শুধুই নয় পুণ্যস্নান, মহাকুম্ভে গেলে এই ১২টি স্থান দর্শন করলে স্মৃতি থাকবে আজীবন !

By Bangla News Dunia Desk - Pallab

Published on:

Bangla News Dunia, Pallab : ১৪৪ বছর পর ১২টি কুম্ভের পর আসে মহাকুম্ভের (Mahakumbh 2025) মহেন্দ্রক্ষণ। এই সময় যদি ত্রিবেণী সঙ্গমে পুণ্যস্নান করা যায় তাহলে গোটা জন্মের পাপ ধুয়ে যায় বলে মনে করা হয়। এবছর ১৩ই জানুয়ারি থেকে ২৬ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৫ দিন চলবে মহাকুম্ভ। যার মধ্যে মোট ছয়টি শাহী স্নানের দিন রয়েছে। আশা করা হচ্ছে এবছর ৪০ কোটিরও বেশি মানুষ মহাকুম্ভের মেলায় আসবেন। তবে যদি আপনি মহাকুম্ভে যান তাহলে আরও কিছু জায়গা রয়েছে যেগুলো না দেখলেই নয়। আজকের প্রতিবেদনে মহাকুম্ভ মেলার সমস্ত দর্শনীয় স্থানের তালিকা দেওয়া হল।

সঙ্গমস্থল ও ত্রিবেণী সঙ্গম ঘাট

মহা কুম্ভে যাত্রা মানেই সকলে সঙ্গমস্থলে যাচ্ছেন। গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর মিলনক্ষেত্রকেই সঙ্গমস্থল বলা হয়। এখানেই কোটি কোটি পুণ্যার্থীরা স্নানের জন্য আসেন। গঙ্গা ঘাটে সকালের সূর্যোদয় হওয়ার পর থেকেই মন্ত্রোচ্চারণের সাথে পুণ্যস্নান করেন। তবে এরপর যেটা আপনার অবশই ঘুরে দেখা উচিত সেটা হল ত্রিবেণী সঙ্গম। যেখানে প্রতিদিন সন্ধ্যে হলেই গঙ্গা আরতি হয়। মহাকুম্ভ চলাকালীন প্রতিদিন মহিলা পুরোহিতদের দ্বারা এখানে আরতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেটা এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক অনুভূতির সৃষ্টি করে। চাইলে এখন থেকে বোটে করে ত্রিবেণী সঙ্গম দর্শন করতে পারেন।

২। শ্রী বড় হনুমান জি মন্দির | Shree Bade Hanuman Ji Mandir

প্রয়াগরাজ গেলে যে জায়গা আপনার অবশ্যই ঘোরা উচিত তার মধ্যে একটি হল শ্রী বড় হনুমান জি মন্দির। সাধারণত মন্দিরে হনুমানজীর দাঁড়িয়ে থাকা মূর্তি দেখা যায়। কিন্তু এখানে শায়িত অবস্থায় হনুমানের মূর্তি দেখতে পাবেন আপনারা। যেখানে একহাতে অহিরাবণ ও অন্য হাতে বাকি রাক্ষসদের চেপে রেখেছেন। মন্দিরের গর্ভগৃহে ৮.১ ফুট নিচে ২০ ফুট লম্বা এই হনুমান মূর্তি রয়েছে যা দেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন।

৩। শ্রী অক্ষয়বট মন্দির পাতালপুরী

বড় হনুমান জী মন্দির দর্শন করা হয়ে গেলে আপনি চলে যেতে পারেন শ্রী অক্ষয় বট মন্দিরে। হিন্দু পুরাণ ও জৈনদের ধর্মগ্রন্থে এই বট গাছের উল্লেখ রয়েছে । পদ্ম পুরাণের মতে, যে নিষ্ঠা সহকারে অক্ষয়বটের পুজো করে সে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়ে যায়।

৪। শ্রী আদি শঙ্কর বিমান মন্ডপম | Shree Adi Shankar Mandapam

ত্রিবেণী সঙ্গমের কাছেই আরেকটি বিখ্যাত হিন্দু মন্দির হল শঙ্কর বিমান মণ্ডপম এটি মূলত আদি শঙ্করাচার্যের স্মৃতিতে বানানো হয়েছিল। মন্দিরের ভিতরে শিবের মূর্তি রয়েছে। মন্দিরটি ১৬টি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। বাইরে থেকে যেমন সুন্দর তেমনি ভিতরেও সুন্দর কারুকার্য ও শিবের পাশাপাশি একাধিক দেবী দেবতারা মূর্তি রয়েছে। মান্যতা রয়েছে এখানে দর্শন করলে তিরুপতি বালাজি দর্শন হয়ে যায়।

৫। ডিজিটাল মহাকুম্ভ এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার | Digital Maha Kumbh Experience Centre

আদি শঙ্কর বিমান মন্ডপমের ঠিক উল্টো দিকেই রয়েছে ডিজিটাল মহাকুম্ভ এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার। যেখানে ৫০ টাকার প্রবেশ মূল্য দিয়ে ঢোকার পর ভিতরে মহাকুম্ভের গোটা কাহিনী ডিজিটাল ফর্মেরমাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। বড় স্ক্রিনের মাধ্যমে দুর্দান্ত ভিজ্যুয়াল এফেক্টে দেখতে পাবেন এই এক্সপেরিয়েন্স সেন্টারে। বিশাল শিব মূর্তি থেকে সমুদ্র মন্থন দেখা যাবে। একইসাথে ত্রিবেণী সঙ্গমের থ্রিডি ভ্রমণের অনুভূতি থেকে পাওয়া যাবে।  জানলে অবাক হবেন এই এক্সপেরিয়েন্স সেন্টারে AI এরও ব্যবহার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন:– বিপাকে দিঘার ২৪টি হোটেল, বাসি খাবার বিক্রি, ধরা পড়ল আরও অনেক কিছুই

৬। নাগ বাসুকি মন্দির | Naag Basuki Mandir

প্রয়াগরাজের দর্শনীয় মন্দিরের মধ্যে আরেকটি হল নাগ বাসুকি মন্দির। এই মন্দিরের উল্লেখ পদ্ম পুরাণ থেকে শ্রীমদ্ভগবত গীতাতেও রয়েছে। পুরাণমতে সমুদ্র মন্থনের সময় বাসুকিনাগকে ব্যবহার করা হয়েছিল। যার ফলে তাঁর গায়ে জ্বলন ধরতে শুরু করে। তখন ভগবান বিষ্ণু তাকে প্রয়াগরাজে সরস্বতী নদীতে এসে কিছুদিন বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বলেন।

৭। শ্রী মানকামেশ্বর মহাদেব মন্দির | Shri Mankameshwar Mahadev Temple

নাগ বাসুকি মন্দির ভ্রমণের পর আপনি চলে যেতে পারেন শ্রী মানকামেশ্বর মন্দির দর্শনের জন্য। মুঘল বাদশাহ আকবরের দুর্গের কাছে যমুনা নদীর তটে রয়েছে এই মন্দির। এই মন্দিরে পূজা করে জল অভিষেক করলে ভক্তদের সমস্ত মনোকামনা পূর্ণ হয়ে বলে বিশ্বাস করা হয়। তাই প্রতিবার কুম্ভ মেলায় এলে লক্ষাধিক মানুষ এই মন্দিরে এসে পূজা দিয়ে যান।

৮। শ্রী আলোপি শঙ্করী দেবী শক্তি পীঠ মন্দির | Alop Shankari Devi Shakti Peeth Mandir

প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমস্থলের কাছেই রয়েছে এই আলোপি শঙ্করী দেবী মন্দির। মন্দিরের ভিতরে কোন বিগ্রহ বা মূর্তি নেই। বরং কাঠের একটি বাহন রয়েছে ‘ডোলি’ নামক। সেটিকেই পূজা করা হয়ে থাকে। সতীর মৃত্যর পর মহাদেব যখন চক্র নিক্ষেপ করেন ও দেহের টুকরো ভিন্ন ভিন্ন স্থলে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানেই দেহাংশ পড়েছিল সেখানে মন্দির তৈরী হয়েছে। জানা যায় ‘আলোপি’তে শেষ দেহাংশ পড়েছিল।

৯। মা কল্যাণী দেবী শক্তিপীঠ মন্দির | Kalyani Devi Shaktipeeth Temple

আলোপি শঙ্করী দেবী শক্তিপীঠ দর্শনের পরেই আপনি দেখে নিতে পারেন মা কল্যাণী দেবী শক্তিপীঠ মন্দির। সতীর তিনটি আঙ্গুল এই জায়গায় পড়েছিল বলে জানা যায়। তারপরেই এই মন্দির তৈরী হয়েছিল। এখানে পুজো দিয়ে মায়ের কাছে প্রার্থনা করলে সমস্ত মনোস্কামনা পূর্ণ হয় বলে জানা যায়।

১০। শিবালয় থিম পার্ক | Shivalaya Theme Park

আপনি যদি মহাকুম্ভ স্নান করতে প্রয়াগরাজ গিয়ে থাকেন তাহলে শিবালয় থিম পার্কটি অবশ্যই ঘুরে দেখতে পারেন। এই পার্কটিকে ভারতের মাপের আকারে তৈরী করা হয়েছে। এই পার্কে ১২ টি জোত্যিরলিঙ্গ, চার ধাম থেকেই শুরু করে সমুদ্র মন্থনের মত একাধিক পৌরাণিক কাহিনী দেখতে পাবেন। এই পার্কে প্রবেশের জন্য ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হয়।

১১। ওয়াটার লেজার শো | Water Laser Show

ডিজিটাল মহাকুম্ভ এক্সপেরিয়েন্স ও শিবালয় থিম পার্ক ভ্রমণের পর যেটা অবশ্যই দেখতে হবে সেটা হল ওয়াটার লেজার শো। ২২ কোটি টাকা খরচ করে এই লেজার লাইট শো তৈরী করা হয়েছে। যেটা দেখার জন্য আপনাকে কালী ঘাটের বোট ক্লাবের কাছে চলে আসতে হবে। নিউ যমুনা বিচ ও পুরোনো যমুনা বিচের মাঝেই এই শোয়ের আয়োজন করা হয়েছে, যেটা প্রতিদিন সন্ধ্যে ৭টা থেকে রাত্রি ৯টা পর্যন্ত দুটি শো দেখানো হয়। এই শো দেখার জন্য আলাদা করে কোনো টাকা দিতে লাগে না। তবে সঠিক সময়ে আপনাকে ঠিক জায়গায় পৌঁছাতে হবে অদ্ভুত এই লেজার লাইট শো দেখার জন্য।

১২। উত্তরপ্রদেশ দর্শন মন্ডপম | Uttar Pradesh Darshan Mandapam

মহাকুম্ভ ২০২৫ এ স্নান করতে গেলে যেটা না দেখলেই নয় সেটা হল সেক্টর ৭ এর কামধেনু দ্বারের পাশেই উত্তরপ্রদেশ দর্শন মণ্ডপম। এখানে গোটা উত্তর প্রদেশের সমস্ত দর্শনীয় স্থান থেকে শুরু করে প্রয়াগরাজের দর্শনীয় স্থানের ছোট সংস্করণ তৈরী করা হয়েছে। একইসাথে ডিজিটাল টেকনোলজির সাহায্যে আগত পর্যটক তথা ভক্তদের জন্য এক অনন্য এক্সপেরিয়েন্সের আয়োজন করা হয়েছে।

Bangla News Dunia Desk - Pallab

মন্তব্য করুন