Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ভারতীয় রেলের যে পদের সঙ্গে আমজনতা নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছেন, সেই স্টেশন মাস্টার পোস্টে কি বদল আসতে চলেছে? রেল পর্ষদের কাছে তেমনই প্রস্তাব পাঠিয়েছে অল ইন্ডিয়া স্টেশন মাস্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেই প্রস্তাব ভারতীয় রেলের বিভিন্ন জোনে পাঠিয়ে মতামত জানতে চেয়েছে রেল বোর্ড। প্রস্তাব গৃহীত হলে ভারতীয় রেলের ১৭২ বছরের ইতিহাস থেকে মুছে যাবে স্টেশন মাস্টার পদটি।
বিভিন্ন পর্যায়ে দেশের স্টেশনগুলির আধুনিকীকরণের কাজে হাত দিয়েছে রেল। বহু স্টেশনই ভোল পাল্টে সেজে উঠছে শপিংমলের চেহারায়। তার সঙ্গে এ বার বদলে যেতে পারে স্টেশন মাস্টার বা স্টেশন সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদটি। মতামত জানতে চেয়ে রেল বোর্ড সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়েছে পূর্ব রেল সমেত বিভিন্ন জোনের প্রিন্সিপাল চিফ অপারেশন ম্যানেজারদের কাছে।
রেল পর্ষদের জয়েন্ট ডিরেক্টর তুষার সারস্বত ওই চিঠিতে জানিয়েছেন, অল ইন্ডিয়া স্টেশন মাস্টার্স অ্যাসোসিয়েশন ওই পদগুলির বদল চেয়েছে। অল ইন্ডিয়া স্টেশন মাস্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের আসানসোল ডিভিশনের সেক্রেটারি অনিমেষ কুমার জানিয়েছেন, প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশের ৩৮ হাজার স্টেশন মাস্টার, ডেপুটি স্টেশন মাস্টার পদে কর্মরতরা লাভবান হবেন।
আরও পড়ুন:– ‘আইআইটি বাবা’ থেকে ‘রাবড়ি বাবা’, মহাকুম্ভে হইচই ফেলে দিয়েছেন এই বিচিত্র সাধুরা
কিন্তু, স্টেশন মাস্টার বা স্টেশন সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদের নাম বদলে লাভ কী হবে? অনিমেষ কুমার বলেন, ‘নাম পরিবর্তনে একাধিক ক্ষেত্রে লাভ হবে। আমাদের দাবি মানা হলে বর্তমানে লেভেল এইট পর্যায়ে স্টেশন মাস্টার গেজেটেড পোস্ট পেয়ে স্টেশন ম্যানেজার হবেন। লেভেল নাইন অর্থাৎ হাওড়া, শিয়ালদহ, আসানসোলের মতো স্টেশনগুলিতে বর্তমানে অ্যাসিস্ট্যান্ট অপারেটিং ম্যানেজার পর্যায়ের কর্মীরা স্টেশন সুপারিন্টেন্ডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আমাদের দাবি, ওই পদে স্টেশন মাস্টার থেকে নিয়োগ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ওই পদটির নাম হবে স্টেশন ডিরেক্টর। এতে কর্মীদের সম্মান বাড়বে।’
তিনি জানান, সিদ্ধান্ত কার্যকরী হলে পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের ৩৫০০ কর্মীর সঙ্গে গোটা দেশে উপকৃত হবেন ৩৮ হাজার স্টেশন মাস্টার। যোগ করেন, ‘আমাদের এই দাবিপত্র পর্ষদ থেকে রেলের জোনগুলির কাছে এসেছে। আমাদের আশা, ওঁরা ইতিবাচক সমর্থনই জানাবেন।’
ভারতীয় রেলে অমৃত ভারত প্রকল্পে পাঁচশোরও বেশি রেল স্টেশনকে আধুনিক মানে গড়ে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে আসানসোল, জসিডি, সীতারামপুর, রানিগঞ্জের মতো স্টেশন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, যে হেতু রেল স্টেশনগুলিকে কর্পোরেট ধাঁচে ভাবা হচ্ছে, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রেলকর্মীদের পদগুলিরও ‘গালভরা’ নাম ব্যবহারের কথা ভাবা হচ্ছে।
স্টেশন মাস্টার পদটি ভারতীয় রেল থেকে উঠে গেলে তা কি রয়ে যাবে শুধুই সাহিত্যের পাতায়? এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক অনাথবন্ধু চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘বেশ কিছু শব্দ শুধু ঐতিহ্য নয় আমাদের পরম্পরায় জুড়ে রয়েছে। সাহিত্যেও বারবার উঠে এসেছে। তেমনই একটি শব্দ স্টেশন মাস্টার।’ সত্যজিৎ রায়ের পিসিমা পূর্ণলতা চক্রবর্তীর লেখা ‘ছেলেবেলার দিনগুলি’ বইয়ের উদারণ দিয়ে অনাথবন্ধু বলেন, ‘উনি লিখেছিলেন, বাড়ির পাশ দিয়ে রেলগাড়ি যেত। গার্ডকে টা টা করতেন, তাঁকে চা খেতেও আসতে বলতেন। যদি না আসেন তাহলে গার্ডের নামে স্টেশন মাস্টারের কাছে অভিযোগ করবেন বলে হুমকিও দিতেন। বাংলা সাহিত্যে এমন বহু গল্প, উপন্যাস, চলচ্চিত্রে স্টেশন মাস্টার শব্দটি পাওয়া যায়। শব্দটি উঠে গেলে এটা ইতিহাসের পাতায় চলে যাবে।’
আরও পড়ুন:– রাজ্যে খুব শীঘ্রই বসবে ৪ লক্ষ প্রিপেড স্মার্ট মিটার, আরও জানতে পড়ুন….
আরও পড়ুন:– পোস্ট অফিসে একাধিক শূন্যপদে চাকরি। সরাসরি অনলাইনে জমা করুন আবেদন। বিস্তারিত দেখে নিন