Bangla News Dunia , Rajib : হিসেব চাইলেই আন্দোলন! উত্তরবঙ্গে পাহাড়ের এই চেনা ছকে রাশ টানলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলায় বিভিন্ন জনজাতির জন্য তৈরি উন্নয়ন বোর্ডগুলির কার্যকলাপের উপর নজরদারিতে এ বার তৈরি করা হচ্ছে ‘মনিটরিং সেল’। তার মাথায় বসানো হচ্ছে জিটিএ-র সিইও অনীত থাপাকে। সেল-এ থাকছেন তৃণমূলের এলবি রাইও। সব উন্নয়ন বোর্ডই পুনর্গঠন করা হবে বলেও মঙ্গলবার দার্জিলিংয়ে ঘোষণা করেন মমতা।
এ দিন গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পরে এ কথা ঘোষণা করেন মমতা। এই উন্নয়ন বোর্ডগুলিকে সরকার টাকা দিলেও কোনও হিসেব পাওয়া যায় না এবং বিভিন্ন সময়ে বোর্ডগুলির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মেরও অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু হিসেব চাইলেও তা পাওয়া যায়নি। উল্টে শুরু হয়েছে আন্দোলন। সেই বিমল গুরুংয়ের সময় থেকেই চলছে এই ট্র্যাডিশন। সেই ট্র্যাডিশনে এ বার রাশ টানতেই এই ব্যবস্থা বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, জিটিএ-র কাজকর্মের উপরে সরাসরি নবান্ন নজর রাখবে বলেও বৈঠকে জানানো হয়েছে। এ দিনের বৈঠকে দার্জিলিংয়ে গুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্পেরও ঘোষণা করেন মমতা।
এ বার দেড় বছর পরে দার্জিলিংয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন দুপুরে গোর্খা পার্বত্য পরিষদের (জিটিএ) সদস্যদের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠক করেন তিনি। বিভিন্ন দপ্তরের সচিব পর্যায়ের আধিকারিকরা ছাড়াও ছিলেন দুই জেলার জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারেরা। ওই বৈঠকের পরেই তিনি ঘোষণা করেন, আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে সমস্ত উন্নয়ন বোর্ড পুনর্গঠন করার পাশাপাশি সেই সব বোর্ডের অডিট, প্রকল্পের অগ্রগতির উপর নজরদারির জন্য মনিটরিং সেল তৈরি করা হবে।
আরো পড়ুন :- পাহাড়ে কর্মসংস্থানে জোর, ৪টি ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’ গড়ার ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
আরো পড়ুন :- দুঃসংবাদ রাসেলকে নিয়ে, চিন্তায় KKR
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে পাহাড়ে পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের আন্দোলন স্তিমিত হলে উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন জনজাতির দাবিতে পৃথক বোর্ড গঠন করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সব মিলিয়ে সেই বোর্ডের সংখ্যা এখন ১৬। ফি বছর ওই বোর্ডগুলিকে দু’কোটি টাকা করে বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ওই সব বোর্ডের কাজ নিয়ে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ উঠতে শুরু করে। সরাসরি ওই দুর্নীতি নিয়ে জিটিএ’র প্রাক্তন প্রশাসক ও বর্তমান চিফ এগজি়কিউটিভ অনিত থাপা-সহ জেলা প্রশাসনের কাছে ভূরি ভূরি অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে।
এ দিনের বৈঠকে সে সব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পরে ওই বোর্ডগুলিকে জিটিএ ও জেলা প্রশাসনের প্রস্তাব অনুযায়ী পুনর্গঠন করার পাশাপাশি মনিটরিং সেল তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনীত যে হেতু জিটিএ’র নির্বাচিত প্রতিনিধি, তাই তাঁকে ওই সেলের চেয়ারম্যান করা হবে। এলবি রাই হবেন ভাইস চেয়ারম্যান।’ এলবি রাই মিরিক পুরসভার প্রশাসক তথা হিল তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান। মনিটরিং সেল-এ রাখা হবে দুই জেলার জেলাশাসককেও।
এ দিন মমতা ঘোষণা করেন, পাহাড়ে ট্র্যাফিকের সমস্যা সমাধানে অত্যাধুনিক পার্কিং ব্যবস্থার পাশাপাশি একটি মার্কেট কমপ্লেক্স নির্মাণের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। সেখানে বিল্ডিংয়ের দু’টি তলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ থাকবে। এ ছাড়াও পাহাড়ে চারটি স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান খোলারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখান থেকে পাহাড়ের যুবক-যুবতীরা তিন মাসের কারিগরি শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চাকরির সুযোগ পাবেন বলে ঘোষণা করেন মমতা।
অনীত থাপা বলেন, ‘দিদি পাহাড়ে এলে কিছু নিতে নয়, দিতেই আসেন। তিনি পাহাড়ের উন্নয়নই চান। সেটা এখন পাহাড়বাসীরা ধীরে ধীরে বুঝতে পারছেন।’
#END