৩৬৫ দিনে ২১৯! দুর্যোগে বিপর্যস্ত গোটা দুনিয়া, নেপথ্যে হাত মানুষেরই? জানতে পড়ুন বিস্তারিত

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ‘ভূমিকম্প, ঝঞ্ঝাবৎ, জলোচ্ছ্বাস— কিছুই বুঝতে পারছি না!’ ‘সোনার কেল্লা’–য় জটায়ুর মুখের এই কথাটা সকলের মনে থাকবে। তবে সেটা বহু বছর আগের কথা। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন যে, রুপোলি পর্দা ছাড়িয়ে বাস্তবেও প্রায় এমন পরিস্থিতিই তৈরি হয়েছে।

আজ, সবে নতুন বছরে পা দিয়েছে বিশ্ব। তার আগে বছরভর নানা ধরনের যে সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ গোটা বিশ্বে প্রভাব ফেলেছে, তার একটা খতিয়ান তৈরি করেছেন পরিবেশ ও আবহবিজ্ঞানীরা। ‘ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন’ এবং ‘ক্লাইমেট সেন্ট্রাল’–এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি সেই রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪–এ মানব সভ্যতা প্রভাবিত হয়েছে ২১৯টি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগে।

এর মধ্যে ২৬টির জন্যই জলবায়ুর পরিবর্তনকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। জলবায়ুগত বদল এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের পিছনে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের প্রবণতা ও তার জেরে তৈরি হওয়া দূষণকেই বেশি করে দায়ী করছেন আবহবিদরা। দুর্যোগগুলির মধ্যে যেমন রয়েছে ঘূর্ণিঝড়, তেমনই আছে প্রবল বৃষ্টি, বন্যা, অনাবৃষ্টি, খরা থেকে শৈত্যপ্রবাহ। ’২৪–এ এ সবের জেরে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৩,৭০০ মানুষ। আরও লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া।

আরও পড়ুন:– মধ্যবিত্তের টাকা জমানোর গোপন সূত্র। বিশেষজ্ঞের এই নিয়ম মেনে 1 মাস সংসার চালান, আর ম্যাজিক দেখুন

এমনিতে ২০২৪ যে মানব সভ্যতার ইতিহাসে উষ্ণতম বছর হতে চলেছে, সে আশঙ্কা আগেই প্রকাশ করেছেন আবহবিদরা। বছর শেষের চূড়ান্ত রিপোর্টে সে বিষয়টা স্পষ্ট হবে। কিন্তু তার আগেই যে ভাবে উষ্ণায়নের জেরে প্রাণহানি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় গোটা বিশ্বে ঘটে চলেছে, তাতে খুবই উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা।

রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে ৭৯টি তাপপ্রবাহ, ৮টি শৈত্যপ্রবাহ, ৫৪টি বন্যা, ৪৮টি ঝড়, ১১টি খরা ও ১৯টি দাবানল। ভৌগোলিক দিক থেকে বিপর্যয়ের ঘনঘটা সবচেয়ে বেশি আমেরিকা এবং এশিয়ায়। আমেরিকায় সংখ্যাটা ৬৮, এশিয়ায় ৬৩। এ ছাড়া আফ্রিকায় ২৬, ইউরোপে ২৮, ওশিয়ানিয়ায় ১৬ এবং আন্তঃমহাদেশীয় এলাকায় ১৮টি ঘটনা ঘটেছে।

রিপোর্টে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলির উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি ভারতের। সেটা হলো, জুলাইয়ে কেরালায় প্রবল বর্ষণ, বন্যা, ভূমিধস— যেখানে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছিল তিনশোর গণ্ডি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ছিল বিশাল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রমাণ হিসেবে তাঁরা তুলে ধরছেন ২০১৮–র বন্যাকে। কেরালায় সে বার মৃত্যু হয়েছিল কমপক্ষে ৪৮৫ জনের। তা ছাড়া, ২০১৫ থেকে ২০২২–এর মধ্যে এ দেশে কেরালাতেই সবচেয়ে বেশি ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। এ সবের নেপথ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি পরিবেশ–ধ্বংসের প্রসঙ্গও তুলে ধরছেন গবেষকরা।

আরও পড়ুন:– ক্যানসারের চিকিৎসায় বাঙালি বিজ্ঞানীদের যুগান্তকারী আবিষ্কার, জানুন বিস্তারিত

একই সঙ্গে এশিয়ায় নেপাল থেকে ইউরোপে স্পেন, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এ বছরের একাধিক বিধ্বংসী বন্যার প্রসঙ্গও রয়েছে রিপোর্টে। আছে আমেরিকায় হ্যারিকেনের তাণ্ডব, অ্যামাজ়নের খরা পরিস্থিতির কথাও। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, হ্যারিকেন হেলেন–এর দাপটে এ বছর ইউএসএ–র ছ’টি স্টেটে ২৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ৫০ বছরের মধ্যে ভয়ঙ্করতম। আফ্রিকায় সুদান, নাইজিরিয়া, ক্যামেরুন, চাদ–সহ বিভিন্ন দেশে বন্যায় মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে দু’হাজার মানুষের। গড় স্বাভাবিক তাপমাত্রা আরও ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে ২০৪০–’৫০ সালের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা নিয়মিত দেখা যাবে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।

এই সূত্রেই বিপর্যয়ের নেপথ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এবং তার জেরে উষ্ণায়নকে সার্বিক ভাবে দায়ী করছেন এক্সপার্টরা। এমনিতে গোটা বিশ্বেই এ বার অন্যান্য বছরের তুলনায় অতিরিক্ত অন্তত ৪১ দিন বিপজ্জনক তাপপ্রবাহ দেখা গিয়েছে। এর জন্যও মানুষের কাজকর্মই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। আসন্ন বছরে পৃথিবী জুড়েই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতের মৌসম ভবনের প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির পিছনে মানুষের ভূমিকার প্রসঙ্গ টানছেন। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘প্রতিটি দেশই সম্ভবত এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। তবে মানুষের কাজকর্মের জন্য, বিশেষত জীবাশ্ম জ্বালানির মাত্রাছাড়া ব্যবহারের জেরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাতের মানচিত্র বদলে যাওয়া, ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃতি পরিবর্তন — এ সব বাড়ছে। এই প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা না–গেলে আগামী দিনে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হার আরও বাড়বে।’

‘সোনার কেল্লা’র জটায়ু হয়তো ঘটনা–পরম্পরা বুঝে উঠতে পারছিলেন না। আর আমরা যদি বুঝেও না বুঝি, তা হলে ২০২৫ যে ’২৪–এর থেকেও ভয়ঙ্কর হবে না — সে গ্যারান্টি কে দিতে পারে?

আরও পড়ুন:– এখনই কিনবেন না এই সব স্মার্টফোন, দিন কয়েক পরেই কমতে পারে দাম

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন