Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- সঞ্জয় রায় কি একাই অপরাধী? নাকি সঙ্গে আরও এক বা একাধিক ব্যক্তি জড়িত ছিল আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের খুন-ধর্ষণের ঘটনায়? সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্সেস ল্যাবরেটরি (সিএফএসএল)–এর রিপোর্টে সে প্রশ্ন জোরালো হয়ে উঠছে।
আগাগোড়াই আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা দাবি করে এসেছেন, আরজি করের ঘটনায় সঞ্জয়ের সঙ্গে নির্ঘাত আরও কেউ জড়িয়ে। স্নাতকোত্তর পড়ুয়া তরুণী চিকিৎসকের দেহে আঘাতের চিহ্ন ও তাঁকে খুনের ধরন দেখেই এই সন্দেহ উঁকি দিয়েছে অনেকের মনে।
এ বার সেই সন্দেহ উসকে দিলো সিএফএসএল একটি রিপোর্ট। সেই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, নির্যাতিতার বিভিন্ন যৌনাঙ্গে একাধিক ব্যক্তির মিশ্র ডিএনএ মেলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। স্বাভাবিক ভাবেই গত ৯ অগস্ট ভোররাতে, সঞ্জয়ের সঙ্গে আরও কেউ ছিলেন কি না সে প্রশ্ন আরও বেশি ভাবাচ্ছে এখন সকলকে।
নির্যাতিতা এবং অভিযুক্ত সঞ্জয়ের নানা শারীরিক নমুনার পরীক্ষা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে কয়েকটি ডিএনএ পরীক্ষাও। কিন্তু সব পরীক্ষার রিপোর্ট আসেনি এখনও। এরই মধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে ২১ অগস্ট সিবিআই-কে জমা দেওয়া সিএফএসএলের একটি রিপোর্ট।
সিএফএসএলের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সোমা রায় স্বাক্ষরিত সেই রিপোর্টের ১২ নম্বর পাতায় উল্লেখ করা হয়েছে, নির্যাতিতার স্তনবৃন্ত বা নিপল, পায়ু বা অ্যানাস এবং ভালভা বা যোনিদ্বারের সোয়াব নমুনায় ‘মাল্টিপল অটোজ়োমাল এসটিআর জেনেটিক প্রোফাইল’-এর সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। অর্থাৎ, একাধিক ব্যক্তির ডিএনএ থাকতে পারে। কারণ নমুনায় ‘হাইলি কন্টামিনেটেড ডিএনএ’ বা প্রবল মিশ্রিত ডিএনএ-র অস্তিত্ব মিলেছে।
ফরেন্সিক মেডিসিনের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘রিপোর্টে যদি এ কথা বলা থাকে, তা হলে সত্যিই কিন্তু একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে মনে রাখতে হবে, এই মিশ্রিত ডিএনএ যেমন একাধিক অপরাধীর হতে পারে, তেমনই সঞ্জয় রায় এবং কিছু জীবাণুর মিশ্রিত ডিএনএ-ও হতে পারে।’ যদিও এই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে গত ২১ সেপ্টেম্বর যে রিপোর্ট সিবিআই-কে জমা দিয়েছিল মাল্টি-ইনস্টিটিউশনাল মেডিক্যাল বোর্ড (এমআইএমবি), তাতেও বলা হয়েছে, একজনের পক্ষে এই অপরাধ ঘটানো সম্ভব হলেও হতে পারে। অর্থাৎ, একজনই যে জড়িত, সে কথা দ্ব্যর্থহীন ভাবে নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি।
এইমসের ফরেন্সিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আদর্শ কুমারের নেতৃত্বে বিভিন্ন ডাক্তারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ১১ সদস্যের যে মেডিক্যাল বোর্ড গঠিত হয়েছিল সিবিআই-কে সহায়তা করার জন্য, সেই এমআইএমবি-র তরফেই এই রিপোর্ট দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে। চিকিৎসক সংগঠন ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক রাজীব পাণ্ডে বলেন, ‘এমআইএমবি-কে সিবিআই প্রশ্ন করেছিল, একজনের পক্ষে কি এ কাজ করা সম্ভব? তার উত্তরেই ৩ নম্বর পয়েন্টে এমআইএমবি জানিয়েছে, সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সিবিআই যদি উল্টো জিজ্ঞেস করত, একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে কি না, তার উত্তরও এমআইএমবি নিঃসন্দেহে একই দিত।’
সু্প্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার অন্যতম পক্ষ যে আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা, তাঁদের অনেকেই আবার জানাচ্ছেন, একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না সিসিটিভি ফুটেজের কারণেও। কারণ, সিবিআই তদন্তেই উঠে এসেছে যে, গত ৯ অগস্ট ভোর ৩.০৬ থেকে ৪.৩১ পর্যন্ত খুন-ধর্ষণের ঘটনার অকুস্থল বলে উঠে আসা সেমিনার রুমের দিকে যেতে দেখা গিয়েছে মোট চার জনকে। তার মধ্যে তিন জনকে শনাক্ত করা যায়নি। একমাত্র শনাক্ত করা গিয়েছে সঞ্জয়কেই। এবং আশ্চর্যজনক ভাবে বাকি তিন জনকে খুঁজে বের না–করে কেবলমাত্র সঞ্জয়কেই একমাত্র অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে!
তাই প্রশ্ন উঠছে, বাকি তিন জন কারা? তাদের মধ্যে এক বা একাধিক ব্যক্তি কি জড়িত থাকতে পারে এই ঘটনায়? উত্তর অধরা। তবে সঞ্জয় যে অপরাধ করেছিলই, সে ব্যাপারে সকলেই নিঃসন্দেহ। সিএফএসএলের রিপোর্টও সেই তথ্যকে সমর্থন করে। কারণ, নির্যাতিতার একাধিক যৌনাঙ্গে মেলা লালা ও নখের দাগের নমুনার সঙ্গে হুবহু মিলে গিয়েছে সঞ্জয়ের ডিএনএ প্রোফাইল।
নির্যাতিতার যোনিতে কোনও বীর্যের নমুনা মেলেনি বলেও অবশ্য জানিয়েছে এমআইএমবি। তারা জানিয়েছে, এর তিনটি কারণ থাকতে পারে। হয় বীর্যপাত করা হয়নি যোনির মধ্যে অথবা কন্ডোম ব্যবহার করা হয়েছিল। কিংবা পুরুষাঙ্গ ছাড়া অন্য কোনও অঙ্গ অথবা কোনও ভোঁতা দণ্ডাকার বস্তু প্রবেশ করানো হয়েছিল নির্যাতিতার যোনিপথে।
তবে এই নৃশংস ঘটনার নেপথ্যে আর কেউ জড়িত কি না, সেই প্রশ্নের যুক্তিগ্রাহ্য সদুত্তর এখনও মেলেনি। তা মেলার আগেই সিবিআই চার্জশিট জমা করে দিয়েছে এবং শুরু হয়ে গিয়েছে সঞ্জয়ের ট্রায়ালও। অথচ চিকিৎসকদের আক্ষেপ, অনেক আগেই সিবিআই হাতে পেয়ে গিয়েছিল সিএফএসএলের রিপোর্ট!