Dearness Allowance: ২০২৫ সালের শেষ দিনে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ (DA) নিয়ে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলো। ৩১শে ডিসেম্বর, ডিএ মামলার আইনি লড়াইয়ের মাঝেই একটি বিশেষ আরটিআই (RTI) বা তথ্যের অধিকার আইনের আবেদন জমা পড়েছে, যা আগামী দিনে রাজ্য সরকারের অস্বস্তি বাড়াতে পারে। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলা বিচারাধীন এবং রায় ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে। ঠিক এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, নিউ দিল্লিতে অবস্থিত ‘বঙ্গভবন’-এ কর্মরত রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে এই আরটিআই করা হয়েছে।
এই পদক্ষেপটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর মাধ্যমে কী কী তথ্য সামনে আসতে পারে, তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
আরটিআই-এর মাধ্যমে কী কী তথ্য চাওয়া হয়েছে?
স্টেট পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার, পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (PWD) এবং খাদ্য ভবনের কাছে এই আরটিআই-এর মাধ্যমে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন রাখা হয়েছে। মূলত বঙ্গভবনে কর্মরত কর্মচারীদের বেতনের কাঠামো এবং ভাতার হার নিয়েই এই প্রশ্নগুলি করা হয়েছে:
- ভাতার বর্তমান হার: ১লা জুলাই ২০২৫ তারিখ অনুযায়ী, নিউ দিল্লির বঙ্গভবনে কর্মরত রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা ঠিক কত শতাংশ হারে ডিএ (DA), এইচআরএ (HRA) এবং ট্রান্সফার অ্যালাউন্স (TA) পাচ্ছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান চাওয়া হয়েছে।
- কেন্দ্রীয় হারের সঙ্গে তুলনা: ২২/০১/২০২০ তারিখের সরকারি অর্ডার এবং রোপা (ROPA) ২০১৯ অনুযায়ী, বঙ্গভবনের কর্মচারীদের কি কেন্দ্রীয় সরকারি হারে ডিএ এবং অন্যান্য ভাতা দেওয়া হচ্ছে? এই বিষয়টি স্পষ্ট করার দাবি জানানো হয়েছে।
- অফিসিয়াল নথিপত্র তলব: ২২/০১/২০২০ তারিখে যে অর্ডারটি ইস্যু করা হয়েছিল, তার নেপথ্যে থাকা সমস্ত অফিশিয়াল নোটশিট বা নথিপত্রের প্রমাণীকৃত কপি (Authenticated Copy) চাওয়া হয়েছে।
- বিভাগীয় কথোপকথন: এই বিশেষ অর্ডারটি পাশ করানোর জন্য পিডব্লিউডি (PWD) এবং অর্থ দপ্তরের (Finance Department) মধ্যে যে অফিশিয়াল যোগাযোগ বা করেসপন্ডেন্স হয়েছিল, তার কপিও চাওয়া হয়েছে।
- ১৭% ডিএ প্রসঙ্গ: রোপা ২০১৯-এর নিয়ম মেনে ০১/০১/২০২০ থেকে বঙ্গভবনের কর্মচারীরা ১৭% ডিএ পাচ্ছেন কিনা, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
- কিস্তির বিস্তারিত তথ্য: ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বঙ্গভবনের কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় সরকারের ধাঁচে ডিএ-র প্রতিটি কিস্তি পেয়েছেন কিনা, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য দাবি করা হয়েছে।
কেন এই তথ্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ?
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই আরটিআই আবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য নয়, বরং আইনি লড়াইয়ের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে। এর গুরুত্ব অপরিসীম:
- বৈষম্যের প্রমাণ: যদি দেখা যায় যে একই রাজ্য সরকারের অধীনে থেকেও বঙ্গভবনের কর্মীরা কেন্দ্রীয় হারে বা বর্ধিত হারে ডিএ পাচ্ছেন, অথচ রাজ্যের সাধারণ কর্মচারীরা তা পাচ্ছেন না, তবে এটি স্পষ্ট বৈষম্যের প্রমাণ হিসেবে আদালতে পেশ করা যাবে।
- সুপ্রিম কোর্টের মামলায় প্রভাব: সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর যদি রাজ্য সরকার কোনো রিভিউ বা মডিফিকেশন পিটিশন দাখিল করে, তবে এই তথ্যগুলি কর্মচারীদের পক্ষে জোরালো যুক্তি হিসেবে কাজ করবে।
- জীবন ও স্বাধীনতার প্রশ্ন: যেহেতু বিষয়টি বেতন এবং জীবনধারণের মানের সঙ্গে যুক্ত, তাই আরটিআই আইন ২০০৫-এর ৭(১) ধারা অনুযায়ী একে ‘জীবন ও স্বাধীনতা’ (Life and Liberty) সম্পর্কিত বিষয় হিসেবে গণ্য করে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তথ্য প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছে।
আবেদনকারী এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এই গুরুত্বপূর্ণ আরটিআই আবেদনটি করেছেন দেবপ্রসাদ হালদার। তিনি ডিপার্টমেন্ট অফ কারেকশনাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সেকশন অফিসার এবং ইউনিটি ফোরামের একজন সক্রিয় কর্মকর্তা।
২০২৫ সাল শেষ হয়ে ২০২৬ শুরু হতে চললেও ডিএ মামলার জাজমেন্ট এখনও আসেনি। ৫ই বা ৬ই জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে শুনানির একটি সম্ভাবনা রয়েছে। তার ঠিক আগেই এই আরটিআই রিপোর্টটি ভবিষ্যতের জন্য এবং কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল বা ‘গেম চেঞ্জার’ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।












