শ্মশানেই জীবনের জয়গান, ভবিষ্যতের কারিগর তৈরিতে স্কুল চালাচ্ছেন সুমিত

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- শ্মশানের মধ্যে স্কুল ! শুনতে অবাক হলেও এটাই সত্যি ৷ ঐতিহ্যগত বাধা ভেঙে যাদের সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন তাদেরই শিক্ষা দিচ্ছেন বিহারের মুজফফরপুরের সুমিত কুমার ৷ তিনিই খুলেছেন এই স্কুল ৷ নাম ‘আপ্পন পাঠশালা’ (আমাদের পাঠশালা) ৷

এই বিষয়ে সুমিতবাবু জানান, তিনি নিজে বিচারপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন ৷ কিন্তু একদিন শ্মশানে আসার পর সেখানকার শিশুরা তাঁকে মুগ্ধ করেছিল ৷ দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া সেই স্কুলছুট বাচ্চাগুলির ভবিষ্যতের জন্য কিছু করার ইচ্ছাই তাঁকে এই স্কুল শুরু করতে প্ররোচনা দিয়েছিল ৷

Appan Pathsala in Bihar

ক্লাস নিচ্ছেন আপ্পন পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা সুমিত কুমার 

 

স্কুল চালুর নেপথ্য ইতিহাস :

সুমিতের জানান, একবার তাঁর বন্ধুর আত্মীয়ের শেষকৃত্য করতে শ্মশানে এসেছিলেন ৷ সেখানে তিনি দেখেন কিছু শিশু ফল ও অর্থ সংগ্রহের জন্য জ্বলন্ত চিতার চারপাশে দৌড়চ্ছে ৷ সুমিত তখন বাচ্চাদের ডেকে জিজ্ঞাসা করেন, তারা কী পড়াশোনা করে ?” বাচ্চারা উত্তর দেয়, পড়াশোনা করে তুমি কী করেছ! এই উত্তরই অবাক করে সুমিতকে ৷ সেদিনই শপথ নেন লেখাপড়া শেষে তারা কী করতে পারবে সেটা এই শিশুদের বোঝাবেন তিনি ৷

আরও পড়ুন:– ৭ নতুন IPO-তে লগ্নির সুযোগ মিলবে এ সপ্তাহে, নজর থাকবে এই ৫ সংস্থার লিস্টিংয়ে

Appan Pathsala in Bihar

আপ্পন পাঠশালায় ক্লাসে মগ্ন খুদের দল 

বর্তমানে সেই শ্মশান শিশুদের হাসি ও পড়াশোনার শব্দে ভরা ৷ কারণ 2017 সালের মার্চ মাসে সুমিত সেখানে একটি স্কুল খোলেন ৷ যার নামকরণ করা হয় ‘আপ্পন পাঠশালা’ ৷ যাতে বাচ্চারা মনে করে এই পাঠশালা তাদের নিজেদের ৷

 

‘আপ্পন পাঠশালা’র প্রতিষ্ঠা :

স্কুলটির প্রতিষ্ঠার পিছনে সুমিতের ইচ্ছে ছিল তিনি শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষা দেবেন ৷ যে সমস্ত শিশুর পরিবার পড়াশোনার খরচ বহন করতে পারে না এবং যারা অজ্ঞ তাঁদের মধ্যেই জ্বালাবেন শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো ৷ এই স্কুলটি তাদের শুধু শিক্ষাই দেবে না, তাদের স্বপ্নকেও ডানা মেলতে সাহায্য করবে ৷

Appan Pathsala in Bihar

জৈব পদ্ধতিতে চাষ শেখানো হচ্ছে আপ্পন পাঠশালার ছাত্রীদের 

 

সাত বছর ধরে ‘মুক্তিধাম’-এর বস্তির শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি জৈব চাষের কৌশল শেখাচ্ছেন সুমিত ৷ স্কুল শুরু হওয়ার সময় পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল 8 থেকে 10 জন ৷ এখন সেটা দাঁড়িয়েছে 130 জনে ৷

সুমিতের কথায়,”বাচ্চাদের ধীরে ধীরে ক্লাসে বসার অভ্যাস তৈরি হল ৷ তারপর তারা পড়াশোনা শুরু করল ৷ এখন সবাই নিয়মিত স্কুলে আসে ৷ অভিভাবকরাও তাঁদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করাতে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত হন ৷ প্রতি বছর এই স্কুল থেকে প্রায় 15 থেকে 20 জন পড়ুয়া প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় ৷

আপ্পন স্কুলের পড়াশোনা :

এই স্কুলে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে ৷ সমস্ত শিশুদের জন্য পোশাক, ব্যাগ, নোটবুক, বই, পেন্সিল-সহ অন্যান্য জিনিসপত্র এবং আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা করেছেন সুমিত । সাত বছরে, তিনি আশেপাশের সরকারি স্কুলে 250টিরও বেশি ছেলেমেয়েকে ভর্তি করেছেন ৷ পড়ুয়ারা বলে যে তারা সুমিতের অধীনে পড়াশোনা করা উপভোগ করে ৷

Appan Pathsala in Bihar

আপ্পন পাঠশালায় ক্যারাটে প্রশিক্ষণ 

 

সুমিতের কথায়,”এই স্কুলের কারণে শিশুদের জীবন ফিরে আসছে সমাজের মূল স্রোতে ৷ একটা সময় যারা বলত পড়াশোনা করে কী হবে, এখন তারা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় ৷ এই শিশুদের শিক্ষার জন্য আমরা ‘আপ্পন’ স্কুল চালু করেছিলাম ৷ আমার বিশ্বাস, এই শিশুরা লেখাপড়া করে শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান হলে তারা খারাপ সঙ্গ থেকে দূরে থাকবে । তারা শোষিত হবে না ৷ তাদের দেখে আশেপাশের মানুষ অনুপ্রাণিত হবে । আগামী সময়ে, তারা তাদের সমাজ এবং পরিবারের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে উঠবে ৷ সমাজে অভিন্নতা থাকবে । উচ্চ-নীচের বৈষম্যের অবসান ঘটবে । এমন অনুভূতির জন্ম হবে যেখান থেকে গরিব পরিবারের সন্তানও প্রশাসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে ৷”

আরও পড়ুন:– ‘চাঁদ নয়, সোজা মঙ্গলে কলোনি’, বড় লক্ষ্য মাস্কের, বিস্তারিত জানুন

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন