সাত দিনের বেশি চলত না দেশ, দেউলিয়া হওয়ার থেকে ভারতকে কীভাবে বাঁচিয়েছিলেন ড. মনমোহন?

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- চলে গেলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তবে অনেকেই জানেন না ১৯৯১ সালে প্রায় দেউলিয়া হওয়ার মুখে দাঁড়িয়েছিল ভারত। বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার এতটাই তলানিতে এসে ঠেকেছিল যে, তা কোনোমতে মাত্র দুই সপ্তাহ আমদানির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারত। মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছে গিয়েছিল দুই অঙ্কের সংখ্যায়। রাজস্বের বিশাল ঘাটতি গোটা দেশকে পঙ্গু করে দেওয়ার মতো জায়গায় নিয়ে চলে গিয়েছিল। সেই সঙ্কট থেকে ভারতকে বের করে এনেছিলেন ড. মনমোহন সিং। শুধু দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করাই নয়, তাকে পৌঁছে দিয়েছিলেন এক মজবুত জায়গায়।

ওই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন ছিল কিছু নজিরবিহীন পদক্ষেপের। এই বিষয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিং পাশে পেয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসীমা রাও-কে। করেছিলেন বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ। যা ভারতের কয়েক দশকের অর্থনৈতিক নীতিগুলি ভেঙে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল উদারীকরণের পথে।

১৯৯১-এর জুলাইয়ে ভারতীয় মুদ্রার দাম দুইবার অবমূল্যায়ন করা হয়েছিল। ডলারের প্রেক্ষিতে দাম পড়েছিল ভারতীয় মুদ্রার। ফলে ভারতীয় পণ্যের দাম কমে গিয়েছিল বিদেশের বাজারে। এতে রপ্তানি উৎসাহ পেয়েছিল। ফলে ভারতের ঘরে ঢুকেছিল অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা। একই সময়ে, আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কগুলির কাছে ৪৭ টন সোনা রেখে ৬০ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছিল ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ-এর থেকে ঋণ নিয়েছিল আরও ২০০ কোটি ডলার।

আরো পড়ুন: স্টেট ব্যাংকে নতুন করে ৬০০ টি শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ চলছে! মাসিক বেতন ৪৮,০০০ টাকা, শীঘ্রই আবেদন করুন

তবে এই পদক্ষেপগুলি ছিল সাময়িক। তখনকার মতো অর্থনীতিকে রক্ষার প্রচেষ্টা। ওই বছরের ২৪ জুলাই সংসদে তার প্রথম বাজেট পেশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিং। বাজেটে তিনি এমন কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যার মধ্যে লুকিয়ে ছিল ভারতের অর্থনৈতিক ভবিষ্যত। তাঁর বাজেট ভেঙে দিয়েছিল লাইসেন্স রাজ।

তার আগে খাতে কতটা উৎপাদন হবে তা সরকারই ঠিক করত। সিমেন্ট, মোটরগাড়ি থেকে শুরু করে প্রতিটি খাতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ছিল। ফলে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে থমকে গিয়েছিল ভারতীয় শিল্পের বৃদ্ধি। এই আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের জাল ছিন্ন করে শিল্পের বৃদ্ধিকে উৎসাহ দিয়েছিলেন ড. মনমোহন সিং।

পাশাপাশি, শিথিল করা হয়েছিল বিদেশি বিনিয়োগের উপর বিধিনিষেধ। ৫১ শতাংশ পর্যন্ত ইকুইটি শেয়ারের জন্য বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উঠে গিয়েছিল সরকারি অনুমোদনের প্রয়োজনীয়তা। এ ছাড়া, ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র বাদে বাকি সব খাতের জন্য বাতিল করা হয়েছিল শিল্প লাইসেন্স।

তবে এই সংস্কারগুলি করতে গিয়ে কর্পোরেট ট্যাক্স বাড়াতে হয়েছিল মনমোহন সিংকে। রান্নার গ্যাস এবং চিনির মতো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলিতে ভর্তুকি কমাতে হয়েছিল। দাম বাড়াতে হয়েছিল পেট্রলের। কাজেই এই সকল পদক্ষেপে অত্যন্ত ঝুঁকি ছিল। একটু এদিক-ওদিক হলে মানুষ ছিঁড়ে খেত মনমোহন সিংকে।

আরো পড়ুন: কেন ভারতের অর্থনীতির উন্নয়নের ‘গুরুঠাকুর’ বলা হয় মনমোহন সিং-কে ? জানুন বিস্তারিত

 

তাঁর মেয়ে দমন সিংয়ের লেখা জীবনী-তে, মনমোহন সিং নিজেই বলেছেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাও) মজা করে আমায় বলেছিলেন, পদক্ষেপগুলি ঠিকঠাক কাজ করলে আমরা সবাই এর কৃতিত্ব দাবি করব। আর যদি কিছু গন্ডোগোল হয়, তাহলে আমাকে বরখাস্ত করা হবে।’

তবে, নিজের উপর ভরসা ছিল মনমোহন সিংয়ের। নিজের অর্থনীতির জ্ঞানের উপর আস্থা ছিল। তাই তাঁর ১৯৯১ সালের বাজেট বক্তৃতায় তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘সময়োপযোগী কোনও ধারণাকে পৃথিবীর কোনও শক্তি থামাতে পারে না।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘একটি জাতি হিসাবে, আমাদের অগ্রাধিকারগুলি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। দেখতে হবে যাতে প্রতিটি ভারতীয় একটি সুস্থ এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে।’

সংস্কারের এই পথ থেকে সরে আসেননি মনমোহন সিং। একটি নতুন বাণিজ্য নীতি এনেছিলেন, যা আমদানি-রপ্তানির বিধানগুলি সহজ করেছিল। রাজা চেলিয়াহ এবং এম নরসিংহমের মতো অর্থনীতিবিদদের নেতৃত্বাধীন কমিটিগুলি ভারতের আর্থিক ও কর ব্যবস্থায় কাঠামোগত পরিবর্তন এনেছিল। এই সংস্কারগুলি বিদেশি বিনিয়োগ টেনেছিল ভারতে। শিল্পের আধুনিকিকরণ ঘটিয়েছিল। আর আগামী কয়েক দশকের অর্থনৈতির বৃদ্ধির ভিত গড়ে দিয়েছিল।

কতটা কাজে দিয়েছিল এই সংস্কারগুলি? মনমোহন অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার ছিল ১০০ কোটি ডলারেরও কম। মাত্র দুই বছরের মধ্যে তা তিনি ১০০০ কোটি ডলারের উপরে পৌঁছে দিয়েছিলেন। দেশকে যে শুধু অর্থনৈতিক পতনের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন তা নয়, বরং, ভারতকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করার পথে নিয়ে এসেছিলেন। না হলে হয়তো ২০১৯ সালের মধ্যে বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি হতে পারত না ভারত।

আরো পড়ুন:  কংক্রিটের থেকেও শক্ত অংশ রয়েছে প্রতিটি মানুষের শরীরে, কোথায় জেনে নিন

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন