‘সন্ন্যাসী’র ছদ্মবেশে অপরাধীকে ধরে পুলিশ, বেঙ্গালুরুর ঘটনা হার মানাবে সিনেমাকে

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- পুলিশ চাইলে কী না পারে! অপরাধীকে ফাঁদে ফেলতে মাঝেমধ্যে ছদ্মবেশও  নিতে হয় পুলিশকে। টানটান ক্রাইম থ্রিলার সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ়-এ এরকম উদাহরণ রয়েছে অজস্র। বাস্তবের মাটিতেও রয়েছে এর প্রমাণ। ২০২২ সালে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি নগরী বেঙ্গালুরুতে এক মহিলাকে অ্যাসিড হামলার ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় গোটা রাজ্যে। প্রধান অভিযুক্তকে ধরতে অভিনব পন্থা নিতে হয় পুলিশকে। যা জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ়-এর থেকে কোনও অংশে কম নয়।

২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল সকাল সাড়ে আটটায় অফিসে ঢুকছিলেন এক তরুণী। আগে থেকেই ওঁত পেতে বসেছিল অভিযুক্ত। অফিসে ঢোকার মুখেই তার গায়ে সালফিউরিক অ্যাসিড ছোড়া হয়। তরুণীর হাত, পা, বুক, পিঠ গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অভিযোগ পাওয়ার পরেই তল্লাশি শুরু হয় সেই অভিযুক্তের। অ্যাসিড হামলার ঘটনার প্রতিবাদ শুরু হয় গোটা দেশ জুড়ে।

সেই সময়ে বেঙ্গালুরু শহরের পুলিশ কমিশনার ছিলেন কমল পন্থ। ২০০ জনেরও বেশি পুলিশ কর্মীদের নিয়ে একটি টিম তৈরি হয়। দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে তল্লাশি শুরু হয় অভিযুক্তের। কিন্তু বহু চেষ্টার পরেও হাতে কোনও ‘লিড’ মেলেনি পুলিশের।

আক্রান্ত তরুণী চিকিৎসারত অবস্থায় নাগেশ নামে এক ব্যক্তির কথা জানায়। নাগেশ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বলে জানায় তরুণী। নাগেশ ওই তরুণীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার পর মহিলা রাজি না হওয়ায় এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অনুমান করা হয়। নাগেশের একটি ছবি সম্বল করে শুরু হয় চিরুনি তল্লাশি।

অ্যাসিড হামলার পর নিজেকে অন্তরালে নিয়ে যাওয়ার জন্য দারুণ উপায় অবলম্বন করে ক্ষুরধার বুদ্ধির নাগেশ। ঘটনার পরেই নিজের মোবাইল ফোন ফেলে দেয় সে। পরিবারের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে স্থানীয় একটি আশ্রমে চলে যায়। নিজের চুল-দাড়ি কামিয়ে সেই আশ্রমে থাকতে শুরু করে নাগেশ।

আরো পড়ুন: সবুজ হচ্ছে ভারত, দেশে বৃদ্ধি পেয়েছে বনাঞ্চল, কোন রাজ্যে সবথেকে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে জানুন

নাগেশের সন্ধানে অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, তামিলনাড়ু এবং কেরালার বেশ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েও লাভ হয়নি। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সাধারণত কোনও অপরাধের ক্ষেত্রে আমরা অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার পরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অপরাধের উদ্দেশ্য জানতে পারি। কিন্তু এই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আমরা উদ্দেশ্য জানতাম। কিন্তু তাকে গ্রেপ্তার করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’

দু’সপ্তাহ খোঁজার পরেও কার্যত হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল পুলিশ। ততদিনে নাগেশের ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন শহরে। নাগেশের ডেবিট কার্ড ট্র্যাক করেও মেলেনি কোনও সূত্র। অবশেষে তামিলনাড়ুর তিরুভান্নামালাই জেলা থেকে পুলিশের এক চর ‘টিপস’ দেয়। স্থানীয় আশ্রমে ঠাঁই নেওয়া এক ব্যক্তির মুখের আদলের সঙ্গে মিল রয়েছে নাগেশের।

আশ্রম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। দু’জন পুলিশ কর্মী সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে হাজির হয় সেই আশ্রমে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে নিরীক্ষণ করা হয় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে। অবশেষে গ্রেপ্তার করা হয় অ্যাসিড হামলায় অভিযুক্ত নাগেশকে। অন্যদিকে, চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার পর নিজের কর্মজীবনে ফিরে গিয়েছেন তরুণী।

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন