২০২৫-এ লগ্নিতে ঝুঁকি কোথায়, সুযোগ কোথায়, রইলো বিস্তারিত

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- আর লগ্নি! বছরের শুরু থেকে বাজার যে রকম ভাবে পড়ছে, তাতে পোর্টফোলিও খুললে কান্না পায়। ঠিকই। তবে খারাপ এর সঙ্গে ভালো দিকটাও দেখুন। কম টাকায় মাল্টিব্যাগার কিনে অ্যাভারেজ ভালো করার সুযোগ তো পাচ্ছেন। সুতরাং নেগেটিভ মনোভাব ঝেড়ে ফেলে ধাপে ধাপে চালিয়ে যান লগ্নি। ফল ফলবেই। কোথায় ঝুঁকি কম হবে?

শেয়ারবাজারে লগ্নি

২০২৫-এ বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে চলেছে আগের বছরগুলির তুলনায়। ২০২৪-এ টানা ৯ বছর লাভ দিয়ে বাজার বছর শেষ করলেও, চলতি বছরে বাজারে কিছুটা কনসোলিডেশন এবং রিক্যালিব্রেশন এর প্রবণতা বাড়তে পারে, যার শুরুটা গত অক্টোবর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে ইক্যুইটি-বন্ড এবং সোনায় পোর্টফোলিও ব্যালান্স আরও সাবধানতার সঙ্গে করতে হবে। মিড এবং স্মল ক্যাপের তুলনায় লার্জ ক্যাপ চলতি বছরের বাজি হতে পারে।

বাজার শিখর থেকে প্রায় ১১% নেমে থাকায় সুযোগ বুঝে ‘বাই-অন-ডিপস’ স্ট্র্যাটেজিতে ভালো স্ক্রিপস কেনার সুযোগ রয়েছে। মিউচুয়াল ফান্ডে মাল্টি-অ্যাসেট অ্যালোকেশান ফান্ড, ডাইন্যামিক অ্যাসেট অ্যালোকেশান ফান্ড এবং ডাইন্যামিক ইক্যুইটি স্কিমে লগ্নি ডাউনসাইড প্রোটেকশন দেবে। একটু ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছা থাকলে SIP’র মাধ্যমে স্ট্যাগার্ড ভাবে মিডক্যাপ ও স্মলক্যাপ ফান্ডে কিছু কিছু লগ্নি চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুন:– কোন ব্যাঙ্ক থেকে পার্সোনাল লোন নেওয়া সুবিধাজনক? প্রসেসিং চার্জ কার বেশি? রইল তালিকা

F&O-ক্রিপ্টো

ফিউচার এবং অপশন ট্রেডিং-এর আকর্ষণে ২১-২২ এবং ২৩-২৪ অর্থবর্ষে ১.১৩ কোটি লগ্নিকারী খুইয়েছেন ১.৮১ লক্ষ কোটি টাকা। যার মধ্যে ২৩-২৪ এই ক্ষতির পরিমাণ ৭৫,০০০ কোটি। ৯২.৮% ক্রেতাই গড়ে জনপ্রতি ২ লক্ষ টাকার বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। যার মধ্যে ৪৩ শতাংশের বয়সই ৩০-এর কম। এইসব অঙ্ক থেকেই পরিষ্কার অস্থির বাজারে আরও ঝুঁকি নিয়ে ফিউচার এবং অপশন ট্রেডিং-এ না নামাই ভালো। একই কথা খাটে ক্রিপ্টোয় লগ্নির জন্য। যতই মার্কিন মুলুক এবং অনেক দেশে এর বাড়বাড়ন্ত থাকুক না কেন, ভারতে এর গ্রহণযোগ্যতা বিচার করে অহেতুক লোভের পথে পা না বাড়ানোই ভালো। খুব ইচ্ছা হলে পোর্টফোলিওয় ফুলঝুড়ির মতো ৫% ক্রিপ্টো রাখতে পারেন নিজের দায়িত্বে। ‘লাভ’ হলে অকাল দিওয়ালি, আর উল্টোটা হলে শিক্ষা নিয়ে আর ওই পা না হাঁটা।

শর্ট টার্ম ফান্ড

২০২৪-এ ফেডারেল রিজ়ার্ভ এর রেট-কাট সম্পর্কিত একাধিক জল্পনা শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়নি। পাশাপাশি ২০২৫ সাল এবং ২০২৬ সালে তা যে ফেরারি ছেড়ে ছেকড়া গাড়ির গতিতে দৌড়তে তাল ঠুকছে, সেই বিষয়ে ইঙ্গিত খুবই স্পষ্ট। যে সম্ভাবনা থেকে ভারতীয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও গোটা ২৪ সালে সুদ কমানো শুরুর পথে হাঁটতে পারেনি। বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তায় ১০-ইয়ার গভর্নমেন্ট বন্ড ইল্ড বছরের শেষ ৩ মাসে ৬০ বেসিস পয়েন্ট নেমেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পোর্টফোলিওতে লো-ডিউরেশন বা শর্ট টার্ম ডেট ফান্ডে আপাতত বেশি জোর দিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। হাওয়া ঘুরলে স্ট্র্যাটেজি পাল্টে গিল্ট ফান্ড এবং লং-ডিউরেশন ফান্ডে যাওয়া সেক্ষেত্রে সহজ হবে।

ফার্মা সেক্টরে লাভ

চিকিৎসা ক্ষেত্রে ক্রম-বর্ধমান খরচ, সংশ্লিষ্ট সরকারি আইনকানুন এবং নতুন ইউএস শীর্ষ প্রশাসনের নয়া নীতি চালুর ফলে অদূর ভবিষ্যতে ফার্মা ক্ষেত্রে বাড়তি অক্সিজেন আসতে চলেছে, মত বিশেষজ্ঞদের। একই সঙ্গে তাঁদের মত, বাজারে যখন অনিশ্চয়তা অনেকটাই বেশি, তখন ডিফেন্সিভ সেক্টরগুলিতে ‘লগ্নি’ গ্যারাজ করে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ, বেশি লাভের পিছনে না ছুটে। ফার্মা এ ধরনেরই এক সেক্টর। এর সঙ্গেই রাখুন টাকার দরে পতন।

একাধিক ভারতীয় ফার্মা সংস্থা মার্কিন মুলুকে তাদের বিপুল রপ্তানির জেরে মোটা অঙ্ক কামাতে চলেছে। যে লাভের গুড় নিজের পকেটেও পুরতে, সরাসরি শেয়ার কেনার পথ তো খোলাই রয়েছে। স্টকে লগ্নির মতো অতটা ধক না নেওয়ার জোর কলজেতে থাকলে, ফার্মা সেক্টরে লগ্নি করে এমন ফার্মা ফান্ডেও লগ্নি করার প্রভূত সুযোগ রয়েছে বিনিয়োগকারীদের কাছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে ফার্মা ক্ষেত্রে লগ্নি করতে গেলে ডাইভার্সিফিকেশন বেশি হয়ে যায় প্রয়োজনের তুলনায়। তাই সরাসরি ফার্মা ফান্ডে লগ্নি কষ্টার্জিত অর্থকে হয়তো এভারেস্টে তুলবে না, কিন্তু মারিয়ানা ট্রেঞ্চেও যে নামিয়ে দেবে না, তা বলা যেতেই পারে। অন্তত পোর্টফোলিওর একটা অংশ রেখে দেখা যেতেই পারে।

আরও পড়ুন:– চিনকে চাপে ফেলে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সখ্য বাড়ানোর পথে ভারত! জানুন বিস্তারিত

ক্যাপিটাল গেনস

গত বার চলতি ২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য যে বাজেট পেশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, সেখানে লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেনস ১০% থেকে বাড়িয়ে ১২.৫% করা হলেও তাতে বার্ষিক করছাড়ের পরিমাণ ১ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১.২৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের দাবি, যেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে লগ্নিকারীদের প্রদেয় করের অঙ্ক অপ্টিমাইজ় করে নিয়ে তার থেকে লাভের গুড় চলতি বছর যতটা সম্ভব তুলে নেওয়া উচিত।

প্রতি বছরের লাভ স্ট্র্যাটেজিক্যালি তুলে না নিয়ে তা জমাতে থাকলে, একলপ্তে অনেক কর দেওয়ার পাশাপাশি পোর্টফোলিও ব্যালান্সও তাতে নষ্ট হয়। তার থেকে বিচার-বিবেচনা করে, ১.২৫ লক্ষ টাকা অবধি ট্যাক্স-ফ্রি ক্যাপিটাল গেনস তুলে নিয়ে তা ফের লগ্নির কাজে লাগালে এক ঢিলে দুই পাখি মারা সম্ভব। এতে করে পোর্টফোলিও’তে আউট-পারফর্মিং অ্যাসেট কমিয়ে ফেলার পাশাপাশি রিস্কও নামানো সম্ভব হয়। একই কথা খাটে লসের ক্ষেত্রেও। যা দিয়ে অন্য ক্ষেত্রে গেনস-এর পরিমাণ সেট-অফ করা সম্ভব।

সাইবার বিমা

প্রথম শুনলেন? না আগেই জানতেন? যাই হোক, ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান বলছে, সাইবার প্রতারণা আগের বছরের থেকে ৩০০% বেড়েছে, যার থেকে ক্ষতির পরিমাণ বছরের প্রথম ৯ মাসেই ১১,৩৩৩ কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে পুরো পরিবারের (পেরেন্টস+১ চাইল্ড) জন্য ১ কোটি টাকা পর্যন্ত সাইবার সুরক্ষা যদি ৫-৬ হাজার টাকায় কেনা যায়, তা দিয়ে দেওয়াই মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

মাথায় রাখুন, যতই অ্যান্টিভাইরাস-ফায়ারওয়াল এবং অন্য সুরক্ষার জালে থাকুন না কেন এত রকম প্রতারণার নিত্য-নতুন উপায় খুঁজে বের করছেন সাইবার দুষ্কৃতীরা, তার থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখাই এখন শক্ত কাজ। ফিশিং-ব্রুট ফোর্স অ্যাটাক-ম্যালওয়্যার-ডস/ডিডস অ্যাটাক, ম্যান ইন দ্য মিডল অ্যাটাক, এসকিউএল ইনজেকশন-স্পুফিং-ব়্যানসমওয়্যার এবং আরও দশ-পনেরো রকম নাম না জানা সম্ভাব্য সাইবার হানা, যার নামও শোনেননি, তার থাবায় পড়লে, অ্যাকাউন্টে জমাকৃত খুদকুঁড়ো উবে যেতে মোটেই সময় নেবে না।

যার ফাঁদে না পড়াটাই শক্ত বর্তমান কালে। স্টক ট্রেডিং ফ্রড-এর ২,২৮,০৯৪টি অভিযোগ জমা পড়েছে ২০২৪ সালে, যার থেকে ক্ষতির পরিমাণ ৪,৬৩৬ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে ইনভেস্টমেন্ট স্ক্যাম লস, যেখানে অভিযোগ দায়ের হয়েছে ১,০০,৩৬০টি এবং ক্ষতির পরিমাণ ৩,২১৬ কোটি টাকা। ইউপিআই লেনদেনে ক্ষতি হয়েছে ১,০৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে যদি আপনার রাজার ধন পরের কথা, টুনির ধনও থাকে এবং না থাকে, তাতেও নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সাইবার বিমা নিয়ে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। সারা জীবনের জমাকৃত রাশির জন্য এটুকু করা যেতেই পারে।

সোনা-রুপোয় লগ্নি

বাজার এখন রোলার কোস্টার রাইডে। এই হাজার-দেড় হাজার পয়েন্ট নামছে তো পরের দু’দিনে তা ভরপাই হয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর মঙ্গলবার পর্যন্ত চলতি বছরে সেনসেক্স নেমেছে প্রায় ৪%, নিফটি৫০ সূচক প্রায় ৩%। গত ৭ মাসে সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে তা। বাজারের অনিশ্চয়তায় আর একটা জিনিসও হয়েছে। ডলার-ইনডেক্স ০.৬% নেমে যাওয়ায় স্পট গোল্ড প্রাইস উঠে গিয়েছে ২,৭১৯ ডলার প্রতি আউন্সে, যে স্তরে তা উঠেছিল গত বছর নভেম্বরে।

আগামী দিনে সোনার দর বেড়ে গত অক্টোবরের সর্বকালীন শিখর ২,৭৯০ ডলার প্রতি আউন্সে যে ছাড়িয়ে চলে যাবে না, সে বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। বরং একাধিক বিশেষজ্ঞ সংস্থার মত, এই টালমাটাল অনিশ্চয়তায় ৪-৫ মাসের মধ্যে সোনার দর ৩,০০০ ডলার প্রতি আউন্সে উঠে যাবে। যার অবশ্যম্ভাবী প্রভাব দেখা যাবে ভারতেও।

এমনিতেই সোনা সেফ-হেভেন অ্যাসেট হিসেবেই পরিচিত। ফলে ওঠাপড়ার বাজারে অল্পস্বল্প করে ইয়েলো ও হোয়াইট মেটালে লগ্নি দীর্ঘমেয়াদে ‘ভালো’ ফল দিতে পারে বলেই পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। শেয়ার-মিউচুয়াল ফান্ডের সঙ্গেই পোর্টফোলিওয় ৫-১০% সোনা রাখা তার ব্যালেন্স বাড়িয়ে দেবে বলেই মত তাঁদের। এখন পকেট বুঝে এবং পোর্টফোলিওর গঠন বুঝে কতটা কী করবেন, সেটা আপনার বিবেচ্য।

(বাংলা নিউস দুনিয়া কোথাও বিনিয়োগের জন্য পরামর্শ দেয় না। শেয়ার বাজার বা যে কোনও ক্ষেত্রে লগ্নি ও বিনিয়োগ ঝুঁকিসাপেক্ষ। তার আগে ঠিকমতো পড়াশোনা এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ বাঞ্ছনীয়। এই খবরটি শিক্ষা সংক্রান্ত এবং সচেতন করার জন্য প্রকাশিত।)

আরও পড়ুন:– আধার কার্ড দেখিয়ে 10,000 টাকার লোন নিতে পারবেন। কী কী শর্ত রয়েছে? কিভাবে আবেদন করবেন জানুন

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন