Bangla News Dunia, দীনেশ :- তৃষ্ণার জলেও বিষ। সেঁকো বিষে জর্জরিত বাংলা, বিহারের বিস্তীর্ণ এলাকা। এমনিতেই গঙ্গা অববাহিকা অঞ্চলে আর্সেনিক দূষণজনিত বিপদের কথা বিজ্ঞানীরা বলছেন বহুযুগ আগে থেকেই। এবার জানা গেল, আর্সেনিক মিশ্রিত ভূগর্ভস্থ জলের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে বাংলা (West Bengal) ও বিহার (Bihar), এই দুই রাজ্যে। জাতীয় পরিবেশ আদালতে এ কথা কবুল করেছে কেন্দ্র। রিপোর্ট বলছে, বাংলার যেসব জেলার মাটির আর্সেনিক (Arsenic Pollution) বিপজ্জনক মাত্রায় রয়েছে, তাদের মধ্যে কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদা অন্যতম।
আরো পড়ুন :- ইসলামিক সাম্প্রদায়িক শক্তির সমর্থনে জিতেছেন গান্ধী ভাই-বোন ! বিস্ফোরক সিপিএম নেতা
কেন্দ্রের বক্তব্য, কৃষিক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করা হয়। সে ক্ষেত্রে এই আর্সেনিক মিশ্রিত দূষিত জলের কারণে চাষের জমিতে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে। মূলত ভূগর্ভস্থ জলের থেকেই চাষের জমিতে আর্সেনিক প্রবেশ করে এবং এই বিষ ফসলে মিশে খাদ্যশৃঙ্খল তছনছ করে দেয়।
চাষের ক্ষেতে উৎপাদিত চালের ওপর আর্সেনিক দূষণের প্রভাব সংক্রান্ত একটি মামলা চলছে জাতীয় পরিবেশ আদালত (এনজিটি)-এ। ধানচাষের জন্য সাধারণত বেশি জলের প্রয়োজন হয়। তাই ধানের ওপর ভূগর্ভস্থ জলে মিশে থাকা আর্সেনিকের প্রভাবও বেশি পড়ার সম্ভাবনা নিয়ে মামলা হয়েছে।
আরো পড়ুন :- বাংলাদেশের মন্দিরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পুরোহিতের দেহ উদ্ধার, ইউনূসের নিন্দায় ইসকন
ওই মামলায় কেন্দ্রের বক্তব্য জানতে চেয়েছিল এনজিটি। সম্প্রতি কেন্দ্রের তরফে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে আদালতে। জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশের পর ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (আইসিএআর)-এর থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কৃষিমন্ত্রক। এরপরে সেই তথ্য আদালতে জমা দেয় কেন্দ্র। রিপোর্টে কেন্দ্র জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে ভূগর্ভস্থ জলে মিশে থাকা আর্সেনিকের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জাতীয় পরিবেশ আদালতে কেন্দ্র আরও জানিয়েছে, ধানের ওপরেও এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, ধানচাষের জন্য জলের প্রয়োজন বেশি হয়। এর প্রভাব অনেকটা বড় অঞ্চলে ছড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা কেন্দ্রের। কারণ, আর্সেনিক দূষণ যে অঞ্চলে বেশি, সেখানকার শস্য অন্যত্রও সরবরাহ হয়। সে ক্ষেত্রে যেখানে মাটিতে আর্সেনিক দূষণের প্রভাব নেই, সেই অঞ্চলের খাদ্যাভ্যাসেও এর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
আরো পড়ুন :- Big News :- এবার ট্রুডোর সরকার ফেলে দেওয়ার হুমকি খালিস্তানী নেতার !
কেন্দ্র আরও জানিয়েছে, সাধারণত ফসলের মধ্যে আর্সেনিক ছড়ায় প্রথমে শিকড়ে, তারপরে কাণ্ডে এবং শেষে পাতায়। সে ক্ষেত্রে যেগুলি ফসলের মূলের অংশ কিংবা পাতার অংশ খাওয়া হয়, সেগুলিতে আর্সেনিক দূষণের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা বেশি। যেমন যে কোনও ধরনের শাক, বিট, মুলো ইত্যাদির ওপর আর্সেনিক দূষণের প্রভাব বেশি পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে বলে মনে করছে কেন্দ্র। তুলনায় বেগুন, টমেটো (ফলের অংশ) বা শস্যের ওপর আর্সেনিকের প্রভাব কম পড়ে বলেই জাতীয় পরিবেশ আদালতে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী সিআর পাটিল রাজ্যসভায় জানিয়েছেন, দেশের ২৫টি রাজ্যের ২৩০টি জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু অঞ্চলে আর্সেনিক বেশি মাত্রায় রয়েছে। তালিকায় বাংলা, বিহার ছাড়াও রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, পঞ্জাব, হরিয়ানা, গুজরাট, অসম সহ আরও বেশ কিছু রাজ্য।
জলশক্তি মন্ত্রকের ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, এ রাজ্যের কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ, হুগলি, হাওড়া, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কয়েকটি জায়গায় মাটির নীচের জলে আর্সেনিক বেশি মাত্রায় (প্রতি লিটার ০.০১ মিলিগ্রামের বেশি) রয়েছে।