ভারতীয় সেনার ‘কন্ডোম স্ট্র্যাটেজি’-তে কুপোকাত পাকিস্তান, জানুন ‘একাত্তরের যুদ্ধে’র অজানা কাহিনি

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- সম্প্রতি ১৯৭১ সালের ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ’ নিয়ে জোর চর্চা চলছে। গত অগস্টে পালা বদলের পর, সেই দেশের নয়া সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের দহরম-মহরম বেড়েছে। সেই সঙ্গে ঢাকা স্বীকার করেছে, ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের মধ্যে মেঘ জমা হয়েছে। এই অবস্থায় ফিরে ফিরে আসছে, সেই যুদ্ধের বিভিন্ন কাহিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হলেও, পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে আসল লড়াইটা তো করেছিল ভারতীয় সেনাই। আর শুনে অবাক লাগলেও, এই যুদ্ধে তাদের নানা ভাবে সহায়তা করেছিল কন্ডোম।

এক দিকে, বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় নৌবাহিনী, অন্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে ভারতীয় সেনার রাজপুত রেজিমেন্ট, কয়েকশ কন্ডোমের অর্ডার দিয়েছিল। প্রথমে আসা যাক নৌবাহিনীর কথায়। সেটা ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাস। সেনা প্রধান জেনারেল স্য়াম মানেকশ পরিকল্পনা করেছেন পাক বাহিনীকে চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেলবেন। আর এই পরিকল্পনার অন্যতম অংশ ছিল বঙ্গোপসাগরের দিক থেকে পাক সেনার সাপ্লাই লাইন বন্ধ করে দেওয়া।

আরো পড়ুন: সবুজ হচ্ছে ভারত, দেশে বৃদ্ধি পেয়েছে বনাঞ্চল, কোন রাজ্যে সবথেকে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে জানুন

এর জন্য, পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা পাক সেনার রণতরীগুলি উড়িয়ে দিতে হতো। এই কাজে নৌবাহিনী ব্যবহার করেছিল ‘লিম্পেট মাইন’ নামে এক ধরনের নাভাল মাইন। ধাতব এই মাইনগুলির ভিতরে বিস্ফোরক ভরা থাকত। গায়ে লাগানো থাকত চুম্বক। যা দিয়ে এগুলিকে লক্ষ্যবস্তুর গায়ে সহজেই আটকে দেওয়া যেত। এর জন্য প্রয়োজন ছিল ডুবুরিদের, যারা মাইনগুলি জলের নীচে নিয়ে গিয়ে রণতরীর হালের সঙ্গে লাগিয়ে দেবে।

এই মাইনগুলি নির্দিষ্ট সময়ের পরে বিস্ফোরিত হয়। ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে যেগুলি ছিল, সেগুলি বিস্ফোরিত হতো ৩০ মিনিট পর। ওই সময় পর্যন্ত জলের মধ্যে মাইনগুলিকে নিরাপদ রাখাটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যারই সমাধান করেছিল কন্ডোম।

একাধিক সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, লিম্পেট মাইনের সমস্যা সমাধানের জন্য, একাত্তরের যুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনী শত শত কন্ডোম অর্ডার করেছিল। কন্ডোম দিয়ে লিমপেট মাইনগুলি মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে জলের নীচে মাইনগুলি নিরাপদে পরিবহণ করতে কোনও সমস্যা হয়নি। আর এভাবেই পাকিস্তানি রণতরীগুলির উপর হামলা করেছিল ভারতীয় নৌসেনা।

অন্য দিকে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরএ কে’মানেক (অবসরপ্রাপ্ত), ‘ফার্স্ট পোস্ট’কে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, সেই সময় চট্টগ্রাম পাহাড়ে মোতায়েন প্রথম রাজপুত রেজিমেন্টের চতুর্থ গার্ড বাহিনীরও খুবই কাজে লেগেছিল কন্ডোম। সরকারি রেকর্ডে ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর, একাত্তরের যুদ্ধ মাত্র ১৩ দিন চললেও, সেনার বেশ কয়েকটি বাহিনীকে আরও বেশ কয়েক দিন ধরে সীমান্ত বরাবর কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছিল। সেই রকমই এক বাহিনী ছিল রাজপুত রেজিমেন্টের চতুর্থ গার্ড বাহিনী।

চট্টগ্রামের পাহাড় হয়ে মিজোরামে অনুপ্রবেশ করছিল মিজো জঙ্গিরা। তাদের আটকানোই ছিল এই বাহিনীর দায়িত্ব। কিন্তু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা এখনকার বাংলাদেশে প্রচুর নদী-নালা-জলাভূমি। ওই পরিবেশে সেনার রাইফেলগুলি জল-কাদায় মাখামাখি হয়ে মাঝেমাঝেই আটকে যেত। জলাভূমির মধ্য দিয়ে চলাফেরার সময় বন্দুকগুলো শুকনো রাখতে তাদের মাথায় এসেছিল কন্ডোমের কথা।

দলের ডাক্তারকে তারা বলেছিল, জওয়ান প্রতি তিনটি করে কন্ডোম লাগবে। ডাক্তার প্রথমে হাসলেও, পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে পরে তা দিয়েছিলেন। তার পর থেকে কন্ডোম দিয়ে বন্দুক ঢেকে জলাভূমির মধ্য দিয়ে চলাফেরা করত সেই বাহিনী। বন্দুকে জল-কাদাও লাগত না। আর দরকার মতো কন্ডোমের আবরণ খুলে সেই বন্দুক চালাতেও বেগ পেতে হত না জওয়ানদের।

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন