Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- বিপদের কথা আগেই জানা গিয়েছিল। এখন জানা গেল সেই বিপদ একলা নয়, সঙ্গে নিয়ে আসে মৃত্যুও। বিখ্যাত বিজ্ঞান পত্রিকা ‘দ্য ল্যানসেট’–এর একটি আর্টিকেল জানাচ্ছে, বাতাসে ভাসমান অতি সুক্ষ্ম ধূলিকণা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে অনেকটাই।
যে সমীক্ষার প্রেক্ষিতে এই আর্টিকেল, সেখানে দেখা গিয়েছে, শুধুমাত্র হৃদরোগের কারণে সারা বিশ্বে ১.৭ কোটি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। তার ১৯ শতাংশের কারণ হলো বায়ুদূষণ। ভারতেও বায়ুদূষণের কারণে হৃদরোগে মৃত্যুর হার ১৯ শতাংশই। যে মারণকণার জন্য নেমে আসছে এই অকাল মৃত্যু, তার নাম পিএম ২.৫। ল্যানসেটের ওই রিপোর্টে জানাচ্ছে, এই ধূলিকণা ফুসফুস–হৃদযন্ত্রের পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়ছে মস্তিষ্কেও। অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যু না হলেও, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার কারণ হচ্ছে বাতাসের মারাত্মক এই দূষণ। সোমবার ছিল ‘বিশ্ব দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস’। পরিবেশ কর্মীদের দাবি, প্রশাসনের পাশাপাশি দূষণ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা নিক আমজনতাও। কারণ, পয়লা নম্বরে না হলেও বিপদের তালিকায় এই শহর এখন বিশ্বের মধ্যে তৃতীয়। প্রথম দুইয়ে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর এবং ভারতের রাজধানী দিল্লি।
বিভিন্ন গ্যাসের পাশাপাশি বাতাসে দূষণে অন্যতম দায়ী হলো কিছু ভাসমান কণা। এই দূষণ কণাগুলিকে বলা হয় পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম। মূলত যে দু’টি কণাকে বায়ুদূষণে সব থেকে বেশি দায়ী করা হয়, সেগুলি হলো পিএম ১০ এবং পিএম ২.৫। এই কণাগুলি মাপের একক হলো মাইক্রোমিটার। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দৈনিক প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম ১০ ও পিএম ২.৫-এর পরিমাণ যথাক্রমে ১০০ ও ৬০ মাইক্রোগ্রাম অতিক্রম করলে তা জনস্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত হয়। ল্যানসেট যে গবেষণা চালিয়েছে, তাতে দিল্লি–কলকাতার পাশাপাশি বেছে নেওয়া হয়েছিল আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদ, মুম্বই, পুণে, সিমলা এবং বারাণসী শহরকেও। তার মধ্যে দূষণের চেহারা সব থেকে ভয়ঙ্কর দিল্লিতে। তার পরেই রয়েছে কলকাতা। বাতাসের মান ‘খুব খারাপ’ আহমেদাবাদ, বারাণসীরও।
গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, অতিসূক্ষ্ম বলেই পিএম ২.৫ নিঃশ্বাসের সঙ্গে আমাদের ফুসফুসে প্রবেশ করে। এতদিন দেখা গিয়েছিল তা রক্তে মিশে যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে তা হৃদযন্ত্র এবং মস্তিষ্কেও ছড়িয়ে পড়ে। ‘পার্টিকুলেট ম্যাটার’ বা ভাসমান ধূলিকণার মধ্যে কার্বন ও অন্যান্য দূষিত পদার্থ মিশে থাকে। শীতে বড় শহরগুলিতে বাতাসের গুণগত মানের অনেকটাই অবনতি হয়। শরীরে প্রবেশের পরে এই ধূলিকণা কী করে? গবেষকেরা বলছেন, শ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকে এই কণাগুলি সরাসরি হৃদযন্ত্রের পেশি ও হৃদপিণ্ডের রক্তনালিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বেড়ে যায়। সেটাই হৃদরোগের আশঙ্কা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
গবেষকেরা বলছেন, বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার মাত্রা বাড়লে শরীরে গ্যালেক্টিন প্রোটিনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। যার ফলে হৃদযন্ত্র তার নমনীয়তা হারায়, কখনও কখনও গভীর ক্ষতও তৈরি করে। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘মায়োকার্ডিয়াল ফাইব্রোসিস’। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বায়ুদূষণ ‘কার্ডিয়াক অ্যারিদ্মিয়া’-র আশঙ্কাও বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে হৃদস্পন্দনকে অনিয়মিত করে হৃদরোগের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মানুষের হৃদযন্ত্র মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার পাম্প করে অক্সিজেনযুক্ত বিশুদ্ধ রক্ত শরীরের কোষে কোষে পৌঁছে দেয়। এই পাম্প করার ক্ষমতাকে চালনা করার জন্য হার্টের নিজস্ব পেসমেকার থাকে, যাকে বলে সাইনাস নোড। এর কাজ হলো হৃদস্পন্দন তৈরি করা। বায়ুদূষণ এই সাইনাস নোডেরও ক্ষতি করে। হৃদরোগের বাড়বাড়ন্ত ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে এটি একটি বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এ সবের ক্ষেত্রে এই দূষণকণাগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ল্যানসেট মূল গবেষণাটি চালিয়েছিল কোভিড শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত। কোভিড পরবর্তী কালে দ্বিতীয় দফার গবেষণায় তথ্যগুলি খতিয়ে দেখা হয়। সম্প্রতি বিশ্লেষণ–সহ সেই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:– কবে আসবে আপনার মৃত্যু? বলে দিচ্ছে এআই-চালিত ‘ডেথ ক্লক’। কিভাবে? জানলে অবাক হবেন
আরো পড়ুন:– সস্তা স্যামসাঙ স্মার্টফোন পাওয়া যাচ্ছে মাত্র 6499 টাকার বিনিময়ে, পাওয়া যাবে 50MP Camera এবং 5000mAh Battery