Bangla News Dunia , Pallab : হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ও বায়োকেমিক ঔষধ কি আলাদা ?
জিনিসটা সহজভাবে বুঝিয়ে দেওয়া যাক—-
১) সুশলার নামক জার্মান হোমিওপ্যাথের জন্ম হয় ১৮২১ সালে, তিনি হোমিওপ্যাথি প্রাকটিসই করতেন।
কিন্তু ১৮৭০ সালে তিনি তার একটি নিজস্ব চিন্তাধারা প্রকাশ করেন যে হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মধ্যে যে সব ইনঅর্গানিক মিনারেল সল্টস আছে শুধু সেইগুলিই দিয়েই সে চিকিৎসা করবে, অর্থাৎ করা যাবে ।
হোমিওপ্যাথি ঔষধের মধ্যে থেকে তাই তিনি প্রথমে ১১ টা, পরে ১ টা বাড়িয়ে মোট ১২ টা মানব শরীরে বিদ্যমান থাকে এমন সল্ট জাতীয় ঔষধ সিলেকশন করে শুধু সেগুলি দিয়েই চিকিৎসা হবে,
আর এই সব ঔষধ দিয়ে সব রোগের চিকিৎসা করা যাবে বলে নাম দিলেন–
বায়োকেমিক সিস্টেম অব মেডিসিন, বা বায়োকেমিক মোড অব ট্রিটমেন্ট,
২) বায়োকেমিক ঔষধ বলে আসলে কিছু হয় না —
ঔষধ গুলি সবই হোমিওপ্যাথিক ঔষধ,
কারন — বায়োকেমিক নামে যে ১২ টি ঔষধ ব্যবহার হয়, তা সবকটিই হোমিওপ্যাথিক ঔষধ
১৮৭০ সালে সুশলার হোমিওপ্যাথি মেটিরিয়া মেডিকা ঔষধ সাম্রাজ্যের মধ্য থেকে ১২ টি ঔষধকে তার নিজস্ব মতে চিকিৎসার জন্য ভাবেন, যার নাম দেন — বায়োকেমিক মোড অব ট্রিটমেন্ট, যেমন এখন কারা যেন ১২ টি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নিয়ে চিকিৎসা করার ফর্মুলা দিচ্ছেন– গরু ব্যাক থিওরী কি সব নাম দিয়ে,
আরো পড়ুন:- রোজভ্যালির টাকা দেওয়া শুরু, আপনার অ্যাকাউন্টে ঢুকল? এভাবে সহজে আবেদন করলেই মিলবে টাকা
যেমন– নেট্রাম মিউর ও সাইলিসিয়া, হ্যানিমান নিজে প্রুভিং করে ১৮২৮ সালে তার ক্রনিক ডিজিজ বইয়ে দিয়েছেন,
ক্যালকেরিয়া ফস এ্যালেনটাউন এ্যাকাডেমীতে হেরিং ১৮৩৩ সালে পরীক্ষা করে হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকাতে সংযুক্তি করেন ,
ক্যালকেরিয়া সালফ ১৮৪৭ সালে,
নেট্রাম সালফ ১৮৬৬ সালে হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকায় ঢুকানো হয়েছে ,
৩) সুশলার এই ১২ টি ঔষধকে হোমিওপ্যাথিক ট্রাইটুরেশন পদ্ধতিতে শক্তীকৃত করে ব্যবহারের পক্ষে ছিলেন, সুতরাং হ্যানিমানের হোমিওপ্যাথিক ঔষধ তৈরী প্রক্রিয়ার বিপক্ষেও তিনি ছিলেন না, কারন— ট্রাইটুরেশন পদ্ধতিতে ঔষধ শক্তীকৃত করা হ্যানিমানেরই বলা বা আবিষ্কার,
তবে পোটেনটাইজেসনে হ্যানিমানের সাথে সুশলারের পার্থক্য শুধু —-
হোমিওপ্যাথিতে 3x বা 6x ট্রাইটুরেশনের পরে আর ট্রাইটুরেশন পদ্ধতিতে ঔষধকে শক্তীকৃত করা হয় না, তারপরেই মিশ্রনটি এ্যালকোহলে কনভার্ট করে ঝাঁকি সিস্টেমে ঔষধ গুলিকে পরবর্তীতে শক্তীকৃত করা হয়,
কিন্তু সুশলার তা করতে চাননি, তিনি সর্বদা ট্রাইটুরেশন পদ্ধতিতেই থাকতে চেয়েছেন,
তাই 3x, 6x, 12x, 30x, ইত্যাদি,
৪) তাই ——
CF, CP, CS,
KM, KP, KS,
NM, NP, NS,
FP, MP, SIL,
3x, 6x, 12x , 30x , 200 x,
সবই ট্রাইটুরেশন পদ্ধতিতে শক্তীকৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ।
এবং রোগীর সিমপটমস মিলিয়ে একবারে মাত্র একটি ঔষধ দিলে তা নিঃসন্দেহে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ বলেই গণ্য হবে।
তাই যদিও হ্যানিমান 6x র পরে কোন ঔষধকে আর ট্রাইটুরেশান পদ্ধতিতে শক্তীকৃত করতে চাননি, কিন্তু তার আবিষ্কৃত ট্রাইটুরেশন পদ্ধতিতে ঔষধ শক্তীকৃত করা ভুল বলা যেতে পারে না,
৫) নেট্রাম মিউর, সাইলিসিয়া, বা এই ১২ টি ঔষধের যে কোন একটি ঔষধ কেউ 3x, 6x, 12x, ইত্যাদি পোটেনসিতে সিমপটমস সিমিলারিটি ও মায়াজমেটিক ডিসক্রেসিয়া মেনে এককভাবে একটি ঔষধ রোগীতে প্রয়োগ করলে —–
বলা যেতে পারে সেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ঔষধটি নিম্ন শক্তিতে প্রয়োগ করেছেন,
কিন্তু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দেন নি, বা নেট্রাম মিউর 12x হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নয়, বা নেট্রাম মিউর 12x দেওয়া মানে হোমিও নীতি লঙ্ঘন করে চিকিৎসা করা হচ্ছে, তা মোটেই বলা যাবে না, বা এটা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নয়— এটা বায়োকেমিক মোড অব চিকিৎসা, তাও বলা যাবে না।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা হছে না, বায়োকেমিক মোডে বা পদ্ধতিতে চিকিৎসা হচ্ছে তখনই বলা যাবে, যখন—
১) একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সুশলারের বায়োকেমিক মোড অব ট্রিটমেন্ট পদ্ধতি অনুযায়ী এই ১২ টি ঔষধের বাইরে কখনও অন্য ঔষধ প্রেসক্রিপশন করবেন না।
২) সুশলারের নির্দেশ মতন একসাথে দুইটি বা তিনটি বা চারটি ঔষধ মিশিয়ে বা অল্টারনেটলী প্রেসক্রাইব করেন।
★★ অবশ্য এক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন আসতে পারে—
হ্যানিমান তো নেট্রাম মিউর বা সাইলিসিয়া 6x, বা 12 x এ প্রুভিং করেন নি—–
হ্যানিমান কোন ঔষধই তো ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতিতে তৈরী করে প্রুভিং করেন নি।
ব্যাপারটি নিয়ে অনেকের মনে ধোঁয়াশা ছিলে, অর্থাৎ সম্যক ধারনা ছিলো না, তাই ক্লিয়ার করলাম।
তাই, আজকাল যে সব অমল, শ্যামলরা মেটিরিয়া মেডিকার মধ্য থেকে মাত্র ১২ টি ঔষধ নিয়ে চিকিৎসার একটা নতুন থিওরী দিয়েছেন, তাদের বলা যেতে পারে—দ্বিতীয় সুশলার! #End