
DA Case West Bengal: পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মামলা এক নতুন মোড় নিয়েছে। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে একটি যে লিখিত আবেদন (সাবমিশন) জমা দেওয়া হয়েছে, তা প্রকাশ হয়েছে। যা এই দীর্ঘ লড়াইয়ে কর্মীদের জয়ের সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। এই নতুন আবেদনে এমন কিছু যুক্তি ও তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, যা রাজ্য সরকারের অবস্থানকে দুর্বল করে দিতে পারে।
লিখিত আবেদনে কী আছে?
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের এই লিখিত আবেদনে মূলত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে:
- আইনি অধিকার: আবেদনটিতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মীদের একটি আইনি অধিকার, সরকারের দয়া বা অনুদান নয়। অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (AICPI) অনুযায়ী, মূল্যবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ডিএ প্রদান করতে সরকার আইনত বাধ্য।
- রোপা রুলস (ROPA Rules): পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিজস্ব রোপা রুলস, ২০০৯ (ROPA Rules, 2009) অনুযায়ী, AICPI-এর ভিত্তিতেই ডিএ নির্ধারিত হওয়ার কথা। রাজ্য সরকার নিজেই সেই নিয়ম লঙ্ঘন করছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
- আর্থিক অক্ষমতার যুক্তি খণ্ডন: রাজ্য সরকার বারেবারে আর্থিক অক্ষমতার কারণ দেখিয়ে ডিএ মেটানো থেকে বিরত থেকেছে। কিন্তু এই আবেদনে তথ্য দিয়ে দেখানো হয়েছে যে, এটি একটি ভিত্তিহীন যুক্তি। অন্যান্য অনেক রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক অবস্থা ভালো এবং তাদের ডিএ প্রদানের হারও অনেক বেশি।
- অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে তুলনা: কেরালা, মেঘালয়, সিকিম-এর মতো রাজ্যগুলির উদাহরণ দিয়ে দেখানো হয়েছে যে, তারা নিয়মিতভাবে এবং কেন্দ্রীয় হারের কাছাকাছি ডিএ প্রদান করে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তাদের পে-কমিশন পশ্চিমবঙ্গের থেকেও উন্নত।
- বৈষম্যের অভিযোগ: আবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে যে, রাজ্য সরকার deliberatley কর্মীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করছে। দিল্লির বঙ্গভবন বা চেন্নাইয়ের ইউথ হোস্টেলে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গের কর্মীরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পেলেও, রাজ্যের অভ্যন্তরে কর্মরত কর্মীরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারার পরিপন্থী।
মামলার প্রেক্ষাপট
উল্লেখ্য, রাজ্য সরকারি কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। কলকাতা হাইকোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চে রাজ্য সরকার এই মামলায় ছয়বারেরও বেশি পরাজিত হয়েছে। হাইকোর্ট ডিএ-কে কর্মীদের আইনি অধিকার হিসেবেই স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায়। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের এই নতুন আবেদন সেই মামলারই একটি অংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নতুন আবেদনটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং এতে যে সমস্ত আইনি ও তথ্যভিত্তিক যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে, তা সুপ্রিম কোর্টে কর্মীদের পক্ষেই রায় আনতে পারে। এখন সকলের নজর সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের দিকে।
Follow Us