Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- তখন বয়স মাত্র ১২ বছর। সেই সময়েই ধরা পড়েছিল সদ্য কৈশরে পা রাখতে চলা মেয়েটির শরীরে থাবা গেড়েছে মারণ ক্যান্সার। রোগের নাম নন হজকিন্স লিম্ফোমা। তার পর থেকে হার না মানা লড়াই। দীর্ঘ চিকিৎসার মধ্যে থেকেও পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত চোখ ধাঁধানো সাফল্য। প্রথম চেষ্টাতেই NEET 2024 পাশ করলেন মধুরিমা বৈদ্য, মার্কশিটে ৮৭ পার্সেন্টাইল মার্কস। এখন ত্রিপুরার শান্তি নিকেতন মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস পড়ুয়া মধুরিমা।
লড়াই শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৯ বছর আগে। ২০১৬ সালে মধুরিমার ক্যান্সার ধরা পড়ে। ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন, মধুরিমার স্টেজ ফোর নন-হজকিন্স লিম্ফোমা হয়েছে। এটি অত্যন্ত বিরল এবং অত্যন্ত মারণ ক্যান্সার। এক লহমায় বদলে গিয়েছিল মধুরিমার ছোটবেলা। ১২ বছরের মধুরিমা তখন ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া। ইন্ডিয়া টুডেকে মধুরিমা বলেছেন, ‘কেমোথেরাপির হাই ডোজ় দেওয়া হচ্ছিল আমায়। তখন আমার চিন্তা হচ্ছিল পড়াশোনা নিয়ে। আমি পড়া ছাড়তে চাইনি। তাই আউটডোরে বসেও পড়াশোনা করতাম। ভর্তি হওয়ার পরেও পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছিলাম।’
আরো পড়ুন:– কলকাতার বসু বিজ্ঞান মন্দিরে অনন্য গবেষণা, বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলেন বাঙালি বিজ্ঞানীরা
অসু্স্থতার মাঝেও পড়াশোনা থামাননি তিনি। দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় ৯৬ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসা প্রক্রিয়া চলার মাঝেই ওই পরীক্ষা দিয়েছিলেন মধুরিমা। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষাতেও চমকে দেওয়ার মতো রেজ়াল্ট করেছিলেন মধুরিমা, তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৯১ শতাংশ। ইন্ডিয়া টুডেকে মধুরিমা বলেছেন, ‘আমার স্বপ্ন আমায় সবসময়ে উৎসাহ জুগিয়েছে। বাকি সব ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য আমি উদাহরণ তৈরি করতে চেয়েছিলাম।’
কিন্তু এই লড়াইটা সহজ ছিল না। ক্যান্সারকে হারানোর জন্য একের পর এক কঠিন চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে। কেমোথেরাপি হয়েছিল, রেডিয়েশন থেরাপি হয়েছিল, বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টও করানো হয়েছিল। আর এই চিকিৎসার চাপে ভীষণভাবে দুর্বল হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যমে মধুরিমা বলছেন, ‘ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠা ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করার মতোই কঠিন। আমার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ছিল। বারবার সর্দি-কাশি, ঠান্ডা লাগা এবং নানা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।’ তার পরেও স্থির লক্ষ্যে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আর এই লড়াইয়ে পাশে পেয়েছিলেন পরিবারকে। নিটের প্রস্তুতির জন্য একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন মধুরিমা। সেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অবদানের কথাও আলাদা করে বলেছেন মধুরিমা এবং তাঁর পরিবার। মধুরিমা বলেছেন তাঁর দিদির কথাও। তাঁর দিদি হৃতুরিমা বৈদ্য দিল্লির একটি মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্ন। তাঁর বোন ম্যারো নিয়েই চিকিৎসা হয়েছে মধুরিমার। তিনি বলছেন, ‘আমার দিদি আমার দ্বিতীয় মা। আমি যখন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছি। তখন ও নিটের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ও আমার সবচেয়ে ব়ড গাইড। ওই আমাকে সব সামলে পড়াশোনা করার রাস্তা দেখিয়েছে।’ যে ডাক্তারেরা মধুরিমার চিকিৎসা করেছেন, তাঁদের থেকেও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন বলেই জানিয়েছেন মধুরিমা।
ডাক্তারিতেও চোখ ধাঁধানো রেজাল্ট করতে চান মধুরিমা বৈদ্য। শুধু নিজের জন্য নয়, সব ক্যান্সার রোগীদের লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্যই লড়তে চান তিনি।
আরো পড়ুন:– ভারতীয় অর্থনীতি, ব্যবসা, শিল্পোদ্যোগের জন্য কেমন ছিল 2024 ? বিস্তারিত জানুন
আরো পড়ুন:– পৃথিবী গোলাকার নয়, প্রমাণ করতে গিয়ে ৩১ লক্ষ টাকা খোয়ালেন ইউটিউবার, কিভাবে ? জানুন