বিয়ে ভাঙতে ১৫ কিমি পাড়ি, ‘বীরাঙ্গনা’র তালিকায় কিশোরী, জানুন বিস্তারিত

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করে একাদশ শ্রেণিতে কলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিল ১৭বছরের কিশোরী। লক্ষ্য ছিল, পড়াশোনা করে ভালো চাকরি পাওয়া। কিন্তু এসবের মধ্যেই পরিবারের পক্ষ থেকে বিয়ে ঠিক করা হয় তার। প্রথম থেকে আপত্তি করলেও বাড়ির লোকেরা তা মানতে চাননি। এক রকম জোর জবরদস্তি করে কিশোরীকে বিয়ের পিঁড়িতে বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার।

শেষ পর্যন্ত আর উপায় না দেখে কয়েকদিন আগে শীতের রাতে অন্ধকারের মধ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ১৫ কিমি রাস্তা পাড়ি দিয়ে এক বন্ধুর বাড়িতে পৌঁছে যায় সে। আর এভাবেই জোর করে বিয়ের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে ওই কিশোরী। চাইল্ড লাইন প্রোটেকশনের হস্তক্ষেপে আপাতত তার ঠাঁই হয়েছে সরকারি হোমে। ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ি জেলার ক্রান্তিতে। কিশোরীর জেদ ও সাহসিকতায় মুগ্ধ জেলা প্রশাসন রাজ্য সরকারের কাছে তার নাম ‘বীরাঙ্গনা’ পুরস্কারের জন্য পাঠাচ্ছে।

ক্রান্তির স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ওই কিশোরী। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছে ছিল তার। সামনে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা থাকায় প্রস্তুতিতে মগ্ন ছিল সে। কিন্তু তার মধ্যেই বাবা–মা বিয়ে ঠিক করে ফেলেন। এমনকী, একদিন ছেলের বাড়ির লোকেরা তাকে দেখতে বাড়িতে হাজির হয়ে যান। ইচ্ছে না থাকলেও অভিভাবকদের জোরাজুরিতে শেষ পর্যন্ত তাঁদের সামনে আসতে হয় কিশোরীকে।

আরও পড়ুন:–  আনন্দধারা প্রকল্পের অধীনে রাজ্যে ডাটা এনট্রি অপারেটর নিয়োগ, বিস্তারিত দেখে নিন

পাত্রী দেখে পছন্দ হওয়ায় বিয়েও ফাইনাল হয়ে যায়। এরপরেই আর বাড়িতে থাকার ঝুঁকি নেয়নি ‘বীরাঙ্গনা’। টিফিনের জমানো কয়েকটা টাকা সঙ্গে নিয়ে শীতের রাতে অন্ধকারের মধ্যে বাড়ি থেকে পালিয়ে বাসে চেপে বসে সে। ১৫ কিমি দূরে ময়নাগুড়িতে বন্ধুর বাড়ি পৌঁছে পুরোটা জানায় বান্ধবীকে।

এরপর স্থানীয় এক অপরিচিত ব্যক্তির মোবাইল থেকে চাইল্ড লাইন প্রোটেকশনে সরাসরি ফোন করে জানিয়ে দেয় সবকিছু। ফোন পেয়ে ছাত্রীকে উদ্ধার করতে আর দেরি করেননি সিডব্লুসির কর্তারা।

বৃহস্পতিবার নাবালিকা বলে, ‘চাইল্ড ম্যারেজ প্রতিরোধ নিয়ে স্কুলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিক ক্যাম্প করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছিল, এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটলে নির্দিষ্ট নম্বরে অভিযোগ জানাতে। সেই নম্বরটি আমার কাছে ছিল। বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তির মোবাইল থেকে চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসারকে ফোন করতেই ফল পাই।’

তার স্পষ্ট বক্তব্য, ‘আমি এখন ১৭। বিয়ের বয়স হয়নি। অথচ আমার পরিবার জোর করে বিয়ে দিতে চাইছে। যা আইনবিরুদ্ধ। তাই পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে আমি কোনও ভুল কাজ করিনি। প্রশাসনের সাহায্য চেয়ে ছিলাম। ওরা পাশে দাঁড়িয়েছে।’

জেলা চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার সুদীপ ভদ্র বলেন, ‘দিনকয়েক আগে একটি অচেনা নম্বর থেকে আমার মোবাইলে ফোন আসে। কল তুলতে ও প্রান্ত থেকে একটি মেয়ে জানায়, তাকে পরিবার জোর করে বিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু সে এখনও নাবালিকা। পড়তে চায়। তাই বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রশাসনের সাহায্য চাইছে। এর পরেই মহিলা থানার সাহায্য নিয়ে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়। পরে সিডব্লুসি’র মাধ্যমে তাকে হোমে পাঠানো হয়।’ এদিন প্রতিক্রিয়া জানতে কিশোরীর বাবা, এলাকার প্রতিষ্ঠিত তেজপাতা ব্যবসায়ীকে ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

আরও পড়ুন:– ডিভোর্স তো শুনেছেন, গ্রে ডিভোর্স শুনেছেন কি, এই ডিভোর্স এখন বাড়ছে

আরও পড়ুন:– ময়না-তদন্ত, ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই দেহ পাঠাচ্ছে ইউপি! বিপাকে পরিজন

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন