Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- নীলাকাশে চাঁদের বুড়ি চরকা কাটে। শৈশবে দাদু–ঠাকুমাদের কাছে চাঁদের বুড়ির চরকা কাটার গল্প হয়তো অনেকেই শুনেছেন। আর বিশ্ববাসীকে চরকা চিনিয়েছিলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অন্যতম রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল চরকা। গান্ধী নিজে প্রতিদিন নিয়ম করে চরকা কাটতেন। গ্রামবাংলার ঘরে ঘরেও চরকায় সুতো কাটার চল হয়। সেই সুতোয় তৈরি হতো হাতেবোনা তাঁতের কাপড়, যা ছিল স্বদেশিয়ানার প্রতীক। কিন্তু মিলের কাপড়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে ভোকাট্টা হয়ে যায় ঐতিহ্যের চরকা। সেটাকেই আবার নতুন ভাবে ফিরিয়ে আনতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
নবান্ন সূত্রের খবর, প্রায়-অবলুপ্ত চরকার পুনরুজ্জীবন ঘটাতে জেলায় জেলায় ক্লাস্টার গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ খাদি এবং গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ। তবে এই চরকার সঙ্গে আগের চরকার বিস্তর ফারাক রয়েছে। পর্ষদের এক কর্তার ব্যাখ্যা, আগে যে চরকা ব্যবহার করা হতো সেটা মূলত কাঠ দিয়ে তৈরি হতো। তাতে একটা করে গোল চাকা থাকত। সঙ্গে যুক্ত থাকত একটা হাতল। হাতল ধরে চাকাটাকে ঘোরাতে হতো। তৈরি হতো সুতো। ঘূর্ণনের মাধ্যমে সুতো তৈরি হতো বলেই নাম চরকা। তখন চরকা ছিল এক ধরনের হস্তচালিত যন্ত্র।
কিন্তু এ বার সোলার চরকা আসছে। এতে কাঠের যন্ত্রাংশ ব্যবহার হয় না। চরকাটা তৈরি হয় পাতলা স্টিল এবং লোহা দিয়ে। হাতের বদলে সৌরশক্তির সাহায্যে মোটরের মাধ্যমে চরকা ঘোরানো হয়। ফলে ব্যবহার খুব সুবিধাজনক। খুব পরিশ্রম হয় না। কাপড়ের মানও হয় অনেক উন্নত। সোলার চরকার উৎপাদন ক্ষমতাও অনেক বেশি। সরকারি কর্তারা মনে করছেন, সোলার চরকার ব্যবহার বাড়লে হস্তচালিত তাঁতে উৎপাদন বাড়বে। তাতে বাংলার তাঁতশিল্পীরা আর্থিক দিক থেকে উপকৃত হবেন।
সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যে সব তাঁতশিল্পী খাদি এবং মসলিন কাপড় বোনেন তাঁদের হাতে সোলার চরকা–সহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তুলে দেওয়া হবে। সোলার চরকার ব্যবহারে শিল্পীদের উৎসাহিত করতে ৮–১০ কিলোমিটারের মধ্যে একটা করে ক্লাস্টার তৈরি করা হবে। প্রতি ক্লাস্টারে অন্তত ২০০ তাঁতশিল্পীকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রত্যেক তাঁতশিল্পীকে সরকার থেকে দু’টি করে সোলার চরকা দেওয়া হবে। চরকা ফেরানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও সোলার চরকা নিয়ে অবশ্য আপত্তি রয়েছে গান্ধীবাদীদের।
মহাত্মা গান্ধী গ্রামোদ্যোগ সেবা সংস্থান ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা অরূপ রক্ষিত বলেন, ‘চরকার মূল বিষয় হলো কায়িক শ্রম। চরকা তৈরি হতো গ্রামেই। চরকা খারাপ হলে গ্রামের মানুষরাই (কার্টুনি বলা হতো) সারাই করতেন। সোলার চরকায় সুতোর উৎপাদন বাড়বে ঠিকই কিন্তু এতে অনেক বেশি টাকা ঢালতে হবে। বাজারে সোলার চরকার দাম প্রায় ৪০ হাজার টাকা। গরিব তাঁতশিল্পীদের পক্ষে সেই টাকা জোগাড় করা মুশকিল। ফলে ধীরে ধীরে তাঁতশিল্প চলে যাবে বড় ব্যবসায়ীদের হাতে।’
রাজ্যের এমএসএমই এবং টেক্সটাইল দপ্তরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার অবশ্য বক্তব্য, ‘বাংলার তাঁতশিল্পীরা যাতে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে পারেন, সে জন্যেই সোলার চরকা দেওয়া হচ্ছে। এতে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে। ফলে তাঁতশিল্পীরা লাভের মুখ দেখবেন। মুখ্যমন্ত্রী ঠিক সেটাই চাইছেন।’
আরও পড়ুন:– পুলিশ কনস্টেবলের সম্পত্তি 100 কোটি ! পুলিশি তদন্তে কি জানা গেলো ?
আরও পড়ুন:– বেকার ছেলেমেয়েদের প্রতিমাসে 5000 টাকা করে দিচ্ছে। কিভাবে আবেদন করবেন দেখে নিন