে যে তিনি নাবালক ছিলেন, ওম প্রকাশের সে কথাটা মন দিয়ে শোনার কথা এতদিন দরকারি বলেই মনে করেনি কোনও কোর্ট। ওম প্রকাশের অব্যক্ত সেই যন্ত্রণা কোর্ট রুমে এ দফায় বাঙ্ময় হয়ে ওঠে বর্ষীয়ান আইনজীবী তথা প্রাক্তন বিচারপতি ডক্টর এস মুরলীধরের অনন্য সওয়ালে।

১৯৯৪–এ যখন বছর চোদ্দো মাত্র বয়স, পরিবারের নিদারুণ দারিদ্র শিশুশ্রমিক বানিয়েছিল ওম প্রকাশকে। মালিকের চোটপাট, গালাগাল, জুলুম আর সহ্য করতে না–পেরে নাবালক ছেলেটি মালিক ও তাঁর স্ত্রীকে আঘাত করেছিল বলে অভিযোগ। সস্ত্রীক মারা যান লোকটি। সে ঘটনায় ওম প্রকাশ অবশ্য গ্রেপ্তার হন পরে, ২০০১–এ। বয়স তখন কুড়ি–একুশ।

গ্রেপ্তারের সময়ে, তার পর দায়রা আদালতে বিচারপর্বেও অভিযুক্ত দাবি করেছিলেন, ১৯৯৪–এ ঘটনার সময়ে তিনি ছিলেন নাবালক। ফলে দেশের আইনে তাঁর নাবালক হিসাবেই বিচার পাওয়া উচিত (সর্বোচ্চ তিন বছর হোমে রেখে সংশোধনের বিধান রয়েছে)। কিন্তু দায়রা আদালত তাঁকে সাবালক ধরেই বিচার চালিয়ে যায় শুধুমাত্র ব্যাঙ্কের একটি পাসবইয়ে উল্লেখ থাকা বয়সের ভিত্তিতে!

আরও পড়ুন:– ডিজিটাল অ্যারেস্টের ভয় দেখিয়ে আত্মসাৎ 100 কোটি, জানতে বিস্তারিত পড়ুন

মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা হয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ওম প্রকাশের আবেদন অগ্রাহ্য হয়। সুপ্রিম কোর্টও মৃত্যুদণ্ডের সাজাই বহাল রাখে। রিভিউ পিটিশনও খারিজ করে শীর্ষ আদালত। প্রাণভিক্ষার আর্জি নাকচ করেন রাষ্ট্রপতি। সুপ্রিম কোর্টে কিউরেটিভ পিটিশন ফাইল করেও লাভ হয়নি। ফাঁসি হওয়াটা প্রায় অবধারিতই হয়ে গিয়েছিল। কোনও পর্যায়েই ওম প্রকাশের দাবি খতিয়ে দেখা হয়নি যে ১৯৯৪–এ সত্যিই সে নাবালক ছিল কিনা। অথচ হাড়ের অসিফিকেশন টেস্টে বয়স নির্ণয়ের পথ খোলাই ছিল।

শেষের সে দিন যখন প্রায় সমাগত, মা মানতে পারনেনি সন্তানকে এ ভাবে হারাতে হবে। মরিয়া চেষ্টায় রাষ্ট্রপতির কাছে দ্বিতীয় বার ছেলের প্রাণভিক্ষা চান। তার জেরেই ২০১২–য় মৃত্যুদণ্ড রদ হয়ে দীর্ঘ কারাবাসের নিদান হয়। কিন্তু লড়াই ছেড়ে দেননি ওম প্রকাশ এবং তাঁর পরিজন। ঘটনার সময়ে নাবালকত্বের দাবি প্রতিষ্ঠায় সুপ্রিম কোর্টে ফের কিউরেটিভ পিটিশন ফাইল করা হয়, কিন্তু তা খারিজ হয়। উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টে নতুন করে দায়ের রিট পিটিশনের পরিণতিই হয় একই।

হাইকোর্টে আর্জি খারিজের বিরুদ্ধে ফের ২০১৯–এ সুপ্রিম কোর্টে ওম প্রকাশের তরফে সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে দায়ের করা হয় স্পেশাল লিভ পিটিশন (এসএলপি)। এই পর্যায়ে গিয়ে প্রথম বারের জন্যে অসিফিকেশন টেস্টের ব্যবস্থা হয়। ধরা পড়ে, ’৯৪ নাগাদ ওম প্রকাশের বয়স ছিল চোদ্দোরই আশেপাশে। ছেলেটির এতদিনের দাবি মিলে যায় বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায়।

এসএলপি–র শুনানিতে বিচারপতি সুন্দ্রেশ এবং বিচারপতি অরবিন্দ কুমারের বেঞ্চ অবাক হয়ে যায়, এক দীর্ঘ সময় ধরে একাধিক আদালত কেন আবেদনকারীর বয়স সংক্রান্ত দাবি একটু যত্ন নিয়ে খতিয়ে দেখল না! আইনজীবী মুরলীধর মনে করিয়ে দেন, ফৌজদারি মামলায় চূড়ান্ত কোনও রায় হয়ে গেলেও জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট অনুযায়ী বয়স নিয়ে আবেদনকারীর দাবি খতিয়ে দেখার সুযোগ শেষ হয়ে যায় না। সে দাবি তোলা যায় যে কোনও সময়ে।

এই যুক্তিতে সায় দিয়েই বিচারপতিরা জানান, যা ঘটে গিয়েছে তা একান্তই বিচারের ভুল। আর একটি দিনের জন্যেও ওম প্রকাশকে সেই ভুলের খেসারত দিতে দেওয়া যাবে না। মুক্তির রায় দিয়ে উত্তরাখণ্ডের স্টেট লিগাল সার্ভিসেস অথরিটি–কে ওম প্রকাশের পুনর্বাসনে সহায়তারও নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

আরও পড়ুন:– বুদ্ধি কম থাকলে কি কেউ মা হতে পারবে না? কেন এমন প্রশ্ন তুলল বম্বে হাইকোর্ট ?

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন